Friday, November 13, 2020

বিধুবাবুর কেল্লাফতে


- কে? কে?

- এসেছি ভায়া, এসেছি। 

- কে আপনি?

- পরিচয়টা তো বড় কথা নয়৷ এসেছি৷ এ'টাই বড় কথা৷ তাই না বিধুশেখর? 

- আইশ্লা! মার দিয়া কেল্লা! নামিয়েছি৷ আমি ভূত নামিয়েছি। প্ল্যানচেটের জোর আছে৷ আছে!

- আলবাত আছে। তোমার কনসেন্ট্রেশনের জোরেই তো এলাম।

- বেয়াল্লিশ বছর ধরে চেষ্টা করছি, জানেন৷ বেয়াল্লিশটা বছর৷  শর্টসার্কিট বিধু,  ভূতপাগল বিধু, প্ল্যানচেট পাগলা- এমন কতশত বদনাম বয়ে বেড়াচ্ছি৷ পাড়ার লোক পাত্তা দেয় না, আত্মীয়স্বজন এড়িয়ে চলে৷ তবু, তবু আমি হাল ছাড়িনি৷ 

- সাবাশ ব্রাদার!

- হিয়ার ইজ মাই সাকসেস৷ ভূত! আপনি!

- চা'টা অফার করবে না হে? বিধুশেখর?

- চা? 

- ভূতেরা চা খায়না বটে৷ তবে এই যে তোমার সোফায় এসে বসলাম, এ'টুকু সৌজন্য আমি আশা করতেই পারি৷ তুমি অফার করবে, আমি রিফিউজ করব।

- চা খাবেন স্যার?

- নো, থ্যাঙ্কস।

- ইয়ে, আপনার নামটা? জানতে না পেরে কেমন খচখচ করছে৷ আপনাকে ঠিক দেখতেও পারছি না যে৷ কেমন আবছা আবছা সমস্তটা৷ 

- দেখবেটা কী করে! এখনও পুরোপুরি তৈরি হতে পারিনি তো৷ এখনও ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস।

- ঠিক ইয়ে, ধরতে পারলাম না স্যার..। পুরোপুরি তৈরি হননি মানে?

- মানে, যে ব্যাটা মরে আমি..সে পুরোপুরি মরেনি।

- মা..মানে?

- অর্ধেকটা মরেছে৷ কাজেই আমিও অর্ধেক ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি৷ কিন্তু দুঃখের কথা কী আর বলব ভাই, সে জন্য অন্য ভূতেরা আমায় অত্যন্ত হেয় করে৷ আমায় নিয়ে ঠাট্টা করে৷ তেনাদের লেগপুলিংয়ে এ কী বিষ৷ উফ! এত রাগ হয় ভাই বিধু..।

- আমার না কেমন যেন মনে হচ্ছে..।

- আধমরা মানুষ ভাই তুমি৷ সংসার, সমাজ, ভালোবাসা, স্নেহ সমস্তই ত্যাগ করেছ এই ভূত ধরার তাড়নায়৷ তোমার আবার মন, তায় আবার মনে হওয়া।

- ভালো হচ্ছে না বলে দিচ্ছি..ভালো হচ্ছে না।

- আমি যে হাফভূত হয়ে হেনস্থা হচ্ছি? সে'বেলা? সে'টা বুঝি খুব ভালো হচ্ছে? নাহ্৷ এর বিহিত না করলেই নয়৷ একটু এ'দিকে এসো দেখি বাবা বিধুশেখর।

**

তিরিশ বছর ধরে পুলিশে চাকরী করছেন অবনী দারোগা। অথচ গলায় দড়ি দেওয়ার বদলে কেউ নিজে নিজের গলা টিপে আত্মহত্যা করেছে,  এমন বিদঘুটে কেস এর আগে কখনও দেখেননি৷ অথচ বিধুশেখর মল্লিকের গলায় আঙুলের দাগ মিলিয়ে দেখলে সন্দেহের কোনও অবকাশই থাকে না৷ 

No comments: