Skip to main content

থাপ্পড়ের খপ্পরে


থাপ্পড় ব্যাপারটা ছেলেবেলায় নেহাত মামুলি ছিল। ভাত খেতে না চাওয়া; মায়ের থাপ্পড়, জানলার ভাঙ্গা কাঁচ; পাড়াতুতো জ্যেঠুর থাপ্পড়; অঙ্কে উনিশ; হেডস্যারের থাপ্পড়, ইস্কাপণ-তীর আঁকা বেহাত প্রেম-পত্তর; Could-Have-Been প্রেমিকার পিতার থাপ্পড়। একটা বয়েসে ক্রমশ মনে হতে থাকে, বড় হওয়ার ইনসেনটিভ একটাই; চড়-থাপ্পড়হীন জীবনযাপন
কিন্তু বড় হয়ে দেখলাম উল্টো বুঝলি রাম। থাপ্পড়ের শরীরিকতা গায়েব হয়ে গ্যালো ব্যটে, অশরীরী থাপ্পড়ের ঝড় নেমে এলো জীবনেমার্কেট শেয়ার কচু-কাটা; বস-কতৃক Performance Evaluation ঘটিত থাপ্পড়বিবাহবার্ষিকী বেমালুম ভুলে গুল; বউয়ের দৃষ্টি থাপ্পড়হাতে প্রাগৈতিহাসিক মডেলের মোবাইল; সমাজের স্টেটাস মুখী-থাপ্পড়। প্রতি দুই খানি ফুচকায় এক খানি জেলুসিল থাপ্পড়, প্রতিটি তেলেভাজার সাথে বুক জুড়ে কোলেস্টেরল-থাপ্পড়।

***
শনিবার রাত, হুইস্কিতে পেট ফুলে ঢোল; ভাত খাবো না।উফ্ফ, শুধু ছোটবেলার মত মা যদি একবার চড় কষিয়ে বলতো “ভাত খাবে না? সাপের পাঁচ পা দেখেছো নাকি?”
***
স্কুলের শেষ দিন, ভূগোল শিক্ষক সুব্রতবাবুকে প্রণাম করতে গেলুম।সুব্রতবাবুর থাপ্পড় ছিলো স্কুল-বিখ্যাত, অন্য শিক্ষকেরা টিপস নিতেন সুব্রতবাবুর থেকে, কী ভাবে থাপ্পড়কে আরো এফেকটিভ করে তোলা যায়। শুনতাম সুব্রতবাবু নাকি হাতের তালুর ভঙ্গিমা কী হবে, বুড়ো আঙ্গুলের ভাঁজ ঠিক কী ভাবে হবে আর হাতের বাকি আঙুলগুলি ঠিক কী অ্যাঙ্গেলয়ে রাখতে হবে থাপ্পড় যুতসই করতে হলে, সে সব বোর্ডে এঁকে, সব শিক্ষকদের টিচার্স-রুমে বসিয়ে demonstrate করতেন মাঝে মধ্যে। এমন থাপ্পড়-খ্যাত সুব্রতবাবুকে প্রণাম করতে যেতেই ভদ্রলোক বুকে টেনে নিয়েছিলেন সেদিন, “ লিসেন পচা, আমার দেওয়া প্রতিটি থাপ্পড় তোদের গাল ব্রাশ করে আমারই বুকে এসে ডিপোসিটেড হয়েছে, হেন্স আই ক্যারি আ পারপেচুয়াল হেভী হার্ট। এত self-less থাপ্পড়, তোরা বড় হয়ে গেলে আর জোটাতে পারবি না রে, আই ভাউচ ফর ইট”

Comments

Souvik said…
Oshadharon! Subroto Babu ki amaader Roy Sir?..:D

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু