সন্ধ্যেবেলা সবে বাড়ি ঢুকেছি এমন সময় পাড়ার গোলাপ-দাদুর ফোন। গোলাপ-দাদু পাড়ার বারোয়ারী দাদু, গোলাপ-চাষে এক্সপার্ট বলে এহেন নাম। আমাদের বয়েসি ছেলে-মেয়েদের ভারী খাতির করেন। ভদ্রলোকের ভূ-ভারতে কেউ নেই, এক জোড়া চাকর ছাড়া। ছেলে-পুলে কেউ নেই, দিদিমা বহু আগেই সরে পড়েছেন। মাঝে-সঝে আমাদের মিষ্টি-সিঙ্গারা-আম-জামরুল খাইয়ে থাকেন। সে হিসেবে আমারও একটু দহরম আছে গোলাপ-দাদুর সাথে।
ফোন ধরতেই গোলাপদাদু বললে “ পচারাম, কাম টু মাই প্লেস, সুন”
বিশেষ কোনও কাজ-কর্ম ছিল না হাতে, মিষ্টি-সিঙ্গারার লোভে চলে গেলাম। গোলাপদাদুর বাড়ি যেতেই চমক। দেখি গোটা ঘর অন্ধকার। গোলাপদাদু বলে হাঁক দিতেই চিলেকোঠার ঘর থেকে আওয়াজ এলো “ওপরে, এই দিকে পচা, চলে এসো
, মেইন সুইচে ফল্ট হয়েছে কোনও, ইলেকট্রিশিয়ান এক ঘন্টার আগে আসবে না”
চিলেকোঠার ঘরটার সামনে পৌছতেই দেখি গোলাপ-দাদু দরজা আটকে দাঁড়িয়ে।দেখে অবাক হলাম গোলাপ-দাদু বেশ ধোপ-দুরুস্ত প্যান্ট-শার্ট পড়ে রয়েছে।
বললাম “কী ব্যাপার দাদু, দরজা আগলে দাঁড়িয়ে কেন?”
-“একটা সারপ্রাইজ আছে”, মনে হল উত্তেজনায় দাদুর মুখ চকচক করছে।
-“সারপ্রাইজ? কিরকম?”
-“কাম উইথ মি”, বলে দাদু দরজা খুলে ভিতরে ঘরে ঢুকলেন, পিছু পিছু আমি।
ঘরের ভিতর আসবাব বলতে একটা ছোট্ট সোফা এবং একটি সাদামাটা সেন্টার-টেবিল। অবাক হয়ে দেখলাম, টেবিলের ওপর একটি সোয়া পাউন্ডের কেক, মোমবাতি সহ!
-“হ্যাপি বার্থডে”
-“হ্যাপি বার্থডে?আমার জন্মদিন তো এখনো ৬ মাস দূরে..”
-“আরে আমার বার্থডে হে, আর আমি ভীষণ হ্যাপি..হ্যাপি ৮০তম..”
আমি নির্বাক।
-“আশি?”
-“ইয়েস, এইট্টি, এলাইভ এণ্ড কিকিং”, গোলাপদাদু উচ্ছসিত প্রায়।
-“হ্যাপি বার্থডে দাদু, হ্যাপি বার্থডে”
-“থ্যাঙ্ক ইউ পচা”
দাদু কেক ফু মেরে 80-মার্ক মোমবাতি নেভলেন, কেক কাটলেন, আমার সাথে সুর মিলিয়ে হ্যাপি বার্থডে গাইলেন; সে তার কী ফুর্তি।
বিরিয়ানী ভোজনান্তে , দাদুর জন্মদিন পালন শেষ করে বেরোবার সময়, বুড়ো জড়িয়ে ধরে যখন থ্যাঙ্ক ইউ বললে, ভারী মন কেমন করে উঠলো। বললাম, “দাদু, আগে বলোনি তো আজ তোমার জন্মদিন? তাহলে আর জম্পেশ করে কিছু একটা করা যেতো?”
-“কেন এটা কী খারাপ হল পচাকুমার?আসলে কী জানো,জীবনে আমার তেমন কোনও শখই অপূর্ণ নেই। শুধু আমার ভারী ইচ্ছে ছিল যে আমার একটা সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি হবে, সেটা আজ পর্যন্ত হতে পারেনি। সেই ছেলেবেলায় মা পায়েস বানাতেন, তারপর তোমার দিদিমা, তাদের পর আর আমার জন্মদিনের ইনফরমেসনটাই তো কারুর কাছে নেই , তো সারপ্রাইজ পার্টি। এদিকে আশি হয়ে গ্যালো, এবারে, কেন জানি না মনে হলো টাইম ইজ রানিঙ্গ আউট। তাই ভাবলাম কী করা যায়, ভেবে দেখলাম বার্থডে পার্টি হাম খুদ অরগনাইজ করেগা। জন্মদিন আমার, পার্টি আমার, আর সারপ্রাইজড হবে তুমি, কেমন, হল তো সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি?”
গোলাপ দাদু এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন। প্রবল ভাবে সুস্থ। গোলাপ চাষে দিনে তিন ঘন্টা ব্যয় করেন এবং আশি বছর বয়েসে ভদ্রলোক একটি নতুন চাকরিও জুটিয়েছেন একটি বেসরকারী সংস্থায়। যথারীতি আমাদের ভাগ্যে মাঝে মধ্যেই মিষ্টি-সিংগারা জোটে গোলাপদাদুর বদান্যতায়। অবশ্যই গোলাপদাদুর ৮১তম জন্মদিনে একটা চমকের আয়োজন আমরা পাড়ার ছেলেরাই করতে পারবো এবং বংপেনে সে ব্যাপারটাও গুছিয়ে নথিভুক্ত করে রাখতে হবে।
Comments