Thursday, November 12, 2020

নিউনর্মালে লোকালে


আমার দুই মামা চাকরীর পাশাপাশি যে'টা করে সে'টা হল ডেলি প্যাসেঞ্জারি৷ ছোটমামা মাঝেমধ্যেই বলে যে তাঁর চাকরীর একভাগ অফিস আর তিনভাগ ডেলিপ্যাসেঞ্জারি৷  সারা বছর লোকাল ট্রেনের ভীড় সামাল দিয়ে কলকাতা পৌঁছে তাদের 'অফিস-করা'৷ লোকাল ট্রেনের চলাচল মফস্বলের মানুষজনের জন্য ধানচাষের মতই জরুরী, কলকাতার চাকরী ধরে রাখতে এই লোকাল ট্রেনের ডেলিপ্যাসেঞ্জারিই অজস্র সংসারের ভরসা। মাসের পর মাস সেই ট্রেন চলাচল বন্ধ আবার ও'দিকে ঠুনকো প্রাইভেট ফার্মের চাকরী। করোনার দুর্বিপাকে পড়ে বেশ কিছু দিন প্রবল অনিশ্চয়তার মধ্যে কেটেছে৷ 

বিশ্রী একটা ধুকপুক নিয়ে ফের শুরু হয়েছে লোকাল ট্রেনের যাওয়া-আসা৷ খানিকটা স্বস্তি এসেছে, যাতায়াতের একটা সুরাহা হল, চাকরীটা হয়ত টিকিয়ে রাখা যাবে৷ কিন্তু তার পাশাপাশি রয়েছে প্রবল শঙ্কা- মুণ্ডু গেলে খাবোটা কী? 

নিয়মিত কলকাতা যাতায়াতের সহজতম পথটা যেমন চালু হল, তেমনই এর পাশাপাশি বহুগুণ বেড়ে গেল ট্রেনের ভীড় এবং অসতর্কতায় কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার দুর্বিষহ ভয়৷ 
এই অসহায় পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বলাটা নেহাৎ সহজ নয়৷
 
আমি শুধু জানি যে দু'জন সাধাসিধে সরল মানুষ সংসারের জন্য বুক চিতিয়ে লড়ছেন৷ তাঁরা সতর্ক, কিন্তু চোয়াল শক্ত না রেখে উপায় নেই। বেলা বোসকে চাকরীটা পাওয়ার খবর দেওয়ার গানটা আমাদের বড় প্রিয়৷ কিন্তু সে সাধের চাকরীটা ধরে না রাখতে পারলে আটপৌরে সংসারের লাল-নীলটা আর রইবে না৷ অতএব, নিয়মিত যুদ্ধযাত্রা।

আমরা অনেকে বাজারঘাট বা 'শপিং'য়ের জন্য বের হচ্ছি, কেউই তো আর থেমে নেই৷ জুবুথুবু হয়ে মাসের পর মাস বসে থাক সহজও নয়৷ তবে এরই মাঝে আমাদের মাস্কটাও আলগা হয়ে আসছে৷ 'ও হলে হবে'র ভাইরাস করোনাকে টেক্কা দিচ্ছে৷ অথচ ও'দিকে, কত মানুষ বেরোচ্ছেন সংসার যুদ্ধে কোনওক্রমে টিকে থাকতে। 

যুদ্ধ মাত্রই সিয়াচেনের বরফ বা কুরুক্ষেত্রর ব্যূহ  নয় - সেই যুদ্ধগুলোর প্রতি সেলাম ঠুকতে আমাদের মাস্কগুলো থাক। 

No comments: