Skip to main content

বাইজুবাওরা

বাইজুর দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা জানিয়েছেন তাঁরা মর্মাহত এতগুলো মানুষকে ছাঁটাই করতে হল বলে। আড়াই-হাজার মানুষকে বাদ দিতে হল নিতান্ত নিরুপায় হয়েই, "প্রফিটেবিলিটি টার্গেট" বাগে আনতে। ব্যাপারটা এই যুগে দাঁড়িয়ে খুব একটা অদ্ভুত নয়, এমনটা তো আকছারই হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু বাইজুপ্রধান যে মনভার করা "ওপেন লেটার"টি বাজারে ছেড়েছেন, সে'টিকে আলাদা করে স্যালুট না করে উপায় নেই। মুনাফা ম্যাক্সিমাইজ করতেই যুগেযুগে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, ব্যাপারটার এথিকাল দিকে যাওয়ার কোনও মানে হয়না। কিন্তু এমন বুক বাজিয়ে আহা-উঁহু দুঃখ প্রকাশ করে পি-আর পয়েন্ট আদায় করতে বুকের পাটা লাগে। বাইজুপ্রধান সত্যিই এর জন্যে প্রশংসার দাবী রাখেন।

আড়াই হাজার মানুষের চাকরী গেল। আড়াই হাজার। ইংরেজিতে বলি, কানে তা'তে 'সুইটলি' বাজবে হয়ত; ট্যু অ্যান্ড আ হাফ থাউজ্যান্ড চাকরীজ; জাস্ট ফুড়ুৎ। সেই ঘ্যাচাং খবরটা মোলায়েমভাবে পেশ করে বাইজুপ্রধান চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছেন, "কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। আই অ্যাম সরি। কিন্তু কী করব বলুন, আমাদের এমন স্যাটাস্যাট গ্রোথ হবে সে'টা আগে থেকে ঠিক আঁচ করতে পারিনি। (যেহেতু আমারা আশাতীত ভাবে উন্নতি করেছি) কাজেই অতিরিক্ত 'ইনএফিশিয়েন্সি' আর 'রিডানডেন্সি' (লিঙ্কডইনকে আদরবাসা) আর নেওয়া যাচ্ছে না"।

এ'সব নিয়ে আলোচনার মানে হয়না। কিন্তু যেহেতু একটা মন-কেমনকরা "আহা, আমরা চাইনি, তবুও নিরুপায় হয়ে...সরি"-মার্কা চিঠি বাজারে (কাগজে-কাগজে) ছেড়েছেন, কাজেই দু'টো প্রশ্ন করাই যায়।

প্রথমত। ইনএফিশিয়েন্সি সম্বন্ধে। আড়াই হাজার ইনএফিশিয়েন্ট মানুষকে রিক্রুট করেছিলেন বাইজুবাবু? ট্যু অ্যান্ড আ হাফ থাউজ্যান্ড রিক্রুটমেন্ট ফেলিওরস? ভাবা যায়? এই যে তবে টেড-টকে শুনি, ভুল করা খারাপ। কিন্তু বারবার ভুল করাটা সাংঘাতিক লেভেলের পাপ। আড়াইহাজার ভুলভাল রিক্রুটমেন্ট? দলনেতার নাকের নীচ দিয়ে সে'টা এদ্দিন ঘটেছে? সে'টা কি এক ধরণের...ইয়ে...ইনএফিশিয়েন্সি? সে' ইনেফিশিয়েন্সির কোনও প্রতিকার আছে কি? কে জানে।

দ্বিতীয়ত। রিডানডেন্সি সম্বন্ধে। নিজের ব্যবসা কোনদিকে যাবে সে'টা ঠাহর করতে পারেননি? তাই এখন টুক করে সামান্য অ্যাডজাস্ট করে নেওয়া "প্রফিটেবিলিটি টার্গেট" মিট করতে? অথচ দেখুন, লীঙ্কডইন বলছে লীডারদের দূরদর্শী হতে হবে। কাজেই এই যে ব্যবসার ভবিষ্যৎ সঠিক ভাবে আঁচ করতে না পারা; সে'টা কি...ওই...রিডানডেন্সি?

যাক গে, এই খোলা চিঠিটার ডাকনাম দেওয়া হোক "শেষের কবিতা"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু