কলকাতা বইমেলা। বাঙালি দুর্গাপুজো করে ফুর্তির জন্যে, বই মেলা ঘোরে আধ্যাত্মিক মালিশের জন্যে। অনিচ্ছুক ভিডিও-গেমবাজ বাচ্চাদের ঘাড় ধরে পিতারা বই চড়ান, প্রেমিক-প্রেমিকারা ছাতা-হীন প্রেম সারেন, মেয়েরা বই দ্যাখে-ছেলেরা মেয়ে, উদ্যোগী মানুষে বই চুরি করেন, কবিরা তীর্থ করেন, গিটার-শখিয়েরা থেবড়ে বসে গান করেন, হুল্লাট ব্যাপার এক্কেবারে।
এ ব্লগের পক্ষ থেকে বই মেলায় কী করণীয়, কী নয়, তার ওপর একটা মৃদু রিসার্চ করে ফেলা হয়েছে। জনদরদী উদ্দেশ্যে তা সাজিয়ে দেওয়া হলো:
বইমেলায় কি করবেন?
- বই মেলার ম্যাপ জোগাড়। কাঁধে ওয়াটার-বটল ঝুলিয়ে, চোখে গগল্স চাপিয়ে, পিঠে রুক-স্যাক চাপিয়ে লিভিঙ্গস্টোনের মত বলবেন, “ এই আমি আছি ১৩২ নম্বর স্টলের সামনে, নাক বরাবর হেঁটে গিয়ে, ১৯২ নম্বর থেকে বাঁ দিকে টার্ণ, অত:পর কয়েক পা এগিয়ে মিলবে ফোয়ারা এবং ফ্রম দেয়ার ঈশান কোনের দিকে মুভমেন্ট করতে করতে ৬ খানা স্টল ছাড়ালেই পাওয়া যাবে ডেষ্টিনেশন, স্টল ৩১৭”, তবেই না তৃপ্তি। যদি কেউ ফোড়ন কাটে “আরে ওই তো দ্যাখা যাচ্ছে স্টল ৩১৭”, দমে যাবেন না, বইমেলায় এসে ম্যাপ ছাড়া ঘোরা নেহাত গবেটামি
।
- ক্যারি ইউর ওন থলি। নিজের সাধন নিজে রাখুন, এ সবে ইকলজিকাল ফেরেব্বাজির যুগ। চা খেয়ে মেলাময় প্লাস্টিকের কাপের কার্পেট সাজিয়ে দেওয়াতে বাঁধা নেই, এদিকে বই কেনার পর প্লাস্টিকের প্যাকেট চাইতে গেলেই আপনি দানব। অতএব, নিজের ঝোলা সঙ্গে রাখুন, বই নেওয়ার সুবিধে, প্লাস একটা ইণ্টেলেকচুয়াল ইয়ে আছে ওতে।
- আঁতেল কিছু বই’এর নাম মুখস্থ রাখুন। ধরুন আপনি কিনতে গ্যাছেন বাঁটুল আর ফেলুদা, এদিকে হটাত্ এক টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার ফোকাস আপনার ওপর, বাঙালি হয়ে যদি আপনি ফস করে দু-চারটে সাংঘাতিক কবিতার বইয়ের নামই না করতে পারেন, তো আপনার ইজ্জত থাকবে না বাঙালির অভিমান রক্ষা হবে ?
- ছোটো স্টলে ঢুকুন। আরে বড় নাম, বড় পাবলিসার তো আপনার রইলই। তার জন্যে কলেজ স্ট্রিটও নয়, খাটে বসে ফ্লিপকার্টে’য়ে লগ ইন করলেই হলো। নতুনদের চিনুন, দুর্দান্ত কিছু নতুন কাজ এবং সম্ভবত কিছু অনাবিল মানুষ দেখতে পারবেন। গ্যারেণ্টী রইল।
- বেগুনী-মুড়ি: দুটো হালকা বই কিনে, এক ঠোঙ্গা মুড়ি-বেগুনী হাতে করে একলা বসুন মাঠের কোনও এক কোণে। বিকেল বেলার দিকটায়। “ দেবে কাজ, মহারাজ”
বইমেলায় কি করবেন না ?
- নামজাদা স্টলগুলোর ভীড়ের খপ্পরে পড়বেন না। আনন্দ-দে’জ, এরা রনে-বনে-জঙ্গলে সর্বত্র এবং অন্যত্র হইত এদের বইতে ছাড়’ও অনেক বেশি থাকে (যথা কলেজ স্ট্রিট)।তাহলে এদের দরজার সামনের রেশনের ভীড়ে ভাপতে যাবেন কেন? ফাঁক পেলে অবশ্যই টুকি দেওয়া যেতে পারে।
- আঁতেল সঙ্গ বর্জন করুন যথা-সাধ্য, নয়তো গোটা মেলাভ্রমণ দেরিদা-গিন্সবার্গ শুনে হেজে যেতে হতে পারে। বইমেলার সময় হলো আঁতেল-প্রজাতির ভাদ্র মাস, সাবধান!
- বই চুরি। মজারু, শখের জন্যে; সে আপনি যাই বলুন না কেন। ব্যাপারটি বেমানান। বই বলিউডি গান’ও নয়, যে আপনি সংগস ডট পি কে’তে ঢুকবেন। বই কিনুন। কিনুন। কিনুন।
- গুরুজনেদের সামনে মৌসুমী প্রকাশনির স্টলের সামনে উঁকি-ঝুঁকি। ব্যাপারটা যা তা, বাবা বা মেজমামা সঙ্গে থাকলে তাদেরকে দেব সাহিত্য কুটিরের মধ্যে ফেলে রেখে হাওয়া হয়ে গেলেই হলো। যদি মৌসুমী প্রকাশনীর ব্যাপারে সম্যক না জেনে থাকেন, এই বইমেলাটি অন্তত মাটি করবেন না।
- পকেট মারবেন না। ( আচ্ছা, এই প্রগতির যুগেও কী পকেট-মারেরা ব্লগ পড়া শুরু করেনি? জাস্ট ইন কেস..)। বহু সাধারণ মানুষজন-ছেলেপিলে, বহু কষ্টে কিছু টাকা জড়ো করে শুধু বছরের এই একটা সময়ের বই-খিদের জন্যে। অবিশ্যি, আলালের ঘরের বেমক্কা দুলাল আইডেন্টিফাই করে যদি পকেট ঝাড়তে পারা যায়, তাহলে বিশেষ কিছু বলার নেই। প্রফেশন বলেও একটা ব্যাপার রয়েছে।
Comments
;)