Skip to main content

লোক পোক



স্বপ্নের সিকুয়েন্স।

মেসবাড়ি। যেমন হয় আর কী। সাতপুরনো, জীর্ণ। তবে জমজমাট। 

দেওয়ালে ঝোলানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ মনের সুখে দাড়িতে কলপ লাগাচ্ছেন। আর গুনগুন করছেন; "রিমঝিম গিরে সাওয়ান"।

পাশের চৌকিতে আধোশোয়া শিব্রাম সেই সুরের তালে ঠ্যাং নাচাচ্ছেন আর চোখ বুজে মনের মধ্যে ফাউল কাটলেটের ছবি আঁকছেন।

ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে ঘনশ্যাম দাস একটা ভারিক্কি  ডায়েরি উল্টেপাল্টে দেখে বলছেন, "এ'সব ছাইপাঁশ পাবলিশ করার তাল করছেন নাকি রবিদা"?

শিব্রামের উল্টোদিকের চৌকিতে ম্যাদা মেরে বসে আছেন এক গোবেচারা ভদ্রলোক। মুখে একরাশ বিরক্তি। 

ঘনশ্যাম দাসের প্রশ্নের উত্তর এলো না।
রবীন্দ্রনাথের গুনগুন থামল না।
শিব্রামে ততক্ষণে কাটলেট ছেড়ে রাবড়িতে গিয়ে ঠেকেছেন, ঠ্যাং নাচানো অবশ্য থামেনি।
এর পাশাপাশি  মান্ধাতা আমলের সিলিং ফ্যানের ক্যাঁচক্যাঁচর। 

সে গোবেচারা মানুষটি এ'বার হুঠ করে উঠে দাঁড়ালেন। আচমকা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন;
"তোমাদের মত ইরেস্পন্সিবল ইয়ারদোস্ত আমি আর দেখিনি। আমি এত বড় একটা কনসার্ন শেয়ার করলাম অথচ কারুর কোনও হেলদোল নেই। এর চেয়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকলে বরং বেশি লোকের দরদ পাওয়া যেত"।

ঘনশ্যাম দাসের ডায়েরি থেকে মুখ তুলে চাইলেন।
রবীন্দ্রনাথের গুনগুন থামল।
শিব্রামে ততক্ষণে রাবড়ি ছেড়ে  রুই কালিয়ায় পৌঁছেছেন, ঠ্যাং নাচানোও থামেনি। 

"বলি আমার প্রব্লেমটা নিয়ে কেউ কি কিছুই বলবে না"?, গোবেচারা ভদ্রলোকের মধ্যে আচমকা একটা খেপচুরিয়াস ভাব।

ঘনশ্যামবাবু এ'বার ভুরু কুঁচকে বললেন, "এমন ডিলেমায় পড়েছিলাম সে'বার ভ্ল্যাডিভস্টকে"।

"এই আবার শুরু হল", চুপসে যাওয়া বেলুনের মত ধপাস করে চৌকিতে বসে পড়লেন গোবেচারাটি, "আমার কী করা উচিৎ সে ব্যাপারে কেউ কি কিছুই বলবে না"?

ঘন কালো দাড়ির আড়াল থেকে রবীন্দ্রনাথ বলে উঠলেন, "তুমি ফিরে যাও মুকুল"। 

"বলছেন ফিরব"? গোবেচারা মানুষটি যেন বুকে বল পেলেন, " লোকে আবার ট্রোল-ঠ্রোল করবে না তো"?

"লোক না পোক", শিব্রামের ঠ্যাং নাচানো ততক্ষণে থেমেছে, " আখের শুনেছি আখের রসের মতই সুমিষ্ট৷ তুমি ফেরো মুকুল। আমি অভয় দিচ্ছি। ফেরো, আর ফেরার পথে দু'ঠোঙা চপ নিয়ে ফিরো"।



Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু