Skip to main content

রামলীলা আর মেলা


নয়ডা স্টেডিয়াম লাগোয়া ময়দানে রামলীলার জবরদস্ত মেলা দেখে এলাম আজ৷ সে'খানে পৌঁছনো মাত্রই বেগুসরাইয়ে মেলা ঘোরার সুখস্মৃতি দিব্যি মনের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে গেল। হাইক্লাস মেলার সমস্ত রসদই ছিল। বিভিন্ন সাইজের নাগরদোলা, রকমারী খাবারদাবারের ঝলমলে সব স্টল, কচিকাঁচাদের হইহল্লা, আধবুড়োদের মাতব্বরি, খতরনাক মউত কা কুয়া, ছোটখাটো একটা সার্কাস, বন্দুক দিয়ে বেলুন ফাটানোর আয়োজন, জিলিপির দোকান; সাজসরঞ্জামের অভাব ছিলনা৷

যা বুঝলাম, নাগরদোলার টিকিটের দাম হুহু করে বেড়েছে৷ অবশ্য কোনও কিছুর দামই তো পড়তির দিকে নয়, নাগোরদোলাওলাদের আর কী দোষ। তবে খরচ বাড়লেও, তাতে মেলামুখো মানুষের আগ্রহ মিইয়ে যায়নি৷ আর যাই হোক, করোনায় দু'বছর দমবন্ধ করে বসে থাকার পর চলাফেরা জমায়েত হৈ-হুল্লোড় সবে শুরু হয়েছে যে।

গোড়াতেই বলেছি। এ মেলা খানিকটা বিহারের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে৷ সেই উস্কানি পূর্ণতা পেল লিট্টির দোকানে এসে৷ লিট্টিদাদা ব্যস্ততাও চোখে পড়ার মত৷ ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজনের মেলায় লিট্টির এই সমাদর দেখে খানিকটা গর্বও হল বটে৷ বিহারের প্রতি আন্তরিক টানটা রয়ে গেছে দেখছি।

আমাদের ও'দিকে মফস্বলের মেলায় রোলের দোকানের যেমন দাপট, এ'দিকে সে দাপট বোধ হয় টিক্কিচাট গোছের স্টলগুলোর৷ দিল্লী, নয়ডার দিকে মানুষের চাটভক্তি চোখে পড়ার মত৷ আর শত-ব্যস্ততার মধ্যেও এই তরুণ চাট-আর্টিস্ট পোজ দিতে বা খেজুরে গল্প জুড়তে পিছপা হচ্ছেন না৷ সে উষ্ণতায় মনে হয়; কোভিডকে বোধ হয় আমরা সত্যিই খানিকটা দমিয়ে দিতে পেরেছি৷ খানিকটা অন্তত।
মিষ্টিমুখের আয়োজনও ছিল, গরম গুলাবজামুনের দেখলাম বেশ কদর৷ মিঠেপানের দোকানও জুটে গেল৷ বেশিরভাগ দোকানই সামাল দিচ্ছে অল্পবয়সী ছেলেপিলের দল; মেলার ভ্যাগাবন্ড দোকান বলে তাদের 'ফোকাস অন সার্ভিস এক্সেলেন্স' ফিকে হয়ে যায়নি৷ আর আজকাল একটা মস্তসুবিধে; ছোটখাটো দোকানেও ইউপিআই বা ডিজিটাল ওয়ালেট থেকে টাকা দেওয়া যাচ্ছে। কাজেই পকেটে তেমন টাকাপয়সা না থাকলেও দিব্যি টপাটপ গোলাপজাম সাফ করে দেওয়াই যায়।

খাওয়াদাওয়া-নাগরদোলা; এ'সব তো হল৷ এ'খানে এসে রামলীলার যাত্রাপালা (অবশ্য যাত্রা কথাটা এ'দিকে অচল) দেখবনা তা কী'করে হয়৷ ইয়াব্বড় মাঠ, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত কালো মাথার গিজগিজ৷ আর পালার সে কী এনার্জি৷ ইমোশনের সে কী মার্ভেলাস টানাপোড়েন। আধমাইল দূরে দাঁড়িয়েও সে থ্রিল অনুভব করা যায়৷ আর জানা-প্লটে অভিনয় করেও যে এমন উত্তেজনা মাঠভর্তি দর্শকদের মধ্যিখানে ছড়িয়ে দেওয়া যায়; সে'টা ভেবে দু'একবার ব্রাভো বলতেই হয়। দূর থেকে দেখার একটা অসুবিধে হল খোকার হাইটের প্রবলেম। অগত্যা খোকাকে কাঁধে নিয়ে মিনিট পনেরো রামের বিয়ে দেখলাম৷ সীতার 'বিদাই'য়ের সময় জনকরাজার সে কী হৃদয়বিদারক বুক-চাপড়ানো কান্না; তা শুনে পাথুরে মানুষকেও নড়েচড়ে বসতেই হবে৷
শেষপাতে অত্যন্ত খারাপ (এবং পোড়া) তেলে ভাজা সুস্বাদু পাপড় চিবুতে চিবুতে বাড়ি ফিরলাম। অল ইজ ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু