Skip to main content

মাদুলি

-   আসুন আসুন অমলবাবু। বসুন।
-   নমস্কার স্পীকার সাহেব। ইয়ে, হাউস কিছুক্ষণের মধ্যেই তো...
-   শুরু হতে চলেছে। ইয়েস।
-   না মানে। নিতাইদা বললেন আপনি আমায় ডেকেছেন। তাই আর কী...
-   নতুন এমএলএ’দের বিধানসভায় হাতেখড়ির আগে স্পীকারের সঙ্গে একান্তে দেখা করাটা আড়াইশো বছরের ট্র্যাডিশন অমলবাবু।
-   আড়াইশো?
-   ইয়েস স্যার। সেই দু’হাজার বিরাশি সাল থেকে।
-   না মানে আমি জানতাম না কি না।
-   আপনি জানতেন না, কারণ আপনাকে জানানো হয়নি। কারণ এটা একটা গোপন ট্র্যাডিশন। দলমত নির্বিশেষে, কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গের এম-এল-এ’রাই এ রীতির খবর রাখেন।
-   কিন্তু এ মোলাকাতে এমন কি ব্যাপার আছে স্পীকার সাহেব...
-   আছে অমলবাবু আছে। তার আগে, এটায় ছুঁয়ে প্রথম প্রতিজ্ঞা করুন, যে এখানে আপনার হাতে যা দেওয়া হবে, তার ব্যাপারে যেন আপনি ও আপনার সহধর্মিণী ছাড়া আর একটিও মানুষ টের না পায়।   
-   এটা ছুঁয়ে...এটা কী স্পীকার সাহেব?
-   ধর্মগ্রন্থ।লাল কাপড়ে মোড়া...
-   ওহ! আনন্দবাজার?
-   আধুনিক বাংলায় আর ক’টা ধর্মগ্রন্থ আছে অমলবাবু? নিন, চটপট প্রতিজ্ঞা করুন।
-   যদি না করি?
-   আপনার এম-এল-এ পদটি ক্যানসেল। এটা বাধ্যতামূলক। শপথ গ্রহণের মত জরুরী।
-   বেশ...প্রতিজ্ঞা করছি যে...
-   উঁহু...ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে...
-   এই ছুঁয়ে বলছি...আমার হাতে এখন যা দেওয়া হবে, সেটা আমি ও আমার সহধর্মিণী ছাড়া আর একটি মানুষও টের পাবে না। ইয়ে, কী পাব স্পীকার সাহেব?
-   তার আগে আর একটা প্রতিজ্ঞা অমলবাবু। প্রতিজ্ঞা করুন, যে আপনি যা পাবেন, আপনার বিধায়কপদের মেয়াদ শেষ হলে আপনি সে জিনিস স্পীকারের কাছে ফেরত দিয়ে যাবেন।
-   বেশ। প্রতিজ্ঞা করলাম যে...
-   উঁহু, ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে...
-   বেশ। বেশ। বিধায়ক-পদের মেয়াদ শেষ হলে সে বস্তু আমি ফেরত দেব স্পীকারকে।
-   গুড। এই নিন। এই হল সেই বস্তু ।
-   মা...মাদুলি?
-   হ্যাঁ অমলবাবু। মাদুলি।
-   মাদুলি নিয়ে কী করবো?
-   কেন? পরবেন। হাতে বা মাজায়।
-   কিন্তু কেন পরবো স্পীকার সায়েব? এতে আমার লাভ কী?
-   আরে মশাই, শুনুন। এম-এল-এ হয়েছেন। ঝক্কি কী কিছু কম? কত বিপদ আপনার সামনে...
-   বিপদ?
-   নেই? পুলিশ। সিবিআই।মিডিয়া। অমুক ইনভেস্টিগেশন। তমুক এনকোয়ারি। এই স্টীং। ওই ব্রেকিং। পাবলিকের হয়ে জান প্রাণ লড়িয়ে দিতে হবে আপনাকে, কী সাঙ্ঘাতিক দায়িত্ব। এদিকে আপনার দ্বারা উপকৃত কারুর সামান্য স্নিগ্ধ কৃতজ্ঞতা-বোধ যদি আপনার অজান্তে আপনার পকেটে এসে টোকা মারে, তাহলেই আপনি বনে যাবেন অসুর। ঝক্কি কম?
-   এই মাদুলি পরলে বুঝি...
-   ভগবান ছাড়া আপনার আর কাউকে ভয় পেতে হবে না...
-   বলেন কী?
-   রিয়েলি। গত আড়াইশো বছরের ইতিহাস তাই বলছে অমলবাবু। এ মাদুলির ক্ষমতা অভাবনীয়। সিবিআই , পুলিশ, কোর্ট-কাছারি, কেউ আপনার টিকিটি ছুঁতে পারবে না।
-   কিন্তু...কিন্তু...কী এমন আছে এ মাদুলির মধ্যে? কী আছে?
-   ফুলের পাপড়ি।
-   ফুলের পাপড়ি?
-   যে সে ফুলের পাপড়ি নয়। প্রায় তিনশো কুড়ি বছরের পুরনো ফুলের পাপড়ি।
-   তিন...তিন...
-   তিনশো কুড়ি বছরের পুরনো।
-   বলেন কী। কিন্তু কোথা থেকে এলো?
-   আজ থেকে তিনশো কুড়ি বছর আগে, ঈশ্বর কে যখন অবিশ্বাসী পাতকরা বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছিলে, তখন ঈশ্বরের মাথায় আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি শুরু হয়। সেই থেকেই এ বাংলায় আধুনিক ধর্মের প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু, সেটা তো আপনার অজানা নয় অমলবাবু। পুষ্পবৃষ্টি হয়ে ঈশ্বরের মস্তক স্পর্শ করে ঝড়ে পড়া কিছু ফুলের পাপড়ি কয়েক ভক্ত কুড়িয়ে পেয়ে সযত্নে রেখে দেন। সে সব পাপড়ির আশীর্বাদী স্পর্শে সে সব ভক্তরা বিধায়ক-পদলাভ করেন ও অচিরেই সে ফুলের পাপড়ির অভাবনীয় গুণাবলী প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে তাঁদের কাছে। মরণের পূর্বে সেই ভক্তবৃন্দ বিধায়ক জগতের বৃহত্তর স্বার্থে সেই ফুলের পাপড়িগুলো উৎসর্গ করে যান। সেই ফুলের পাপড়ি দিয়ে মাদুলি করেই দু’হাজার বিরাশি সাল থেকে, পার্টি লাইন নির্বিশেষে, পশ্চিমবাংলার সব বিধায়ক এ মাদুলি গোপনে নিজের কাছে রেখে; সমস্ত পশ্চাতে-বাঁশ-মূলক বিপদের থেকে দূরে থেকেছেন।   
-   ঈশ্বরের স্পর্শ মাখা ফুলের পাপড়ির মাদুলি স্পীকার সাহেব? স্বয়ং মদন...
-   অমলবাবু... ঈশ্বর আপনার ইয়ার-দোস্ত নন, যে অমন মাই ডিয়ার সুরে তাঁর নাম ধরে ডাকবেন। শুধু ঈশ্বর বলে ডাকবেন তাকে। তেমনটাই রীতি।
-   আমি আপ্লুত স্যার। আমি আপ্লুত।
-   মাদুলি-গ্রহণ করুন অমলবাবু।  

   


Comments

Anonymous said…
অসাধারণ! একেবারে হুল ফোটানো যাকে বলে।
malabika said…
দারুণ লেখা। কিন্তু আমাদের চামড়া যে কি মোটা! ভয় হয় তোমার কলম ভোঁতা হয়ে যাবে না তো?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু