Skip to main content

নব্য বং প্রেম

রাত পৌনে এগারোটা বাজতেই বেবুলদা বৌদিকে ঘরে টেনে নিয়ে দরজায় খিল

-“একটা সারপ্রাইজ আছে সোনা”

বৌদি তো অবাক, “এই রাত্রে আবার কিসের সারপ্রাইজ ?”

বেবুলদা মিউ মিউ করে কইলে, “ একটা, মস্ত ব্যাপার বয়ে এনেছি”

-   “কী গো? লিলুয়া থেকে মেজপিসি বড়ি পাঠিয়েছে নাকি গো?”, বৌদি উত্‍সুক।

-   “দ্যুত, একটা রোমান্টিক ইয়ে তৈরি করছি, আর কোথা থেকে নিয়ে এলে লিলুয়া আর বড়ি”

-   “ঈ:, চল্লিশ বছর বয়সে নাগর হয়ে এলেন রোম্যান্স করতে, কবে থেকে বলছি রান্না ঘরে একটা নতুন চিমনী বসাতে,সে বেলা কোন খেয়াল নেই। আর আমার এদিকে তেলে-ঝুলে একাকার কান্ড”

-   “উফ্ফ, হবে হবে। লেট আস ফোকাস ওন দ্য নাইট সোনা”

-   “হটাত্‍ এত সোনা সোনা বাই কেনো? ওদিকে মানতাশা গড়িয়ে দেওয়ার বেলায় অমন নেকু-কান্না কাঁদাই বা কেনো?”

-   “ওরে বাবা, আহা শুনবে তো কী এনেছি...”

-   “কী জলদি বলো, আমার বাজে সময় নেই। মালতীর মাকে কাল আবার ভোর আসতে বলেছি”

-   “না মানে, তার আগে বলো, তোমার কী মনে হয় না যে আজকাল আমরা ইয়ে ব্যাপারটা একটু ইয়ে, কম ইয়েতে করছি?”

-   “ইয়ে?”

-   মানে, ইয়ে ফিজিক্যাল ব্যাপারটা....একটু গেজে যাচ্ছে না...”

-   “বয়স গাছ বেয়ে উঠছে, এখনো আবার অমন কচি ন্যাকামো কেনো?”

-   “আরে বয়স তো মনে, ইয়েতে আবার বয়েস কিসে?আসলে আমাদের ইয়ে টা ভারী এক ঘেয়ে হয়ে যাচ্ছিল, বুঝলে ডিয়ারএকটু বৈচিত্র আনতে হবেআরে বাবা সব বলই যদি গুড লেন্থ পড়ে তবে কী আর বোলারএর কোনও মান থাকে? দুটো শর্ট বল, একটা ইয়র্কার, একটা নিচু ফুলটস থাকবে; তবে না বোলার হ্যাডলি-সম

-   “তুমি যে কী বলো আমি ছাই কিছু বুঝি না, কী এনছো সেটা বলো”

-   “বলবো হানি, তবে তার আগে বলি; আজ তোমায় হাম আদর করেগাকিন্তু অন্য স্টাইলে”

-   “ফচকেমো হচ্ছে? যা করার তাড়াতাড়ি করো, বললাম না মালতীর মা কাল ভোরে আসবে? ম্যালা কাজ”

-   “দুত্তর মালতীর মাআজ এমন একটা ব্যাপার করব না, তোমার ইচ্ছে করবে যে তুমি আদর খেতে খেতে জাষ্ট ভেসে যাও...”

-   “কী এনেছো বলবে না কী কাল টিফিনে মুলো-সেদ্ধ আর রুটি দেবো?”

-   আহহ, রুকোএই দ্যাখো; চকলেট সিরাপ এনেছি”

-   “এ দিয়ে তো হট চকলেট বানায় শুনেছি”

-   “ঠিক, আর আজ এটা দিয়ে আমরা ইয়ে-ইয়ে করবো, আই মিন; হট-ইয়ে; মানে হট-লাভ করবো”

-   “এটা দিয়ে মানে?”

-   “মানে বিদেশী ছবিতে বুঝলে, নায়করা এই  চকলেট সিরাপ নায়িকার শরীরে জুড়ে ছড়িয়ে দেয়, তারপর তা আদর করে চেটে নেয়...”

-   “ইইউ, ম্যাগো, ছি:”

-   “ছি না সোনা, ছি না, সে ভারী প্রেম-ময়; আর ইয়ে; উত্তেজক। একবার প্লিজ...”

-   “মরে গেলেও না, ইসসস...”

-   “পুজোয় পুরী নিয়ে যাবো”

-   “না বললুম তো”

-   “জামদানী”

-   “না গো, এ তো খাওয়ার জিনিষ, ভারী চ্যাটচ্যাটে”

-   “মানতাসা

-   “তুমি বড় জ্বালাও...”

-   “হীরের নাক ছাবি”

-   “হীরের কানের দুল”

-   “রাজি”

-   “জলদি করো, কাল আবার মালতীর মা ভোর ভোর চলে আসবে...”

-   “ছিপি খুলি তাহলে এই সিরাপের বোতলের?”

-   “এই, খাটে নয়; সিরাপ ছড়িয়ে গড়াগড়ি হয়ে চাদর-তোষক নষ্ট হয়ে যাবে...”

-   তবে? ইয়ে, মেঝেতে মাদুর পেতে নেবো?”

-   “না না, মাদুর চটচট করবে”

-   “তবে মাদুর ছাড়া? ডাইরেক্ট মেঝেতে ?”

-   “না না, মেঝে তে পিপড়ে আসবে যে....”

-   “ যা: শালা, তবে.....তবে মেঝেতে যদি কাগজ পেতে নি?”

-   “মা সরস্বতীর ওপর? ছি:, মরণ হয় না গো!”

-   “হাউ ইজ নিউজ-প্রিন্ট সরস্বতী? ধুর! আচ্ছা, চেয়ারে; ড্রয়িংগ রুমে?”

-   “বা: রে, এই সেদিন নতুন পালিশ করলাম চেয়ার গুলো, আজ আবার ওতে সিরাপ লেগে একাকার হোক আর কী....”

-   “কী চিজ মাইরি তুমি, আচ্ছা বেশ, চলো বাথরুমে চলো”

-   “ওয়াক থু:, অমন নোংরা জাগায় গিয়ে? ছি:, ছি:, ওয়াক থু:”

বৌদিকে একটা কাল্পনিক ড্রিবল করে, বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো বেবুলদা। আহত সিংহের মত জানালে:

 “ নিকুচি করেছে চকলেট সিরাপ সহ ইয়ের, তোমার জন্যে ওই লিলুয়া আর বড়িই ভালো; এই রইলো চকলেট সিরাপের বোতল; কাল খোকাকে কমপ্ল্যানে মিশিয়ে খাইয়ে দিও। আমি তিব্বত চললাম

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু