Skip to main content

দারোগা আর টিকিট-চেকার



- টিকিট দেখি৷

- হুম?

- টিকিট৷ টিকিট দেখি৷

- আপনি আমায় দেখতে পারছেন?

- মানে?

- আপনি আমায় দেখতে পারছেন?

- ইয়ার্কি হচ্ছে? টিকিট দেখি৷

- খোলসা করে বলুন তো মশাই, আপনি টিকিট চেকার না তান্ত্রিক?

- রাতের ট্রেনে ফাঁকা কামরা দেখে উঠে ভেবেছেন টিকিট ফাঁকি দেবেন? বিজন চট্টরাজকে ফাঁকি দেবেন? টিকিট না থাকলে সোজা ফাইন বের করুন৷ 

- বিজনবাবু, মড়ার আবার টিকিট লাগে নাকি৷

- বটে? বেশ! সামনেই সাঁতরাগাছি৷ রেলপুলিশের থানায় ডিনার সারবেন৷ চলুন।

- আরে৷ আমি তো ভূত৷ অশরীরী৷ ভেসে বেড়াই৷ এই এখন এই ট্রেনে, পরক্ষণেই হয়ত আমাজনের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছি৷

- অমন সুবিধেবাদি পাগল কম দেখিনি৷ চলুন, স্টেশনে ঢুকছে ট্রেন৷ থানায় ঢুকিয়ে তারপর আমি এগোব৷

**

- আরে ধুর মশাই৷ আর একবার "আমি ভূত আমি ভূত" ডায়লগ শুনলেই থার্ড ডিগ্রী দেব৷

- আরে দারোগাদাদা! নাহ্৷ আপনি সত্যিই বড় আলাভোলা মানুষ৷ আরে ভূতকে থার্ড ডিগ্রী দিলে লোক হাসবে যে৷ 

- উফ! রাতবিরেতে এই চট্টরাজ কী খ্যাপা মাল গছিয়ে দিয়ে গেল মাইরি। এই আপনি বেরোন দেখি৷ খবরদার যেন আপনাকে এই পুলিশ চৌকির আশেপাশে আর আপনাকে না দেখি৷

- আমায় তো দেখতে পাওয়ার কথাই নয়৷ তবে হ্যাঁ, ট্রেনে কাটা পড়েছি হপ্তাখানেকের বেশি হয়নি তো৷ তাই বোধহয় এখনও কম্পলিটলি ফর্মলেস হইনি৷ সে যাকগে, দিন কয়েক যাক৷ এখন তো আর অফিস যাওয়ার তাড়াও নেই, বাড়ি ফেরার ব্যস্ততাও নেই৷ ধীরসুস্থে যা হয় হবে, অখণ্ড অবসর বলে কথা।

- ধন্যি মশাই আপনি৷ বেশ৷ তাই হোক৷ তা ভূতদাদা, আপনার বাড়ি কোথায়? আই মীন, জ্যান্ত থাকতে কোথায় নিবাস ছিল আপনার?

- এই এ'এলাকাতেই। স্টেশনরোড থেকে রিক্সা করে বড়জোর দশ মিনিট লাগত৷ সতেরো বাই তিন, মধু দত্ত লেন৷ 

- চলুন৷ আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই৷ 

- এই বুদ্ধি নিয়ে আপনি চোরছ্যাঁচড়দের ম্যানেজ কী'ভাবে করেন দারোগাবাবু? আরে আমি মারা গেছি৷ ডেড৷ গন৷ ইহজাগতিক মায়া ত্যাগ করেছি৷ আমি কী করব বাড়ি ফিরে? শেষে বাড়ির লোকজনদের হন্ট করে শশব্যস্ত করে তুলি আর কী৷

- চোপ! অনেক হয়েছে! আর একটাও কথা নয়৷ হাবিলদার৷ এ যন্তরটিকে জিপে নিয়ে তোলো, এখুনি! 

- আহা, বেশ তো৷ তা হাবিলদারদাদা, পকেটে লোহাটোহার টুকরো রাখবেন কিছু, কেমন? নয়ত ভূতের ইনফ্লুয়েন্সে ক্ষতিটতি হয়ে যেতে পারে৷ 

**

- খোকা, তুই নির্ঘাৎ প্ল্যানচেট শিখেছিস, তাই না? সে জন্যেই বাড়িতে ঢুকতে পারলাম৷ 

- বাবা, মাইরি৷ এই পাগলামিটা এ'বার ছাড়ো। তুমি দিব্যি জলজ্যান্ত মানুষ। খামোখাই লোকজনের হাড় জ্বালিয়ে বেড়াচ্ছ৷ পাড়াপ্রতিবেশি এখন আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করছে৷ এ'বার ভিতরে যাও৷ মা চিন্তা করে পাগল হয়ে গেছে৷

- এই দ্যাখো৷ তুইও বোকা বনে গেলি নাকি৷ আরে শোন, গত হপ্তাতেই কাটা পড়েছি, মাইরি৷ এই, জিজ্ঞেস কর দারোগাবাবুকে.. কী দারোগাবাবু, তাই না? আমি টোট্যালি ইনট্যাঞ্জিবল এখন৷ তোদের জগত থেকে অনেক দূরে চলে গেছি৷ এ তো শুধু মাঝেমধ্যে ঘুরে যাওয়া। মায়ার টান, এট সেটেরা এট সেটেরা।

- উফফ! অসহ্য৷ 

- এই দেখো! আরে দারোগাবাবু, আপনিই একবার বুঝিয়ে বলুন না খোকাকে৷ আরে ও দারোগাবাবু, এ কী! চললেন কোথায়? ও মা, দাঁড়ান! এই দ্যাখো, চলে গেলো। 

**

- ভাই চট্টরাজ, কাল তুমি যে কোন পাগলকে গছিয়ে দিয়ে গেলে..উফ!

- আসলে কী জানো দারোগা, সে ব্যাটা পাগল কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছিল৷ মনে হচ্ছিল স্রেফ টিকিট ফাঁকি দেওয়ার জন্যই..।

- ওরে বাবা, না না৷ প্রথমে আমিও তাই ভেবেছিলাম৷ তারপর সে যা নাকানিচোবানি খাওয়ালে..বাপ রে বাপ। শেষে তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে আর এক বিপত্তি। 

- তুমি ওকে বাড়ি ছাড়তে গেছিলে?

- হিউম্যানিট্যারিয়ান ইয়ে আর কী৷ কিন্তু গিয়ে আর এক সমস্যা৷ 

- কী'রকম?

- থানায় বসে একটানা অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিল৷ তাই একরকম বাধ্য হয়েই আমি ভাবলাম, যাই, বাড়ির ভিতর লোকজনের কাছে ভদ্রলোককে পৌঁছে দিয়ে আসি৷ ও মা, গিয়ে দেখি সে বাড়ি ফাঁকা। ঘরের সদর দরজাও খোলা ছিল৷ ঢোকার পর ভদ্রলোক দেওয়ালে ঝোলানো এক অল্প বয়েসী ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে দিব্যি গল্পগুজব আরম্ভ করলে৷ সেই একই প্রলাপ, সে নিজে নাকি ভূত৷ আর হাবভাব এমন যেন ছবির ছেলেটা তার সঙ্গে দিব্যি গল্প জুড়েছে৷

- বলো কী হে দারোগা৷

- তবে আর বলছি কী! আমি অবশ্য হসপিটালে খবর দিয়েছি৷ ভদ্রলোককে বাইরে ফেলে রাখাটা সেফ হচ্ছে না৷ তা ইয়ে চট্টরাজ, কাল ঘটনাচক্রে গুগল ঘেঁটে একটা অদ্ভুত রোগের নাম জানলাম৷ আসলে ভদ্রলোকের খ্যাপাটেপনা নিয়ে খোঁজখবর করতে গেছিলাম আর কী৷ ব্যামোটার নাম হল কটার্ড ডিলিউসন।

- কটার্ড..?

- ডিলিউসন৷ এ রোগে মানুষ ভাবে..ইয়ে..তারা আর বেঁচে নেই। এ ভদ্রলোকের রোগ সে'টাই কিনা জানা নেই..।

- ভাগ্যিস কাল ওই ফাঁকা ট্রেন টিকিট চেক করতে উঠেছিলাম। ভদ্রলোকের এ'বার একটা হিল্লে হবে আশা করি। আহা রে...ইশ!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু