Sunday, August 21, 2022

আলভারেজের ধনরত্ন



ঘুম ভাঙার পর আলভারেজ থ৷ এ কী৷ দিব্যি তাঁবুর মধ্যে ক্যাম্বিসের খাটে লম্বা হয়েছিল৷ অথচ ঘুম ভেঙে দেখছে সে একটা বিশাল বাওবাব গাছের তলায় শুয়ে৷ হাত-পা বাঁধা।

আর তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আলাভোলা মুখের জনা পাঁচেক জংলি লোক৷ আলভারেজ বুঝলে এরা বুস্ত্ববা উপজাতির লোক, এ অঞ্চলে এদের সাংঘাতিক দৌরাত্ম্য। এদের বড় একটা কেউ দেখেনি কারণ তানজানিয়ার জঙ্গলের এই দুর্গম অঞ্চলে বড় কেউ তেমন সুবিধে করতে পারেনা৷ গতকাল রাত্রেই আলভারেজ ভাবছিল যে এ পোড়া জায়গায় হীরে খুঁজে হন্য হয়ে লাভ নেই; এ অঞ্চলের একেকটা মশাও এক্কেবারে পান্তুয়ার সাইজের। এ'খান থেকে সময়মত কেটে পড়াই মঙ্গলজনক। আলভারেজ ভেবেছিল আজই বেলার দিকে হীরের লোভ ত্যাগ করে কলকাতায় এসে বিরিয়ানির দোকান দেবে৷ বেশ কয়েকজন ইন্ডিয়ান তাঁকে বলেছে কলকাতায় বিরিয়ানির দোকান দেওয়া মানেই নাকি 'গোল্ডডাস্ট'৷

কিন্তু তার মধ্যে এই ঝামেলা৷ বুস্ত্ববাদের মধ্যে নেতাগোছের একজন এগিয়ে এসে ভাঙা হিন্দিতে কিছু বললে৷ আলভারেজ অবাক হলে না, এই গভীর জঙ্গলে আর কিছু না থাক; বলিউডি এফএম চ্যানেলের রমরমা খুব৷ আলভারেজ নিজেও কাজ চালানোর মত হিন্দি শিখে নিয়েছে৷

- তোমার সাহস তো কম নয় সাহেব৷ আমাদের অঞ্চলে এসে তাঁবু ফেলেছ?

- সরি সর্দার৷ আমি ঠিক ঠাহর করতে পারিনি৷

- এ অঞ্চলে বাইরের মানুষের উৎপাত আমরা সহ্য করব না৷ নো বহিরাগত৷

- সরি।

- তোমায় ভাবছি কচুকাটা করে সিংহকে খাইয়ে দেব৷

- এ'বারের মত ছেড়ে দিন স্যার৷ পরের বার না হয়..।

- ছাড়ব কেন? কীসের জন্য?

- ক্যাশ দেব? পেটিএম নিলে আরও কিছু না হয়..।

- ও'সব মায়ায় আমরা আটকে নেই সাহেব৷

- আমার একটা ব্যাকপ্যাক ছিল টেন্টে৷ সে'টা কেউ এনেছে কি? ও'টার মধ্যে একটা দারুণ ব্যাপার আছে৷

সে ব্যাকপ্যাক এক জংলি ছোকরার পিঠেই ছিল৷ তার মধ্যে থেকে বাঁটুল দ্য গ্রেট সমগ্র বেরিয়ে আসায় মানুষগুলোর হাবভাব পালটে গেল৷ সর্দার মানুষটা বেশ খানিকক্ষণ সে বই উলটে পালটে দেখলে, তাঁর কাঁধের ওপর বাকিরা হুমড়ি খেয়ে পড়লে। পড়া তাদের সাধ্যের বাইরে, কিন্তু ছবিতে বাঁটলোর কাণ্ডকারখানা দেখে তারা এক্কেবারে মুগ্ধ৷ সর্দার নিজে এগিয়ে এসে আমার বাঁধন খুলে দিলে।

- সাহেব, তোমাদের এই দেবতার নাম কী?

- বাঁটুল দ্যি গ্রেট।

- বাহ্, বেশ জাঁক তো৷ যাক, তোমার জান মকুব৷ তবে তোমার দেবতা আমাদের সঙ্গে থাকবে৷

- জো হুকুম সর্দার।

- আর এই দেবতা বইয়ের জন্য তোমায় আমরা একটা উপহারও দেব।

- দেবে কিছু? দাও। এমনিতে হাতটান চলছে খানিকটা। জঙ্গলে থাকো তোমরা সর্দার, ইনফ্লেশনের হ্যাপা তো আর পোহাতে হয় না।

- তুমি তো এ অঞ্চলে হীরে খুঁজতে এসেছিলে, তাই না?

- সবই তো জানো সর্দার।

- তোমার খালি হাতে ফেরাব না৷ তবে ওই ব্যাগভর্তি পাতি পাথর নিয়ে ফিরে কী করবে? তোমায় এমন জিনিস দেব যে তোমার চোখ টেরিয়ে যাবে৷

- কী জিনিস সাহেব?

***

সর্দার তাঁর দলবল নিয়ে চলে যাওয়ার পর স্তব্ধ হয়ে সেই বাওবাব গাছটার গায়ে হেলান দিয়ে আধঘণ্টা বসে রইলে আলভারেজ৷ সত্যিই তার চোখ গেছে টেরিয়ে৷ মাথা গেছে ঘুরে৷ গলা গেছে শুকিয়ে। বুকের মধ্যে দুমদুম-দমাস। অনেক দামী পাথর সে দেখেছে এ জীবনে৷ কিন্তু আজ এই বুস্ত্ববা সর্দার যে এ জিনিস দিয়ে যাবে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি৷

আর হীরের খোঁজে হন্যে হওয়া নয়৷

আফ্রিকার সেই নির্দয় জঙ্গলের এক কোণে বসে আলভারেজ নিজের রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং শুরু করলে। তার কাঁপা দু'হাত তখন আগলে রেখেছে সেই সাতরাজার ধন; সিনেমা থিয়েটারে বিক্রি হওয়া পেল্লায় একটাব পপকর্ন। 

No comments: