“বোল্টুদার বাড়িতে ডাকাত পড়েছে”। হুড়ুম হল্লা। ব্যাপারটা অত সস্তা নয়। বোল্টুদা আমার প্রতিবেশী এবং পাড়ার রক-স্টার মাস্তান।তোলা আদায় করতে, মড়া
পোড়াতে, চোয়াল ভাঙ্গতে, চাঁদা তুলতে, রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে, রক্তদান শিবির আয়োজন করতে; বোল্টুদার কোনও জুড়ি নেই। লোকাল এম-এল-এ’য়ের ডান হাত।
এক দিন নিজেই কাউন্সিলর
হবে। এমন লোকের বাড়িতে ডাকাত?
বেরিয়ে এসে দেখি, ডাকাত নয়; পাড়ার বিজুকাকু দমাদম লাথি কষাচ্ছেন
বোল্টুদার বাড়ির দরজায় আর উদোম চিত্কার করে চলেছেন। বিজুকাকু রাগে-উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপচ্ছেন, বোঝা যাচ্ছে অফিস ফেরতা সোজা চলে এসেছেন বোল্টুদার
বাড়িতে। গায়ের হাফ-শার্ট ঘামে চপচপ, চুল উস্ক-খুস্ক আর একটানা গলা ফাটিয়ে চলেছেন
: “বেরিয়ে আয় শালা বল্টে, আজ তোরই একদিন কী আমার, একটা এস্পার-ওস্পার না করে আমি হটছি না। কাম আউট শালা স্কাউন্ড্রেল”
বিজুকাকুর কাছে গিয়ে কী ঘটেছে জানতে চাওয়াতে কেস স্পষ্ট হলো ;
“এই শালা বল্টে, একটা ইউজলেস রাস্কেল কোথাকার, এমন একটা দলের
হয়ে লেজ নাড়ে যে যাদের মুরোদ নেই ডাল-ভাতের আর ঢেকুর তোলে বিরিয়ানির। শালা, কতদিন পরে
একটা বন্ধ ডাকলো। আমি ভাবলাম আপিস কেচে যাবে। রাস্তা-ঘাট শুনসান থাকবে।কাল সন্ধ্যে বেলা খাসি
নিয়ে এলাম কষিয়ে বন্ধের দুপুরে আমেজ করবো। আর এই আহাম্মকদের জন্যে সব গেলো রসাতলে। আপিস শালা যথারীতি খোলা, বাঙালির ইজ্জত যে ধুলোয় লুটিল আজ। সেই ফাইলের নোংরা ঘাটা, সেই বসের চিত্কার, উল্টে যাতায়াতে বাসের বাড়তি ভীড়ে
নাকাল। বন্ধের আশা জাগিয়ে এমন বিট্রে? শালারা দু-চারটে বাস জ্বালাতে পারলো
না? দু একটা আপিস ভাঙ্গচুর করতে পারলো না? ন্যাকা-কুসুমের দল এসেছে রাজনীতি করতে? বন্ধ করতে পারে
না, সরকার গড়বে। আমার মুণ্ডু করবে। আমি বল্টে আর বল্টের দলের বিরুদ্ধে কনজিউমার কোর্টে
মামলা করবো এই কোয়ালিটি-লেস বন্ধ ডাকবার জন্যে। এই বল্টে শুয়ার আসুক এবার চাঁদা চাইতে, ওর হাড় দিয়ে আমি থিম প্যান্ডেল বানিয়ে ছাড়বো। সাধারণ মানুষকে অফিস-কামাইয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে ধোকা? কাম আউট বল্টে, তোর নেতাগিরি ন্যাতা না করে আজ আমি ছাড়বো না”
সত্যি-মিথ্যা জানি না, তবে ফিসফাস শুনলাম যে বিজুদা’র এমন রন-মূর্তি দেখে বোল্টুদা নাকি পিছনের দরজা দিয়ে ভেগে হাপিস
হয়ে গেছে। পুজোর আগে আর পাড়া-মুখো হচ্ছে না হয়তো।
Comments