Skip to main content

দ্য মঙ্ক অফ মাসকাবারি



এক সময় মনে হত মনের মত রেস্তোরাঁ বা বইয়ের দোকান খুঁজে পাওয়ার মত আনন্দ আর হয়না৷ পছন্দের রেস্তোরাঁর নির্দিষ্ট একটা টেবিলের প্রতি বাড়তি মায়া তৈরি হত, জুটে যেত খাবারদাবারের অর্ডার নেওয়া পরিচিত হাসিমুখ৷ মাসে বারদুই সে'খানে গিয়ে গা এলিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিন্দি৷ খাবার স্বাদটাই সে'খানে শেষ কথা নয়, সে'খানে জমে উঠত আড্ডা৷ হুড়মুড় থাকত না, সে'খানে মেনুকার্ড ধরে "আজ কী খাব" ভেবে ভেবে হন্যেও হতে হত না; কারণ সমস্তটাই বড্ড পরিচিত৷ অথবা ধরুন, প্রিয় বইয়ের দোকানের ম্যানেজারের সঙ্গে খেজুর জুড়তে পারার অসীম তৃপ্তি; তিনি আমার পছন্দ বুঝবেন, আমার আব্দারগুলো মনে রাখবেন৷ একমাস সে'খানে ঢুঁ না মারলে পরেরবার জিজ্ঞেস করবেন, "অনেকদিন পর যে...ভালো একটা সাজেশন আছে৷ আগে চা'টা আসুক, তারপর বলছি"৷ সে বইয়ের দোকানের ছোট প্লাস্টিকের টুলটাই হচ্ছে থেরাপি চেয়ার৷ সে'টায় বসে একের পর এক নতুন বইয়ের পাতা উলটে যাওয়া; সেলুনে নবরত্ন তেল দিয়ে ঝাড়া আধঘণ্টা মাসাজ করালেও সে স্বস্তি মিলবেনা। 

কিন্তু, আজকাল মনে হয় আদত তৃপ্তি রয়েছে একটা মনের মত মাসকাবারির দোকান খুঁজে পাওয়ার মধ্যে৷ বয়স? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। তবে একটা জবরদস্ত সেকেলে 'যা চাইবেন তাই পাবেন' মার্কা দোকান, যে'খানে খরিদ্দার-দোকানির মধ্যে 'মাইডিয়ার' গল্পগুজবের সুযোগ রয়েছে, তেমন একটা মান্থলি ডেস্টিনেশন খুঁজে পাওয়ার মধ্যে যে হাইক্লাস নির্বাণ রয়েছে, সে'টা অস্বীকার করা সম্ভব হচ্ছেনা। 

ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে সুপার-স্মুদ মাখনে-ছুরি ব্যাপার আছে বটে, তবে আলাপচারিতার তেমন সুযোগ নেই৷ মালপত্তর ট্রলি-কার্টে ফেলো, বিলিং কাউন্টারে যাও, অফার-ডিসকাউন্ট বুঝে নাও, খেল খতম৷ প্রবল এক্সেল-শিট মার্কা অভিজ্ঞতা৷ কিন্তু এই একটা চমৎকার সাতপুরনো 'মম অ্যান্ড পপ স্টোর' খুঁজে ফর্দ ধরিয়ে দেওয়ার তৃপ্তিই আলাদা। দোকানের উদ্যোগী কর্মীরা সে ফর্দ হাতে চনমনে স্টাইলে কাজে লেগে পড়বেন৷ আর ক্যাশবাক্সের সামনে বসা কাকার সঙ্গে শুরু হবে গল্প, আউট-অফ-দ্যি-ফর্দ শৌখিন জিনিসপত্তরের আইডিয়া জুটবে তাঁর থেকেই৷ 

" বার্মা থেকে একটা বিশেষ ধরণের নুডল আনিয়েছি৷ ইন্সট্যান্ট নয়৷ তবে স্বাদে ইন্স্ট্যান্টলি কাত করবেই৷ নিজে টেস্ট করেছি তাই কনফিডেন্ট"। 
অথবা
"মুরুক্ক সম্বন্ধে আপনার আগ্রহ আমি নোটিস করেছি। একটা স্পেশ্যাল গার্লিক ফ্লেভারের মুরুক্কু আনিয়েছি৷ হোম-মেড। দু'বাক্স দিয়ে দিচ্ছি। আমার গ্যারেন্টি"। 
অথবা
"শুনুন, সিক্কিম থেকে বড় এলাচ এসেছে৷ আপনার ফর্দে আমিই অ্যাড করে দিয়েছি"৷ 

এমন গল্প-আড্ডায় মাসকাবারি এগোবে৷ ম্যানেজারবাবু মাঝে একবার ক্যাশবাক্স ছেড়ে আমার জিনিসপত্র প্যাক করার প্রসেসটা যাচাই করে আসবেন৷ শেষে বিল তৈরি হবে কলমে, লেটারহেডের নীচে সাদা পাতায়৷ ঢাউস ক্যালকুলেটরে হিসেব হবে৷ দু'হাজার একশো বাহাত্তর টাকা রাউন্ড অফ হয়ে যাবে দু'হাজারে৷ তিনহাজার দু'শো বাইশ তিন হাজারে৷ গল্পটা হয়ত ভালো জমবে যেদিন রাতের দিকে তাঁর দোকানে যাব, কর্মীরা দোকান বন্ধ করার তোড়জোড় চালাচ্ছে, অন্যান্য খরিদ্দার নেই৷ টাকার লেনদেন শেষ, আমার মালপত্তরের ব্যাগ পাশেই রাখা৷ ক্যাশবাক্সে প্রণাম ঠুকে খানিকক্ষণ দিলদরিয়া গল্পে মজবেন দোকানি কাকা; সৎ উপদেশ দেবেন খান দুই, খাবার অভ্যাস রিফাইন করতে বলবেন, " ফর্দে অত প্যাকেজড ফুড...নট গুড..নট গুড" মার্কা মৃদু তিরস্কারও জুটে যেতে পারে৷ হয়ত কোনও একদিন দু'জনেই একসঙ্গে দোকান থেকে বেরোব, তিনিই বলবেন, "চলো, পার্কিং পর্যন্ত তোমার সঙ্গে হেঁটে যাই"। দোকানের বাইরের সম্পর্কে "আপনি" থেকে "তুমি"-তে প্রমোশন পাবো। 

এমন একটা মাসকাবারির দোকান কপালে জুটলেই- প্রাণের হেঁসেলে শুরু হবে আরাম-চচ্চড়ি রান্নার ব্যস্ততা।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু