Skip to main content

আলভারেজের ধনরত্ন



ঘুম ভাঙার পর আলভারেজ থ৷ এ কী৷ দিব্যি তাঁবুর মধ্যে ক্যাম্বিসের খাটে লম্বা হয়েছিল৷ অথচ ঘুম ভেঙে দেখছে সে একটা বিশাল বাওবাব গাছের তলায় শুয়ে৷ হাত-পা বাঁধা।

আর তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আলাভোলা মুখের জনা পাঁচেক জংলি লোক৷ আলভারেজ বুঝলে এরা বুস্ত্ববা উপজাতির লোক, এ অঞ্চলে এদের সাংঘাতিক দৌরাত্ম্য। এদের বড় একটা কেউ দেখেনি কারণ তানজানিয়ার জঙ্গলের এই দুর্গম অঞ্চলে বড় কেউ তেমন সুবিধে করতে পারেনা৷ গতকাল রাত্রেই আলভারেজ ভাবছিল যে এ পোড়া জায়গায় হীরে খুঁজে হন্য হয়ে লাভ নেই; এ অঞ্চলের একেকটা মশাও এক্কেবারে পান্তুয়ার সাইজের। এ'খান থেকে সময়মত কেটে পড়াই মঙ্গলজনক। আলভারেজ ভেবেছিল আজই বেলার দিকে হীরের লোভ ত্যাগ করে কলকাতায় এসে বিরিয়ানির দোকান দেবে৷ বেশ কয়েকজন ইন্ডিয়ান তাঁকে বলেছে কলকাতায় বিরিয়ানির দোকান দেওয়া মানেই নাকি 'গোল্ডডাস্ট'৷

কিন্তু তার মধ্যে এই ঝামেলা৷ বুস্ত্ববাদের মধ্যে নেতাগোছের একজন এগিয়ে এসে ভাঙা হিন্দিতে কিছু বললে৷ আলভারেজ অবাক হলে না, এই গভীর জঙ্গলে আর কিছু না থাক; বলিউডি এফএম চ্যানেলের রমরমা খুব৷ আলভারেজ নিজেও কাজ চালানোর মত হিন্দি শিখে নিয়েছে৷

- তোমার সাহস তো কম নয় সাহেব৷ আমাদের অঞ্চলে এসে তাঁবু ফেলেছ?

- সরি সর্দার৷ আমি ঠিক ঠাহর করতে পারিনি৷

- এ অঞ্চলে বাইরের মানুষের উৎপাত আমরা সহ্য করব না৷ নো বহিরাগত৷

- সরি।

- তোমায় ভাবছি কচুকাটা করে সিংহকে খাইয়ে দেব৷

- এ'বারের মত ছেড়ে দিন স্যার৷ পরের বার না হয়..।

- ছাড়ব কেন? কীসের জন্য?

- ক্যাশ দেব? পেটিএম নিলে আরও কিছু না হয়..।

- ও'সব মায়ায় আমরা আটকে নেই সাহেব৷

- আমার একটা ব্যাকপ্যাক ছিল টেন্টে৷ সে'টা কেউ এনেছে কি? ও'টার মধ্যে একটা দারুণ ব্যাপার আছে৷

সে ব্যাকপ্যাক এক জংলি ছোকরার পিঠেই ছিল৷ তার মধ্যে থেকে বাঁটুল দ্য গ্রেট সমগ্র বেরিয়ে আসায় মানুষগুলোর হাবভাব পালটে গেল৷ সর্দার মানুষটা বেশ খানিকক্ষণ সে বই উলটে পালটে দেখলে, তাঁর কাঁধের ওপর বাকিরা হুমড়ি খেয়ে পড়লে। পড়া তাদের সাধ্যের বাইরে, কিন্তু ছবিতে বাঁটলোর কাণ্ডকারখানা দেখে তারা এক্কেবারে মুগ্ধ৷ সর্দার নিজে এগিয়ে এসে আমার বাঁধন খুলে দিলে।

- সাহেব, তোমাদের এই দেবতার নাম কী?

- বাঁটুল দ্যি গ্রেট।

- বাহ্, বেশ জাঁক তো৷ যাক, তোমার জান মকুব৷ তবে তোমার দেবতা আমাদের সঙ্গে থাকবে৷

- জো হুকুম সর্দার।

- আর এই দেবতা বইয়ের জন্য তোমায় আমরা একটা উপহারও দেব।

- দেবে কিছু? দাও। এমনিতে হাতটান চলছে খানিকটা। জঙ্গলে থাকো তোমরা সর্দার, ইনফ্লেশনের হ্যাপা তো আর পোহাতে হয় না।

- তুমি তো এ অঞ্চলে হীরে খুঁজতে এসেছিলে, তাই না?

- সবই তো জানো সর্দার।

- তোমার খালি হাতে ফেরাব না৷ তবে ওই ব্যাগভর্তি পাতি পাথর নিয়ে ফিরে কী করবে? তোমায় এমন জিনিস দেব যে তোমার চোখ টেরিয়ে যাবে৷

- কী জিনিস সাহেব?

***

সর্দার তাঁর দলবল নিয়ে চলে যাওয়ার পর স্তব্ধ হয়ে সেই বাওবাব গাছটার গায়ে হেলান দিয়ে আধঘণ্টা বসে রইলে আলভারেজ৷ সত্যিই তার চোখ গেছে টেরিয়ে৷ মাথা গেছে ঘুরে৷ গলা গেছে শুকিয়ে। বুকের মধ্যে দুমদুম-দমাস। অনেক দামী পাথর সে দেখেছে এ জীবনে৷ কিন্তু আজ এই বুস্ত্ববা সর্দার যে এ জিনিস দিয়ে যাবে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি৷

আর হীরের খোঁজে হন্যে হওয়া নয়৷

আফ্রিকার সেই নির্দয় জঙ্গলের এক কোণে বসে আলভারেজ নিজের রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং শুরু করলে। তার কাঁপা দু'হাত তখন আগলে রেখেছে সেই সাতরাজার ধন; সিনেমা থিয়েটারে বিক্রি হওয়া পেল্লায় একটাব পপকর্ন। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু