Skip to main content

মনু আর মাস্টারজ্যেঠুর ফন্দি



- এই যে৷ মাস্টারজ্যেঠু৷ চট করে মুড়ি মেখে আনো দেখি৷ আমি হাত-পা ধুয়ে আসি৷ তারপর জমিয়ে গপ্প করা যাবে৷ 

- আরে৷ বলা নেই কওয়া নেই বাড়ি এসে হুজ্জুতি করলেই হল নাকি মনু। তোর এ'সব অন্যায় আবদার আর চলবে না।  আমি নিরিবিলি পছন্দ করি৷ বুড়োমানুষ, সন্ধেবেলার এই সময়টা একটু বই পড়ে গান শুনে কাটাই৷ এই তুই মাঝেমধ্যেই দুমদাম করে উড়ে এসে জুড়ে বসবি, সে'টা কিছুতেই বরদাস্ত করা যায়না। 

- আরে চটছ কেন৷ আচ্ছা আমিই না হয় মেখে নেব৷ বলি আমের আচারটা আছে কি মাস্টারজ্যেঠু? একটু তেল দিয়ে কষে মাখতে পারলে...।

- আচার নেই৷ মুড়ি নেই৷ চানাচুর নেই৷ কিস্যু নেই। বেরো দেখি তুই।

- তা'হলে আর কী৷ অগত্যা, আপাতত  চা বিস্কুট৷ রাতে ভাতেভাত৷

- আজ রাতে আমার উপোস৷

- তা'হলে একার জন্যই বসিয়ে নেব। ও তোমায় ভাবতে হবেনা জ্যেঠু। 

- আচ্ছা জ্বালাতন। এমন গায়ে পড়ে কী পাস মনু?

- তোমার এই লোনলিনেস আমায় ভাবায় মাস্টার জ্যাঠা৷ ছেলেবেলায় তোমার কাছে এলসিএম জিসিএম শিখেছি৷ এই নিরেট মাথায় ঠেলেঠুলে বিভিন্ন কনসেপ্ট ঢুকিয়েছ। সামান্য গ্র‍্যাটিচিউড না থাকলে চলবে কেন? তাই, চলে আসি। 

- আদ্দামড়ার গদগদে গপ্প শুনলে গা জ্বলে যায়৷ যাক গে। গিজার চালিয়ে দিচ্ছি৷ দশ মিনিট পর বাথরুমে ঢোক৷ মুড়িফুড়ি নেই। রেডিমেড চালভাজার প্যাকেট আছে, দ্যাখ ওই রান্নাঘরের তাকে রাখা আছে৷ আর সেদ্ধভাতফাত আমি খেতে পারবনা৷ লুচি ভেজে নেওয়া যাবে৷আলু তুই ভাজবি মনু। বলে রাখলাম। 

- জো হুকুম। তা, মাস্টারজ্যাঠা। আজ কেন এলাম, সে'টা নিশ্চয়ই তোমার বুঝতে বাকি নেই৷ 

- কাগজে বেরিয়ে গেছে ইতিমধ্যে? 

- দৈনিক যুগের হাওয়া, তিন নম্বর পাতায় জ্বলজ্বল করছে৷ উত্তরপাড়ার হালুয়া ব্যবসায়ী মনু সামন্ত ফের কিডন্যাপড৷ 

- র‍্যানসমের কথা কিছু লেখা নেই?

- সে খবর জেনারেট করতেই তো তোমার কাছে আসা।

- ফের হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতে হবে?

- ফের। তবে বুড়ি বেশ গালিবল, বুঝলে৷  নয়ত এত কাঁচা প্লট সহজেই ঘেটে ঘ ত। আর হ্যাঁ, মাসি হাড় কিপটে হতে পারে, কিন্তু ভাইপোকে সে সত্যিই ভালোবাসে। 

- এ'বার কত চাইতে হবে?

- সত্তর হাজার দরকার৷ তুমি ওই আশিই চেয়ে নাও৷ একটু ডিসপোজেবল ক্যাশ হাতে থাকা ভালো।

- আজ থাক৷ কাল শনিবার, কালই বরং তোর মাসির সঙ্গে কনট্যাক্ট করব৷

- মাস্টারজ্যাঠা, পাঁচ হাজার কিন্তু এ'বার তোমায় রাখতেই হবে৷ লুচির ফিজ৷

- পিঠের চামড়া তুলে নেব রাস্কেল৷ সাধনার জন্য টাকা নেব?

**

- এসেছ লালি? শুনতে পারছ কি?

- হুঁ।

- আজ আসতে বড় দেরী হল তোমার৷

- কী করি বলো মাস্টারদাদা৷ বাতাসে এত ধুলোবালি, স্ট্রিটলাইটের আলো৷ আজকাল সে'সব ভেদ করে সাড়া দিতে কষ্ট হয়৷ তা, মনু এসেছে নাকি গো?

- এসেছে৷ ব্যাটাকে ভরপেট লুচি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়েছি৷ সে খেতেও পারে বটে, দেড় ডজন লুচি হেলায় উড়য়ে দিল।

- বালাইষাট মাস্টারদাদা৷ ওর খাওয়ার দিকে অন্তত তুমি নজর দিওনা। বছর পঁচিশের জোয়ান ছোকরা৷ এ বয়সে ওর ইট-লোহা হজম করে ফেলা উচিৎ। 

- কী যে ভালো লাগে মনুর ঘুমিয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে৷ চোখে জল আসে জানো লালি৷ তাই ভাবলাম, তোমায় এখনই ডাকি৷ আচ্ছা লালি, মনু তোমায় বেশি গালিবল ভাবে, জানো৷ তবে ওর ভালোবাসায় কমতি নেই। 

- ভাবুক গিয়ে। তা বলে আমার প্রাণেধরা মাণিকটাকে তো টাকার অভাবে শুকোতে দিতে পারিনা৷ আর একসঙ্গে সবটাকাও ওর হাতে তুলে দিতে ভয় লাগে৷ যা ভুলোমন, সব টাকা ভাসিয়ে দিয়ে পথে বসবে৷ তাই ও' দরকার মত আছিলা সাজিয়ে নিক, আমিও যতটুকু দরকার ততটুকুই আমার গোপন কুঠুরি থেকে বের করে এনে দেব। যদ্দিন পারি৷ আর টাকা ফুরোলে আমিও ফুরোব।

- এই শুধু তোমার জন্য এই অঙ্কের মাস্টারকে তান্ত্রিক সাজতে হয় লালি৷ মহাযন্ত্রণা৷ মনু ভাবে আমি ইচ্ছেমত ভূত নামাতে পারি৷ এ'দিকে তুমি ছাড়া কোনও ভূত আমায় পাত্তা দেয় না৷ হেহ্। 

- মাস্টারদাদা, বলেই দাও না ওকে৷ যে তুমিই ওর বাপ৷ স্রেফ ভাগ্যের ফেরে ও আজ তোমার সঙ্গে নেই৷ 

- সময় থাকতে ওর কদর করিনি।  তোমার হাতে তুলে দিয়ে সরে পড়েছিলাম৷ লাইক আ ডিসগাস্টিং কাওয়ার্ড৷ আজ কোন অধিকারে ওর মনের ভিতরটায় গোলমাল পাকাবো আমি লালি? তবে ইয়ে, তুমিই বা কদ্দিন এমন যক্ষের মত ওই অতগুলো ক্যাশটাকা আগলে বসে থাকবে।

- মনু যদ্দিন এমনই আলাভোলা আছে, ওর ব্যবসা তো দাঁড়াবে না। কাজেই অল্প অল্প করেই টাকাটা দিয়ে ওকে টিকিয়ে রাখতে হবে৷ যদ্দিন পারি আর কী, আমি আর তুমি মিলে৷ ও কিডন্যাপ হওয়ার নাটক করে মাসির ভূতকে ঠকিয়ে টাকা বাগানোর চেষ্টা করবে৷ আর তুমি প্ল্যানচেটে আমায় হুকুম করবে, লাও পয়সা। যদ্দিন তদ্দিন৷ তবে ওকে নিয়ে হতাশ হতে মন চায়না৷ একদিন ও ঠিক দাঁড়াবে দশজনের মধ্যে একজন হয়ে, চারদিক আলো করে। 

- তুমি আমায় ক্ষমা করতে পেরেছ লালি?

- তুমি আমার একাবোকা মনুকে মাঝেমধ্যে ডেকে মুড়িমাখা খাওয়াও৷ লুচি ভেজে দাও৷ ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলো৷ তোমার যে সাতখুন মাফ গো মাস্টারদাদা।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু