Skip to main content

খুচরো তফাৎ

কলেজ স্ট্রীটে ঘুর-ঘুর করছি সস্তায় পুরনো বই সটকাবার তালে। জুন মাসের বিকেল কিন্তু সদ্য বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় চনমনে হাওয়া বইছে। মেজাজ শরিফ। জলের দরে খান দুই গপ্পের বই ব্যাগস্থ করে ফেলেছি। ভাবলাম বই ঘাঁটাঘাঁটি আলতো থামিয়ে রেখে একটু চা-টা খেয়ে নেওয়া যাক। মেডিক্যাল কলেজের উল্টো দিকে; ফুটপাথের একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে বললাম- 

-“ এক কাপ চা আর একটা ডিম-টোস্ট”। 
আমার পাশে এক মাঝবয়স্ক ভদ্রলোক বসেছিলেন। আমার দিকে চেয়ে ভারি অমায়িক হাসলেন। হাসি ফেরত দিলাম।
ভদ্রলোক ভুরু নাচিয়ে বললেন “ ভায়া, এই যে আপনি ডিম-টোস্ট চাইলেন, আর দোকানি-ব্যাটা ঘাড় নেড়ে বললে ‘দিচ্ছি’, আপনি কিন্তু ঠকে গেলেন”
-“ মানে ?” ঘাবড়ে গেলাম।
-“ মানে  আপনি চাইলেন ডিম-টোস্ট, আপনাকে ও দেবে ডিম-রুটি
-“ তো ? তফাৎটা কি  তাতে ?”
- “ সে কি! তফাৎ নেই ?  ভ্যানিস আর হাপিশ কি এক ? কলকাতা আর ক্যালক্যাটা কি এক ? ইসবগুল আর জেলুসিল এক ?”
-“ না মানে বুঝলাম না ঠিক। ডিম-টোস্ট আর ডিম-রুটি এক নয় ?”
-“ আরে ভায়া ডিম-টোস্টে থাকবে চৌকো তুলতুলে পাউরুটি। আলতো আঁচে রিফাইন্‌ড অয়েলে ভাজা। মখমলে টেক্সচার। সখের পায়রা। টোটাল বুর্জোয়া মেটেরিয়াল। বোন-চায়নার প্লেটে সাজিয়ে; ইকনমিক টাইম্‌স পড়তে পড়তে খাওয়ার চিজ
।  
আর এইখানে আপনি পাবেন ডিম-রুটি। লম্বাটে পাউরুটি, পেছন-মোটা, খড়খড়ে। সেই মালকে সসপ্যানের মধ্যে ফেলে ডিমে-সর্ষের তেলে ভেজে নেওয়া; তারপর তা তোবড়ানো  ষ্টীলের প্লেটে রেখে, বিট-নুন ছড়িয়ে হাভাতের মত মুখে চালান করা। আদর্শ প্রলিটারিয়াট খানা।
এই দুই ব্যাপার কি এক ? যদি বলেন একই ব্যাপার; তবে তো বলতে হয় যে পাটালি আর ঝোলাগুড়ে কোনও ফারাক নেই, ইলিশ আর তেলাপিয়া ভাই-ভাই।”
-“ ইয়ে, তাহলে আমি ওই ডিম-রুটিই চাই, ডিম-টোস্ট বলা আমার ঘাট হয়েছে”
-“ অফ কোর্স ঘাট হয়েছে। আরে বাবা খিচুরি-এঁটো মুখে চিলেকোঠার চুমু আর হোয়াইট-ওয়াইনের গেলাস হাতে ফ্রেঞ্চ কিস কি এক বাত ? ম্যাকডোনাল্ডস’য়ের  ফ্রাইজ আর ঝুরো-আলু ভাজায় ফারাক নেই ?”
-“আমি সরি দাদা। এবার থামুন প্লিজ”
- “মুখে প্লিজ-মনে খিস্তি নয় তো ? সরি না দুঃখিত ?”

ডিম-টোস্ট; থুড়ি...ডিম-রুটি’র মায়া ত্যাগ করে বেঞ্চি ছেড়ে সরে পড়লাম।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু