Monday, August 9, 2021

দ্য মঙ্ক অফ মাসকাবারি



এক সময় মনে হত মনের মত রেস্তোরাঁ বা বইয়ের দোকান খুঁজে পাওয়ার মত আনন্দ আর হয়না৷ পছন্দের রেস্তোরাঁর নির্দিষ্ট একটা টেবিলের প্রতি বাড়তি মায়া তৈরি হত, জুটে যেত খাবারদাবারের অর্ডার নেওয়া পরিচিত হাসিমুখ৷ মাসে বারদুই সে'খানে গিয়ে গা এলিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিন্দি৷ খাবার স্বাদটাই সে'খানে শেষ কথা নয়, সে'খানে জমে উঠত আড্ডা৷ হুড়মুড় থাকত না, সে'খানে মেনুকার্ড ধরে "আজ কী খাব" ভেবে ভেবে হন্যেও হতে হত না; কারণ সমস্তটাই বড্ড পরিচিত৷ অথবা ধরুন, প্রিয় বইয়ের দোকানের ম্যানেজারের সঙ্গে খেজুর জুড়তে পারার অসীম তৃপ্তি; তিনি আমার পছন্দ বুঝবেন, আমার আব্দারগুলো মনে রাখবেন৷ একমাস সে'খানে ঢুঁ না মারলে পরেরবার জিজ্ঞেস করবেন, "অনেকদিন পর যে...ভালো একটা সাজেশন আছে৷ আগে চা'টা আসুক, তারপর বলছি"৷ সে বইয়ের দোকানের ছোট প্লাস্টিকের টুলটাই হচ্ছে থেরাপি চেয়ার৷ সে'টায় বসে একের পর এক নতুন বইয়ের পাতা উলটে যাওয়া; সেলুনে নবরত্ন তেল দিয়ে ঝাড়া আধঘণ্টা মাসাজ করালেও সে স্বস্তি মিলবেনা। 

কিন্তু, আজকাল মনে হয় আদত তৃপ্তি রয়েছে একটা মনের মত মাসকাবারির দোকান খুঁজে পাওয়ার মধ্যে৷ বয়স? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা। তবে একটা জবরদস্ত সেকেলে 'যা চাইবেন তাই পাবেন' মার্কা দোকান, যে'খানে খরিদ্দার-দোকানির মধ্যে 'মাইডিয়ার' গল্পগুজবের সুযোগ রয়েছে, তেমন একটা মান্থলি ডেস্টিনেশন খুঁজে পাওয়ার মধ্যে যে হাইক্লাস নির্বাণ রয়েছে, সে'টা অস্বীকার করা সম্ভব হচ্ছেনা। 

ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে সুপার-স্মুদ মাখনে-ছুরি ব্যাপার আছে বটে, তবে আলাপচারিতার তেমন সুযোগ নেই৷ মালপত্তর ট্রলি-কার্টে ফেলো, বিলিং কাউন্টারে যাও, অফার-ডিসকাউন্ট বুঝে নাও, খেল খতম৷ প্রবল এক্সেল-শিট মার্কা অভিজ্ঞতা৷ কিন্তু এই একটা চমৎকার সাতপুরনো 'মম অ্যান্ড পপ স্টোর' খুঁজে ফর্দ ধরিয়ে দেওয়ার তৃপ্তিই আলাদা। দোকানের উদ্যোগী কর্মীরা সে ফর্দ হাতে চনমনে স্টাইলে কাজে লেগে পড়বেন৷ আর ক্যাশবাক্সের সামনে বসা কাকার সঙ্গে শুরু হবে গল্প, আউট-অফ-দ্যি-ফর্দ শৌখিন জিনিসপত্তরের আইডিয়া জুটবে তাঁর থেকেই৷ 

" বার্মা থেকে একটা বিশেষ ধরণের নুডল আনিয়েছি৷ ইন্সট্যান্ট নয়৷ তবে স্বাদে ইন্স্ট্যান্টলি কাত করবেই৷ নিজে টেস্ট করেছি তাই কনফিডেন্ট"। 
অথবা
"মুরুক্ক সম্বন্ধে আপনার আগ্রহ আমি নোটিস করেছি। একটা স্পেশ্যাল গার্লিক ফ্লেভারের মুরুক্কু আনিয়েছি৷ হোম-মেড। দু'বাক্স দিয়ে দিচ্ছি। আমার গ্যারেন্টি"। 
অথবা
"শুনুন, সিক্কিম থেকে বড় এলাচ এসেছে৷ আপনার ফর্দে আমিই অ্যাড করে দিয়েছি"৷ 

এমন গল্প-আড্ডায় মাসকাবারি এগোবে৷ ম্যানেজারবাবু মাঝে একবার ক্যাশবাক্স ছেড়ে আমার জিনিসপত্র প্যাক করার প্রসেসটা যাচাই করে আসবেন৷ শেষে বিল তৈরি হবে কলমে, লেটারহেডের নীচে সাদা পাতায়৷ ঢাউস ক্যালকুলেটরে হিসেব হবে৷ দু'হাজার একশো বাহাত্তর টাকা রাউন্ড অফ হয়ে যাবে দু'হাজারে৷ তিনহাজার দু'শো বাইশ তিন হাজারে৷ গল্পটা হয়ত ভালো জমবে যেদিন রাতের দিকে তাঁর দোকানে যাব, কর্মীরা দোকান বন্ধ করার তোড়জোড় চালাচ্ছে, অন্যান্য খরিদ্দার নেই৷ টাকার লেনদেন শেষ, আমার মালপত্তরের ব্যাগ পাশেই রাখা৷ ক্যাশবাক্সে প্রণাম ঠুকে খানিকক্ষণ দিলদরিয়া গল্পে মজবেন দোকানি কাকা; সৎ উপদেশ দেবেন খান দুই, খাবার অভ্যাস রিফাইন করতে বলবেন, " ফর্দে অত প্যাকেজড ফুড...নট গুড..নট গুড" মার্কা মৃদু তিরস্কারও জুটে যেতে পারে৷ হয়ত কোনও একদিন দু'জনেই একসঙ্গে দোকান থেকে বেরোব, তিনিই বলবেন, "চলো, পার্কিং পর্যন্ত তোমার সঙ্গে হেঁটে যাই"। দোকানের বাইরের সম্পর্কে "আপনি" থেকে "তুমি"-তে প্রমোশন পাবো। 

এমন একটা মাসকাবারির দোকান কপালে জুটলেই- প্রাণের হেঁসেলে শুরু হবে আরাম-চচ্চড়ি রান্নার ব্যস্ততা।

No comments: