Skip to main content

মনখারাপিস্ট বনাম মামলেটিয়ে


মনখারাপ জমাট বাঁধলে সে এসে পিঠে হাত রেখে বলবে, "যত্ন করে জোড়া ডিমের মামলেট ভেজেছি ভাই৷ এসো, ব্যালকনিতে বসে খাবে"।

আমি মুখভার করে বলব "এই অসময়ে আবার মামলেটের কী দরকার"!

সে বলবে, "অসময়েই তো আমরা গীতবিতান হাতড়ে মরি৷ অসময়েই তো আমরা বাউল শুনে আঁকুপাঁকু করি৷ অসময়েই তো মনের শ্যামল মিত্র ভ্যাক্সিনের প্রয়োজন হয় ভায়া৷ সুসময়ে তো নিউজচ্যানেলকেও রাগসঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা যায়৷ এই ডিমভাজা তো সুসময়ের অমলেট নয়, বরং দুঃসময়ের মামলেট৷ তোমার জন্য সময়টা গোলমেলে বলেই তো এমন যত্ন করে ফার্স্টক্লাস ডিম ভেজে আনলাম"৷

গড়িমসি করে মামলেটের প্লেটখানা হাতে নিয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যাব৷ মোড়ায় বসে ইতিউতি চামচ চালিয়ে মামলেটে কাটাকুটি শুরু করব।

মুখে দু'এক টুকরো ডিমভাজা পড়তেই গায়েমুখে মিঠে হাওয়া এসে ঠেকবে৷ তখন সে শুধোবে, " কী ভায়া, কেমন"?

আমি তৃপ্তি চেপেচুপে রেখে দায়সারাভাবে মাথা নাড়ব৷ 

সে বলবে, "এ'বার একটু বিভূতিভূষণ রিসাইট করব"।

আমি মৃদুকণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়ে বলব, "তার আবার কী দরকার"!

সে বলবে, " ভায়া, কলকাতায় বইমেলার কী দরকার? মহাভারতে কেষ্টরই বা কী দরকার ছিল? এ'সব প্রশ্ন করতে নেই হে৷ করতে নেই৷ বিভূতিভূষণের আবার দরকার-অদরকার কী৷ সাপ্লাই যত বাড়বে, মার্জিনাল ইউটিলিটি তত লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরের দিকে যাবে৷ 

তারপর ক্রমশ টের পাব যে মামলেটে-বিভূতিভূষণে মন তরতাজা হয়ে উঠছে৷ মনের ঘোলাটে ভাব কেটে যাচ্ছে৷ বুকের মধ্যে দিব্যি হাতেগরম ভালোলাগা তৈরি হচ্ছে৷ 

দু'চার পাতা আরণ্যক পড়ার পর সে কাছে এসে বলবে, "মন কেমন এখন ভায়া"? ততক্ষণে আমার মুখে দিব্যি আলো-আলো হাসি - মান-অভিমান গায়েব, খিটখিট ভ্যানিশ। 

সে বলবে, "এ'বার তা'হলে আসি ভাই? পরেরবার তোমার মনখারাপের ঘুমের স্বপ্নে এসে লুচি-আলুভাজা খাইয়ে যাব৷ আর বিভূতিভূষণের বদলে পূর্ণেন্দু পত্রী৷ কেমন"?

সেই আশ্বাস দিয়ে, স্বপ্নের সেই  অমায়িক ডিম-ভাজিয়ে আমিটি কেটে পড়বে৷  মনখারাপ-কেটে বেরিয়ে আসা যে আমি পড়ে থাকব, তার মনের মধ্যে "মন্দ কী আর৷ ভেসে যাইনি তো এখনও"-মার্কা সুবাতাস।  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু