Skip to main content

এমন একটা সোমবার


সহকর্মী মিহি সুরে ডেকে বলবেন, "ভাই, তোমার জন্য আজ পান্তুয়া এনেছি, বাড়িতে বানানো৷ তোমার বৌদির স্পেশ্যালিটি৷ লাঞ্চের পর আমার টেবিলে একবার আসা চাই কিন্তু"।
বস পিঠ চাপড়ে বলবেন, " গত হপ্তায় তো রোজই দেরী করে বেরিয়েছ৷ আমার নজর এড়ায়নি কিন্তু৷ শোনো, আজ বিকেলে চটপট বেরোবে৷ আরে বাবা যন্ত্র তো নও, মানুষ তো! আর শোনো, সবসময় অমন গোমড়াথেরিয়াম হয়ে ঘুরে বেড়াও কেন বলো তো? একটা হোমওয়ার্ক দিলাম, রোজ রাতে শোওয়ার আগে মিনিমাম আধঘণ্টা তারাপদ পড়বে, কেমন"?
লাঞ্চের সময় টিফিন খুলে মন-প্রাণ-বুক রোববার দুপুরে রাঁধা বাসি বিরিয়ানির সুবাসে আচ্ছন্ন হবে৷
হঠাৎ কোনও ক্লায়েন্ট ফোন করে বলবেন,"রোজই তো কোনও না কোনও কম্পলেন নিয়ে ফোন করি৷ আজ কিন্তু স্রেফ থ্যাঙ্কিউ বলতে ফোন করেছি৷ সার্ভিসের ব্যাপারে আপনাদের সিরিয়াসনেসটা বেশ ইম্প্রেসিভ, চালিয়ে যান৷ আর শুনুন, একদিন আমাদের অফিসের দিকে চলে আসুন না৷ একটু আড্ডা মারা যাবে। হাইক্লাস দার্জিলিং টী থাকবে৷ আর জানেন তো, আমাদের ক্যান্টিনের ফিশ কাটলেটের একটা কাল্ট-স্টেটাস আছে অফিস-পাড়ায়"।
বিকেলের দিকে বৃষ্টি নামবে, কিন্তু ভাসিয়ে দেবে না৷ স্রেফ গুমোট কাটানো ফুরফুরে কলেজ-প্রেম-মার্কা বাতাস শহরময় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যত'টুকু দরকার, ততটুকুই৷
অটোর লাইনে দুম করে দেখা হবে পুরনো বন্ধুর সঙ্গে৷ দু'জনে মিলে দিব্যি উড়িয়ে দেওয়া যাবে দু'ঠোঙা চীনেবাদাম আর বিটনুন৷
ট্রেনে ভীড় সামান্য কম হবে৷ ডেলিপ্যাসেঞ্জারি ইয়ারদোস্তরা কোনও এক জাদুমন্ত্রবলে সে'দিন মোবাইল স্ক্রিনে না আটকে থেকে খেলা বা সিনেমা নিয়ে গপ্প জুড়বে৷ হঠাৎ কেউ দু'কলি গেয়ে উঠলেও ক্ষতি নেই, বরং সে মানুষের গলায় এমন সুর লুকিয়ে ছিল যেনে বুকের মধ্যে চনমনে একটা ভালো লাগা তৈরি হবে৷
এমন, ঠিক এমন একটা সোমবার যেন প্রতিটা মানুষেরই মাঝেমধ্যে জোটে৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু