Skip to main content

ইনস্যুরেন্স

-   আপনিই সুখময় সাঁতরা ?
-   হ্যাঁ।
-   বয়স বত্রিশ। চোদ্দ নম্বর মদন মিত্র লেন। কলকাতা সতেরো। থুতনিতে কাটা দাগ।
-   এই যে। এইখানে। কাটা দাগটা।
-   ক্লেম ফর্মের কপি সঙ্গে এনেছেন?
-   এই যে।
-   ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে যে কনফার্মেশন গেসলো?
-   এই যে।
-   ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টের কপি?
-   এই যে।
-   আপনার ক্লেম নাম্বারটা আরেকবার বলুন।
-   টু সেভেন থ্রি নাইন জিরো জিরো জিরো ফাইভ বাই সি বাই ডাব্লু ড্যাশ টু।
-   টু সেভেন থ্রি নাইন ট্রিপেল জিরো ফাইভ...বেশ...বেশ...আপনি তো মশাই ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কে পথে বসাবেন। এ ফিনান্সিয়াল ইয়ারে এ নিয়ে আপনার চার নম্বর ক্লেম। দু’ তিন মাসের মধ্যে। চারটেই অ্যাপ্রুভ্‌ড।
-   জেনুইন ক্ষতিপূরণের কেস সব স্যার।
-   বটে। দেখি ডিটেল গুলো।প্রথম ক্লেইম অগস্টে। প্রেম-বিচ্ছেদ; থার্ড লেভেলের। এটা মেজর। অগস্টেই দ্বিতীয় ক্লেইম। অফিসে বসের লাগামহীন খিস্তির খপ্পর। সেমি-মেজর। অক্টোবরে ক্লেম করলেন পুজোর প্রতিটা দিন রেস্টুরেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে হন্যে হয়ে পুজো মেজাজ নষ্ট। মাইনর কিন্তু কগনিজেব্‌ল। বেশ। মেনে নেওয়া গেল। তবে এই চতুর্থ কেসটাতেই একটা সুপার মেজর কম্পেনসেশন বাগালেন।
-   কেসটাও তো সাঙ্ঘাতিক স্যার।
-   হুম। তবে এ কেসে অ্যাপ্লিকেশনের তুলনায় কনভার্সন কম। ভুল ভোট দেওয়ার জন্যে ফ্রাস্ট্রেশন। এর জন্যে ক্ষতিপূরণ আদায় কি চাট্টিখানি কথা?
-   ফ্রাস্ট্রেশন আসবে না স্যার? সরকারে আসার আগে বললে পাবলিকের বুট লিক করবে, এখন উলটে কাছা তুলে পাছা দেখিয়ে ভ্যাঙ্গাচ্ছে!
-   প্লিজ! মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ।
-   কই। কড়া কিছু বলে ফেললাম নাকি? আনপার্লামেন্টারি কিছু?
-   আরে মশাই আমার কান কী সুলভ না পার্লামেন্ট? যা বলবেন তাই চলবে?
-   সরি। সরি। তা ইয়ে কম্পেনসেশনটা...
-   ভালোই বাগিয়েছেন মশাই। দু’টো কবিতার বই। একটা তারাপদ রায়ের মাতাল সমগ্র...
-   মাতাল সমগ্র? রিয়েলি? কত ক্লেম এলো গেলো এই মালটা এতদিন অধরা ছিল...
-   শুনে যান। কবিতার বই, মাতাল সমগ্র ছাড়া রয়েছে দেড় কিলো পাটালি। একটা স্যুইস চকলেটের খণ্ড। দিঘা যাওয়ার টু অ্যান্ড ফ্রো টিকিট; উইদিন ব্র্যাকেট্‌স-থাকা-খাওয়ায় আপনার নিজের।
-   চলবে। আরও আছে কী?
-   আছে বই কি। ভুল ভোট দেওয়ার ফ্রাসট্রেশন। চাপ কম নয় তো।
-   বটেই তো।
-   দাস কেবিনে সাতখানা ফ্রি মোগলাই পরোটার কুপন। দশটা কুপন তিরিশ পারসেন্ট ডিসকাউন্ট কবিরাজির জন্যে। ব্যাস। দ্যাট্‌স অল।
-   দুরন্ত। এতদিনে একটা জব্বর ক্লেম আদায় করা গেল ইনস্যুরেন্স থেকে।
-   হ্যাঁ। চৌষট্টির সহজিয়া-বীমা বিল বিধানসভায় পাস হওয়ার পর থেকে অন্তত মানুষ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে কিছু দৈনিক সহজ সুরাহা আদায় করে নিতে পারছে।
-   তা যা বলেছেন। বাবা-কাকাদের আমলে তো যেমন ব্যাপার ছিল তাতে নিজে মারা না গেলে বা ঘরে আগুন না লাগলে ইনস্যুরেন্সের কোন কাজ ছিল না। আরে মশাই, পুজোর মরশুমে কাশ ফুল দেখতে না পাওয়ার ক্ষতিপূরণই যদি আদায় না করা গেল, তবে আর ইনস্যুরেন্সের দরকার কী জীবনে?
-   সে জন্যেই তো আমাদের স্নেহময় বীমা কর্পোরেশন সাঁতরাবাবু। যাক গে। আপনার ক্ষতিপূরণের সমস্ত মাল এই প্যাকেটে রয়েছে। আমার ব্যাপারটা মনে আছে আশা করি?
-   তিনটে মোগলাই কুপন তো? নিশ্চয়ই।
-   আপনি আবার এটাকে কোরাপশন ভাবছেন না তো সাঁতরাবাবু?
-   কী বলছেন স্যার। কোরাপশন আর ট্র্যাডিশনের মাঝখান দিয়ে যে ফাইন লাইনটা চলে গিয়েছে,সেটাকে আমার বিলক্ষণ চেনা আছে। ও নিয়ে আপনি কিছু ভাববেন না। 

Comments

Aditi said…
দারুণ...
আপনার ব্লগ পড়ি, খুব ভাল লাগে...কিন্তু কমেন্ট বক্সে কিছু লেখা হয়না। আসলে ভাললাগাটা বা নিজের অজান্তেই মুখ হাসি হাসি হয়ে যাওয়াটাকে বাক্সবন্দী করা যায়না তো...
ভাল থাকুন, ছড়াতে থাকুন...শুভেচ্ছা...
Amitabha Gupta said…
Fatafati ! Ektana pore fellam. Darun lekhar haat aapnar moshai... chaliye jaan!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু