Skip to main content

গোলেমালে

চারপাশের সমস্ত কিছু কেমন যেন স্বপ্নের মত ঠেকছিল। কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না৷ কল্পলোক না কী যেন বলে? তেমনই কিছু একটা যেন৷ উপযুক্ত ইমোজির অভাবে নিজের মনের অস্থির অবস্থাটা সঠিকভাবে কাউকে বুঝিয়ে উঠতেও পারছিলাম না৷ 

চারপাশটা মন দিয়ে দেখেশুনে স্তম্ভিত হতেই হলো - এ যে কোয়াড এইচ-ডি ডিস্প্লেকেও হার মানাচ্ছে৷ সবকিছুই কী  স্পষ্ট, যেন চাইলেই ছুঁতে পারব৷ ওই দেখো, সত্যিই ছুঁতে পারছিলামও৷ বালিশের ওয়াড়, বিছানার চাদর, খাটের পাশের টেবিলের ওপর ওপরে সাজানো ফুলদানি - হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে৷ ও মা, সে ফুলদানিতে আবার রজনীগন্ধা- রীতমত ছোঁয়া যায়, সে মিষ্টি সুবাসও নাকে আসছে বইকি। কিন্তু ছুঁলে কোন কাঁচকলাটা হবে? ফুলদানি বা রজনীগন্ধা কোনওটাই তো পিঞ্চ-টু-জুম করা যাচ্ছিল না। অস্বস্তিটা ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছিল৷ 

এমন সময় পাশের ঘর থেকে খোকা দুদ্দাড় করে ছুটে এসে গলা জড়িয়ে ধরল৷ আমার আদরের খোকা, দেখেই বড় সাধ করল লাভ্ রিয়্যাকশন দিতে। ও মা, সে উপায়ও নেই৷ বাধ্য হয়ে রসকষহীন একখানা চুমু বসিয়ে দিতে হল খোকার গালে৷ এরপর গজরগজর করতে করতে ঘরে এসে ঢুকলো বউ। সে আবার আর এক সমস্যা- চারপাশ হাতড়েও মিউট করার কোনও বোতাম খুঁজে পেলাম না৷ অগত্যা ওর দিকে তাকিয়ে দু'টো কথা বলতে হলো৷ পিং-য়ের বদলে 'ওগো হ্যাঁগো' - এক্কেবারে ক্যালামিটি যাকে বলে৷ ওর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আবার অস্বস্তিটা দ্বিগুণ হল, টের পেলাম যে ইন্সট্যা-ফিল্টার ছাড়া একে-অপরের মুখ আমরা বহুদিন পর দেখছি। গোড়ার দিকে তো বলতে যাচ্ছিলাম "নাইস ডিপি, কখন চেঞ্জ করলে"? কিন্তু শেষ মুহূর্তে সামলে নিলাম! 

ক্রমশ কেমন যেন গা গুলিয়ে উঠছিল৷ খানিকক্ষণ লগ আউট বোতাম খুঁজলাম কিন্তু তারপর মাথায় এলো অ-স্ক্রিন দুনিয়ার এই এক বিশ্রী সমস্যা - লগঅফ সাইনআউটের কোনও সুযোগ নেই৷ দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম৷ চেনা পৃথিবীটা ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল৷ ওই ভাবে আর আধঘণ্টা থাকতে হলেই নিজেকে ফর্ম্যাট করে ফেলতে হত। তবে বিশ্রী কোনও গোলমাল ঘটার আগেই ডাউন হওয়া হোয়্যাটস্যাপ, ফেসবুক আর ইন্সট্যাগ্রাম সচল হল৷ জটিল ভাষায় বলতে গেলে - ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল৷ সহজভাবে বললে - ফিলিং রিলীভড উইথ বৌ, খোকা অ্যান্ড আ বিলিয়ন আদার্স৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু