Sunday, November 6, 2022

বাইজুবাওরা

বাইজুর দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা জানিয়েছেন তাঁরা মর্মাহত এতগুলো মানুষকে ছাঁটাই করতে হল বলে। আড়াই-হাজার মানুষকে বাদ দিতে হল নিতান্ত নিরুপায় হয়েই, "প্রফিটেবিলিটি টার্গেট" বাগে আনতে। ব্যাপারটা এই যুগে দাঁড়িয়ে খুব একটা অদ্ভুত নয়, এমনটা তো আকছারই হচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু বাইজুপ্রধান যে মনভার করা "ওপেন লেটার"টি বাজারে ছেড়েছেন, সে'টিকে আলাদা করে স্যালুট না করে উপায় নেই। মুনাফা ম্যাক্সিমাইজ করতেই যুগেযুগে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, ব্যাপারটার এথিকাল দিকে যাওয়ার কোনও মানে হয়না। কিন্তু এমন বুক বাজিয়ে আহা-উঁহু দুঃখ প্রকাশ করে পি-আর পয়েন্ট আদায় করতে বুকের পাটা লাগে। বাইজুপ্রধান সত্যিই এর জন্যে প্রশংসার দাবী রাখেন।

আড়াই হাজার মানুষের চাকরী গেল। আড়াই হাজার। ইংরেজিতে বলি, কানে তা'তে 'সুইটলি' বাজবে হয়ত; ট্যু অ্যান্ড আ হাফ থাউজ্যান্ড চাকরীজ; জাস্ট ফুড়ুৎ। সেই ঘ্যাচাং খবরটা মোলায়েমভাবে পেশ করে বাইজুপ্রধান চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছেন, "কাজটা সহজ ছিল না মোটেও। আই অ্যাম সরি। কিন্তু কী করব বলুন, আমাদের এমন স্যাটাস্যাট গ্রোথ হবে সে'টা আগে থেকে ঠিক আঁচ করতে পারিনি। (যেহেতু আমারা আশাতীত ভাবে উন্নতি করেছি) কাজেই অতিরিক্ত 'ইনএফিশিয়েন্সি' আর 'রিডানডেন্সি' (লিঙ্কডইনকে আদরবাসা) আর নেওয়া যাচ্ছে না"।

এ'সব নিয়ে আলোচনার মানে হয়না। কিন্তু যেহেতু একটা মন-কেমনকরা "আহা, আমরা চাইনি, তবুও নিরুপায় হয়ে...সরি"-মার্কা চিঠি বাজারে (কাগজে-কাগজে) ছেড়েছেন, কাজেই দু'টো প্রশ্ন করাই যায়।

প্রথমত। ইনএফিশিয়েন্সি সম্বন্ধে। আড়াই হাজার ইনএফিশিয়েন্ট মানুষকে রিক্রুট করেছিলেন বাইজুবাবু? ট্যু অ্যান্ড আ হাফ থাউজ্যান্ড রিক্রুটমেন্ট ফেলিওরস? ভাবা যায়? এই যে তবে টেড-টকে শুনি, ভুল করা খারাপ। কিন্তু বারবার ভুল করাটা সাংঘাতিক লেভেলের পাপ। আড়াইহাজার ভুলভাল রিক্রুটমেন্ট? দলনেতার নাকের নীচ দিয়ে সে'টা এদ্দিন ঘটেছে? সে'টা কি এক ধরণের...ইয়ে...ইনএফিশিয়েন্সি? সে' ইনেফিশিয়েন্সির কোনও প্রতিকার আছে কি? কে জানে।

দ্বিতীয়ত। রিডানডেন্সি সম্বন্ধে। নিজের ব্যবসা কোনদিকে যাবে সে'টা ঠাহর করতে পারেননি? তাই এখন টুক করে সামান্য অ্যাডজাস্ট করে নেওয়া "প্রফিটেবিলিটি টার্গেট" মিট করতে? অথচ দেখুন, লীঙ্কডইন বলছে লীডারদের দূরদর্শী হতে হবে। কাজেই এই যে ব্যবসার ভবিষ্যৎ সঠিক ভাবে আঁচ করতে না পারা; সে'টা কি...ওই...রিডানডেন্সি?

যাক গে, এই খোলা চিঠিটার ডাকনাম দেওয়া হোক "শেষের কবিতা"।

No comments: