Skip to main content

দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ থার্ড রাইখ প্রসঙ্গে



রাইজ অ্যান্ড ফল অফ থার্ড রাইখ। সাতান্ন ঘণ্টার অডিও বই, শুনলাম প্রায় দেড় মাস সময় নিয়ে। ভাবনাচিন্তা রসদ প্রচুর জুটেছে , কিন্তু সে'সব গুছিয়ে যত্ন করে লিখতে পারলে হয়। এ বইয়ের ব্যাপারে রিভিউ-মূলক কিছু বলার ক্ষমতা (বা পড়াশুনো) আমার নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপারে আমার আগ্রহ বহুদিনের; আর এই বইটা পড়ার আগে এ বিষয়ে আমার যাবতীয় জ্ঞানের উৎস মূলত ছিল নেটফ্লিক্স, ইউটিউবে দেখা বেশ কিছু ডকুমেন্টারি এবং ইন্টারনেটের পড়াশোনা (সে পড়াশোনা পুরোটা আনতাবড়ি নয়, বেশ কিছুটা হিসেব করেই পড়া)। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির মত কিছু বই অথবা শিন্ডলার্স লিস্টের  মত হলোকস্ট বিষয়ক বেশি কিছু সিনেমা আমরা অনেকেই পড়েছি/দেখেছি তবে সে’গুলো সামগ্রিক ভাবে ‘ইনফরমেশন-রিচ্‌’ নয়। 

আগে এই বইয়ের ব্যাপারে দু’চারটে কথা বলি। 

১। বইয়ের দৈর্ঘ্য ঘাবড়ে দেওয়ার মত, কিন্তু বইয়ের ভিতরে ঢুকে যেতে পারলে পাঠক বুঝতে পারবেন যে থার্ড রাইখকে সম্যকভাবে বুঝতে গেলে অসীম ধৈর্যের কোনও বিকল্প নেই। দুম করে একজন ক্যারিসম্যাটিক খুনে মানুষ গোটা জাতকে হিপনোটাইজ করে ক্ষমতা দখল করলে এবং গোটা ইউরোপকে সর্বনাশের মুখে ঠেলে দিল; ইতিহাস ততটা স্কেল-বসিয়ে-পেন্সিল-টানা'র মত সরল নয়। নাৎসি সন্ত্রাসের দায় মুষ্টিমেয় কিছু উন্মাদের ঘাড়ে চাপিয়ে 'আহা উঁহু' করলে রীতিমত অন্যায় হবে। এই বিপর্যয়ের পিছনে জার্মান জাতের ভূমিকা, ইউরোপের অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মদত বা পিঠ-বাঁচানো আশকারা; এই সমস্ত দিকগুলোর ওপর অলোকপাত করেছেন লেখক। এবং সে কাজের জন্য তিনি অনবরত ব্যবহার করেছেন 'হার্ড এভিডেন্স'।  

২। অ্যাডলফ হিটলারের সাধারণ সৈনিক থেকে জার্মানির সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা এবং তাঁর নষ্ট হয়ে যাওয়া, নাৎসি মত্ততার শুরু এবং শেষ; সমস্তটাই সোজাসাপটা মোগাম্বো এলো, মোগাম্বো গেলো গোছের মুগুর পেটানো মোটা দাগের গল্প নয়। এর মাঝে রয়েছে অর্থনীতি, রাজনীতি এবং বিভিন্ন ইডওলজির টানাহ্যাঁচড়া। সেই টানাহ্যাঁচড়াগুলো সম্বন্ধ খানিকটা ভাসাভাসা ধারনা ছিল, এই বইতে সে’সব বিষয়ে বিশদ (এবং মনোগ্রাহী) আলোচনা রয়েছে। 

৩। নাৎসি ইতিহাস ‘রিকন্সট্রাক্ট’ করতে গিয়ে লেখক পদে পদে কোট করেছেন সরকারি দলিল দস্তাবেজ, বিভিন্ন ডায়েরির পাতা, সে’যুগের বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার, বই ইত্যাদি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় এবং ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল পর্যন্ত লেখক যে মর্মান্তিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন; তা'তে দুর্দান্ত ভাবে ব্যবহার করেছে মাপা প্রমাণ এবং ধারালো সব যুক্তি যা নিশ্চিতভাবেই বিস্তর পরিশ্রম করে যোগাড় করতে হয়েছে। অতএব অসংখ্য ফুটনোট এ বইয়ের এক অবিচ্ছেদ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

৪। ইহুদী নিধন এবং খুনে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলো নিয়ে বেশ কিছু লেখা আগেই পড়েছি, প্রচুর ডকুমেন্টারি এবং সিনেমাও রয়েছে। ইতিহাসে এমন মর্মান্তিক অধ্যায় হয়ত খুব বেশি নেই; কাজেই এ নিয়ে যে প্রচুর হৃদয় নিঙড়ানো লেখালিখি হবে; সে’টাই স্বাভাবিক এবং উচিৎ। এ বইতেও সে’সব নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করেছেন লেখক। কিন্তু তা মূল যুদ্ধের ইতিবৃত্তকে ঢেকে দেয়নি। হিটলার তাঁর ইহুদী নিধন বা ফাইনাল সলিউশনের ভয়াবহতার জন্য যুদ্ধে হারেননি। তেমনি, স্রেফ মানবিকতার হয়ে লড়ে জেতেনি ব্রিটেন, রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মর্মান্তিক হলেও সে'টাই সত্যি। যুদ্ধের হারজিত নির্ধারিত হয়েছিল বরফ-শীতল ‘স্ট্র্যাটেজি-গেম’য়ে। যাবতীয় শয়তানি সত্ত্বেও হিটলার দিব্যি পার পেয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু পারেননি সেই স্ট্র্যাটেজির দোষে। থার্ড রাইখের ভেঙে পড়ার পিছনে রয়েছে সামরিক নীতির ভুল। অবশ্য হিটলারের সামরিক -মাস্টারস্ট্রোকই একসময় নাৎসি জার্মানিকে করে তুলেছিল অপ্রতিরোধ্য। অপূর্ব দক্ষতার সঙ্গে সেই সামরিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন লেখক। 

৫। নাৎসিদের ক্ষমতায় আসা, হিটলারের আগ্রাসন, মুসোলিনির সঙ্গে আঁতাত, পোল্যান্ড ও ফ্রান্স দখল, রাশিয়া আক্রমণ, জাপান আর আমেরিকার যুদ্ধে যোগদান; এ’সব বহু আলোচিত বিষয়। এই বইতে সে’সব সম্বন্ধে সবিস্তারে জানাই যায়। কিন্তু নাৎসিদের আগ্রাসনের মুখে পড়া অন্যান্য দেশের ইতিহাস ঘাঁটলেও বেরিয়ে আসবে চমৎকৃত হওয়ার মত বহু ঘটনা, দুর্দান্ত কিছু চরিত্র। সে'খানেও রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা ও দুঃসাহসের ট্র্যাজিক বহু গল্প। অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, নরওয়ে এবং আরও কত দেশকে দাঁড়াতে হয়েছিল ধ্বংসের মুখে; ইতিহাসের সে'সব জরুরী অংশগুলো এ বইতে উপেক্ষিত হয়নি, আগ্রহী পাঠক হিসেবে সে'টা একটা বড় পাওনা। 

৬। বইয়ের শেষ প্রান্তে এক জায়গায় লেখক হিটলারকে বলেছেন “ম্যাড জিনিয়াস”। সেই ‘ম্যাডনেস’ হিটলারকে টেনে তুলেছিল সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে এবং সেই ম্যাডনেসই আবার হিটলারকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল, রেহাই পায়নি জার্মানিও:। সঙ্গে দুরমুশ করেছিল ইউরোপের একটা বড় অংশকে। সেই ‘জিনিয়াস’কে বইয়ের পাতায় স্পষ্ট ভাবে ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন লেখক। তাঁর ইডিওসিঙ্ক্রেসি, তাঁর পাগলামো, তাঁর মেগালোমেনিয়া, তাঁর পাশবিক চিন্তাভাবনা, তাঁর সামরিক মেধা, তাঁর একগুঁয়েমি আর সর্বোপরি তাঁর বীভৎস পরিকল্পনাগুলো; সব মিলে যে রুবিক কিউব, তা নিখুঁত ভাবে সাজিয়েছেন লেখক। 

৭। হিটলার নিঃসন্দেহে জিনিয়াস। কিন্তু এক জিনিয়াসের শয়তানিতে একটা গোটা দেশ ভেসে যেতে পারে? না। খুনে রাষ্ট্রনেতারা তিলে তিলে গড়ে ওঠেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদতে। তাঁকে গড়ে তোলেন তাঁর রাষ্ট্র। সেই জার্মান রাষ্ট্রের কথা বিশদে লেখা হয়েছে এ বইতে। সবিস্তারে বলা হয়েছে জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা। যথেষ্ট ডেটা দিয়ে মজবুত ভাবে পরিবেশিত সমস্ত যুক্তি দিয়ে দেখানো হয়েছে কী’ভাবে ভার্সেই চুক্তি থেকে ওয়েমার রিপাবলিক হয়ে জার্মানি ভেসে গেছিল নাৎসি  উন্মত্ততায়। এ বই সেই জার্মানি এবং গোটা জার্মান জাতের তিন দশকের বায়োগ্রাফিও বটে। 

৮। যুদ্ধ-চলাকালীন জার্মানিতে খোদ হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচুর চক্রান্তও হয়েছে। সে’সব ‘হাই ট্রিজন’ বিষয়ক রোমহর্ষক সব গল্প রয়েছে এ বইতে। 

৯। নাৎসিদের ডালপালা ছড়ানোর সময় ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকাটা যে হিটলারকে কতটা মদতপুষ্ট করেছে, তা সবিস্তারে বলা হয়েছে। নিজেদের পিঠে আগুনের ফোসকাও দিব্যি হজম করে নিয়েছিল এই দুই দেশ, মেকি শান্তি বজার রাখার অলস লোভে। গায়ে দাউদাউ করে আগুন লাগার পর তারা জেগেছে, কিন্তু ততক্ষণে হিটলার বাঁধনছাড়া। আর এ বইয়ের অনেকটা জুড়ে আছে স্তালিনের রাশিয়া। তারা হিটলারের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলেছে বহুদিন; কিছুটা সমীহ করে আর অনেকটা লোভে। পোল্যান্ড  দখলে স্তালিনের ভূমিকাও কম ভয়াবহ নয়। এ’সব ভাসাভাসা ভাবে সবাই জানেন; কিন্তু এ বইতে 'সুপারপাওয়ার'দের সে’সব ব্যর্থতাই হয়ে উঠেছে টানটান উপন্যাস ও ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডির রসদ। আর সেই টানটান উপন্যাসের মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে দুর্দান্ত কিছু গল্প; যেমন মলোটভের সঙ্গে হিটলারের মোলাকাতের তুখোড় বর্ণনা। পাশাপাশি রয়েছে হিটলার মুসোলিনির ট্র্যাজি-কমিক ধান্দাবাজ আদানপ্রদান ও গোলমেলে বন্ধুত্বের রসালো বিশ্লেষণ।    

মোদ্দা কথাটা হল, এ বই পড়তে হলে ইতিহাসের গুরুগম্ভীর ছাত্র হওয়ার কোনও দরকার নেই। সাধারণ রাজনৈতিক ‘কিউরিওসিটি’ থাকলেই উইলিয়াম শিরার সাহেবের এ বই প্রচুর ভাবনা চিন্তার রসদ জোগাবে। লেখক অতি-খ্রিস্টান এবং বইয়ের কিছু জায়গায় তাঁর হোমোসেক্সুয়ালিটির প্রতি বীতরাগ বিশ্রী ভাবে ফুটে উঠেছে বটে। কিন্তু বইয়ের মূল বক্তব্য এবং রিসার্চ সম্ভবত তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।  

বইটা কয়েকদিন আগে শেষ করেছি। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে প্রচুর ভাবনাচিন্তা মাথায় ভিড় করছে। সে ভাবনাচিন্তাগুলোর অন্যের তেমন কাজে না লাগুক, নিজের রেফারেন্সের স্বার্থেই লিখে রাখা জরুরী। 

ক। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং তাদের মতবাদের প্রতি নিজেকে/নিজেদের অন্ধভাবে সঁপে দেওয়া যে কী নিদারুণ, তার জ্বলন্ত উদাহরণ নাৎসি জার্মানি। ক্ষমতায় যিনি রয়েছেন তাঁকে নিন্দের তোপের মুখে ফেলাটা বেঠিক তো নয়ই, বরং সে'টাই কর্তব্য। বিরোধীরা যেমন বিভিন্ন কারণে (হয়ত বা) সমান দোষে দুষ্ট, কিন্তু তবু নিন্দে-মন্দর ধারালো তরবারি মূলত তাক করে রাখতে হবে সরকারের দিকেই। কেন? কারণ যাবতীয় 'রিসোর্স' তাঁদের কবজায়। পুলিশ ,সেনাবাহিনী, সরকারি কোষাগার এবং আইন যাদের হাতে রয়েছে; তাঁদের যদি সমালোচনায় অনীহা দেখা দেয় তা'হলেই বিপদ। আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিন্দে সহ্য করতে হবে বৈকি, আর দেশের প্রধানমন্ত্রীর সহ্য ক্ষমতা হতে হবে আরও বেশি। এমন কী শুধু নিন্দে হজম করেই সরকারের কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে না; তাঁদের আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে যাতে বিরোধী মতবাদগুলো নিশ্চিন্তে ডানা মেলার সুযোগ পায়। সম্ভবত, নাগরিক হিসেবে এ'টাই হওয়া উচিৎ আমাদের মূল দাবী। রাজ্যের তৃণমূল সরকার বা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তাই সবচেয়ে বেশি ক্ষুরধার সমালোচনা শুনতে হবে এবং সবার চেয়ে বেশি দায়ভার গ্রহণ করতে হবে; সে'টাই স্বাভাবিক। এবং বিজেপির বদলে যদি কংগ্রেস বা তৃণমূলের বদলে সিপিএম হলেও দাবীটা যেন একই থাকে। 

খ। এক দাগে গোটা জাতকে দাগিয়ে দেওয়া বেশ বিপদজনক। এ অভ্যাস আমাদের সকলের আছে। বাঙালির কোনও অংশে কম নেই। সেই অভ্যাস থেকে তৈরি হয় বিশ্রী হাসি-ঠাট্টা যা অতি সহজেই 'জেনারালাইজ' করে আঘাত হানে বিভিন্ন জাত/ধর্ম/ভাষার মানুষের প্রতি। আর সেই হাসি-ঠাট্টার  আড়ালে বাড়তে থাকে বীতরাগ, চেগে ওঠে ঘেন্না। সেই জাতিগত ঘেন্না যে কী ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই থার্ড রাইখ।

গ। হিটলার এবং ফাইনাল সলিউশনের মত হিংস্র উন্মাদনার ব্যাপারে জানলে বা শুনলে আজ আমাদের গা-ঘিনঘিন করে ওঠে, স্বাভাবিক। কিন্তু পাশাপাশি গা শিউরে ওঠে এ'টা ভাবলে যে ভাগ্যিস হিটলার যুদ্ধে হেরেছিলেন তাই তাঁর শয়তানিগুলো গোটা বিশ্বের সামনে প্রকট হয়েছিল। কতশত হিটলার হয়ত যুদ্ধে জিতে নিজেদের কুকর্মগুলোর ওপর দিব্যি পালিশ মেরে সুখে থেকেছেন/আছেন। এ'টা ভাবলেই হাত পা ঠাণ্ডা হওয়ার যোগাড় হয়। 

আরও বেশ কিছু এলোমেলো ভাবনা চিন্তা লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সহজ ভাষায় 'বইটা পড়ে দেখুন' বলার বদলে এতটা পাঁয়তারা কষে এমনিতেই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি বলে মনে হচ্ছে, লেখাটা অহেতুক লম্বা না হয় নাই করলাম।  

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু