Skip to main content

ভূতচতুর্দশীর বাজে গল্প।


- ভূতের গল্প?

- হ্যাঁ মামা। ভূতচতুর্দশীর রাতে একটা জমজমাট গা ছমছমে ভূতের গল্প না হলেই নয়।

- জমজমাট? গা ছমছমে?

- এগজ্যাক্টলি৷ 

- একবার হয়েছে কী, একটা স্কন্ধকাটা গিয়ে পড়েছে টুপির দোকানে..।

- যাহ্৷ এতে গা ছমছম কই?

- স্কন্ধকাটার সিচুয়েশনটা ভাব ভাগনে৷ চারদিকে হাজার হাজার টুপি..অথচ সে ব্যাটা ঠুঁটোজগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়ে৷ ঠিক যেন কেউ কাঁটাচামচ দিয়ে স্যুপ খেতে বসেছে। 

- আহা, এতে ট্র‍্যাজেডি আছে৷ কিন্তু গা ছমছম কই? 

- বেশ৷ বেশ৷ অন্য প্লট।

- ইরশাদ। ইরশাদ।

- একবার হয়েছে কী..একটা মেছোভূত গিয়ে পড়েছে এক ভিগানের বুফেতে৷ আর তারপর ব্রকোলি কালিয়ার গন্ধে গা গুলিয়ে সে মূর্ছা যায় আর কী...।

- মামা, তুমি গল্প বলার ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছ না। 

- কেন রে? সাফিশিয়েন্টলি গা ছমছমাচ্ছে না বুঝি?

- ধুর৷ ভিগান বুফেতে মেছোভূত৷ এ'টা ভূতের গপ্প না জ্যোমাটোর ট্যুইট?

- তুই বড় খুঁতখুঁতে ভাগনে।

- মামা, আর একটু তলিয়ে ভাবো।

- বেশ। শোন মনে দিয়ে৷ অ্যাটেনশন। কেমন?

- টোটাল ফোকাস নিয়ে বসেছি।

- একবার হয়েছে কী..একটা শিব্রাম ভক্ত শাঁকচুন্নির মাথায় পানের ভূত চেপেছিল। হাজার রকম পদের মধ্যে থেকে সে শুধু শাক বেছে নিয়ে গাইত "আঁমি শাঁক চুঁনেছি, আমি শাঁক চুঁনেছি"।

- মামা, আজ বরং গল্পটা থাক।

- ভাগ্নে, গল্পটাকে ফ্লো তো করতে দে৷ থ্রিল আসবে৷ গা ছমছম আসবে৷ 

- হাউহাউ কান্না আসছে মামা। গল্প থাক।

- লাস্ট চান্স৷ লাস্ট।

- ভূতচতুর্দশীর কসম মামা৷ এ'বার কাঁপিয়ে দাও৷ 

- সে অনেকদিন আগের গল্প৷ বহুযুগ আগের, বুঝলি৷ এক ছিল ব্রহ্মদৈত্য আর এক ছিল মামদো৷ তাঁদের একই গাছের পাশাপাশি ডালে বাস।

- পাশাপাশি?  খতরনাক তো!

- তবে আর বলছি কী ভাগনে৷ টোটাল থ্রিল রয়েছে এ'খানে।

- তারপর কী হল মামা?

- সে ব্রহ্মদৈত্য আর মামদোর আবার গলায় গলায় দোস্তি।

- বলো কী৷  ব্রহ্মদৈত্য আর মামদোর দোস্তি? এ যে গল্পের গরু গাছে৷

- গাছ আর এমন কী ভাগ্নে৷ এরপরে পাহাড় বেয়ে উঠবে। আই প্রমিস৷ 

- তারপর মামা?

- ব্রহ্মদৈত্যর ছায়া-শরীরের চিতার গন্ধটা বড় ভালোবাসত মামদো।

- অহো৷ নাজুক মামা। নাজুক। 

- আর জনাব মামদোর আবছা-গায়ে লেপটে থাকা মাটির সুবাসটুকু শুঁকে বড় ফুর্তি পেত বাবু ব্রহ্মদৈত্য।

- কবিতা মামা৷ জাস্ট কবিতা হচ্ছে৷ জয় গোস্বামী কে বারো গোল দেওয়া কবিতা। 

- তারপর..।

- তারপর?

- তারপর একদিন হয়েছে কী..এক বেঁশোভূত এসে হাজির হল তাঁদের গাছে। 

- বেঁশো?

- মর্গ লাগোয়া বাঁশঝাড়ে তেনার বাস। তাই বেঁশো।

- সে ব্যাটা এলো কেন?

- ভোট চাইতে৷ 

- ভোট?

- ভোট৷ ভূতের দেশে ভোট আর বাতেলা নেই ভেবেছিস ভাগ্নে? সব আছে। মরেও মুক্তি নেই রে৷ মুক্তি নেই।

- ভারী মনখারাপ হল মামা৷ মরেও মুক্তি নেই। যাকগে। বেঁশো ভোট চাইতে এলো। তারপর?

- প্রথমে সে বেঁশো ব্যাটা ব্রহ্মদৈত্যকে প্রাইভেটে পাকড়াও করল। বেঁশো বলল, "ওই শালা মামদোর জাতে শয়তানি মিশে আছে, আমাদের নেতা হাতে ক্ষমতা পেলে ওদের চাবকে সিধে করবে৷ তাতে তোমারই ফায়দা৷ কাজেই আমাদের নেতাকে ভোট দাও"। 

- বেশ রিয়েলিস্ট হল এই জায়গাটা৷ এক্কেবারে আর্ট ফিল্ম। তা ব্রহ্মদৈত্য কী বললে?

- ব্রহ্মদৈত্য বেঁশোর কান মলে চ্যাংদোলা করে গাছ থেকে ছুঁড়ে ফেললে। 

- স্টানিং৷ আর্ট ফিল্ম টু রূপকথা৷ 

- এরপর বেঁশো ফের গাছে বেয়ে উঠলে প্রাইভেটে মামদোকে পাকড়াও করতে।  মামদোকে বেঁশো বললে "ওই শালা ব্রহ্মদৈত্যর জাতে শয়তানি মিশে আছে, আমাদের নেতা হাতে ক্ষমতা পেলে ওদের চাবকে সিধে করবে৷ তাতে তোমারই ফায়দা৷ কাজেই আমাদের নেতাকে ভোট দাও"।

- সে কী৷ বেঁশো আদতে কোন মতাদর্শে ভীড়ে আছে বলো তো মামা?

- বেঁশো মতাদর্শ বোঝে ভেবেছিস? সে বোঝে কমিশন। সে সাপের হয়েও সওয়াল করে আবার নেউলের হয়েও৷ 

- ওহ৷ ইউ মীন দ্য হাইয়েস্ট লেভেল অফ পলিটিক্স।

- এগজ্যাক্টলি। 

- তা মামদো কী করলে?

- মামদো? মামদো বেঁশোর কান মলে চ্যাংদোলা করে গাছ থেকে ছুঁড়ে ফেললে। তারপর মামদো আর ব্রহ্মদৈত্য মিলে সে যাকে বলে রোলিং অন গাছের ডাল উইথ লাফটার। চিতার গন্ধ আর মাটির সুবাস মিলে মাখামাখি।

- এই দ্যাখো মামা, গায়ে কাঁটা দিয়েছে। আর বুকে ধুকুরপুকুর।  টোটালি থ্রিলড।

- কী, বলেছিলাম না গল্পের গরু আর্ট ফিল্মের জাবর কাটায় আটকে না থেকে এভারেস্টে উঠবে?

- এক্কেবারে চাঁদে পাঠিয়েছ মামা। টু দ্য সী অফ ট্রাঙ্কুইলিটি।

- বেস্ট উইশেস অন ভূতচতুর্দশী ডিয়ার ভাগ্নে৷ 

- সেম টু ইউ মামা। সেম টু ইউ। 

***

 (বলাই বাহুল্য ছবিট পরশুরাম গল্পসমগ্র থেকে নেওয়া।  "যতীন্দ্রকুমার সেন বিচিত্রিত"।)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু