Skip to main content

আলুসেদ্ধ-রাইখ


- বুঝলে ভায়া রুমমেট, শুকনোলঙ্কা ভাজা দিয়ে আলুসেদ্ধ মাখব আজ।

- রাজভোগ বলতে তো ওই মন্টুদা। যেদিনই রান্নাঘরে ঢুকবে সে'দিনই কপালে শুধু ডাল, ওমলেট। ঝোলভাত খেতে হলে সেই আমাকেই কড়াই ঠেলতে হবে।

- অমন নেগেটিভলি প্যানপ্যান কোরো না তো। এ আলুসেদ্ধর গন্ধ অমরাবতীতে পৌঁছলে ইন্দ্র সাদাহাতি হাঁকিয়ে নেমে আসত। তুলতুলে মাখা, ঘি আর সর্ষের তেল মিশিয়ে। আর তারপর ভাজা শুকনো লঙ্কার পাঞ্চ। এক খাবলা লালচে হলুদ রঙের ড্যালা থালার পাশে থাকলে রুইমাছের দিকেও তাকাতে ইচ্ছে করবে না।

- আমার তো কাঁচালঙ্কা পেঁয়াজ দিয়ে মাখা আলুসেদ্ধই ভালো লাগে। অত শুকনো লঙ্কার ঝাল হজম হয়না।

- আইপিএল দেখে দেখে তোমার কলজে উইক হয়ে গেছে ভাই। রমেশ সিপ্পির সিনেমা দ্যাখো, ঝাল অ্যাবসর্ব করার ক্যাপাসিটি বাড়বে।

- অন্তত ডিমের ঝোল করো না মন্টুদা। প্লীজ। মনের সুখে দু'টো ভাত মেখে খাওয়া যাবে।

- প্র‍্যাক্টিসিং ব্র‍্যাহ্মিন আমি। পাঁঠা ছাড়া ঝোল রাঁধব? বলো কী! তেন্ডুলকারকে দিয়ে লুডো খেলাবে ভাই?

- তুমি পলিটিক্সে নামো, বুঝলে।

- আমি নামলে হে, সব্বাইকে শায়েস্তা করব ফেলতাম। ব্রিগেডে সভা ডাকতাম, বুঝলে? ব্রিগেডে। ভীড়ের প্রত্যেকের জন্য ইয়াব্বড় এক থালা ভাত, পেঁয়াজ দেওয়া মুসুর ডাল আর আমার স্পেশ্যাল আলুসেদ্ধ। পাতের শেষে তালমিছরি, পেট ঠাণ্ডা রাখার জন্য।

- অন্যেরা বিরয়ানি খাওয়ায়, তোমার দল আলুসেদ্ধ-ভাত খাওয়ালে লাটে উঠবে যে।

- তোমার মুণ্ডু। বাতেলা আর ওই ডালডা বিরিয়ানি, দুইই গুরুপাক। আর নিজের হাত মাখা বিরিয়ানি, তা'তে কী পরিমাণে  দরদ রয়েছে ভেবেছ?  লোকে 'যুদ্ধ নয় আলুসেদ্ধ চাই' কোটেশন বুকে উল্কি করাত। সে আলুসেদ্ধ মাখার ইউটিউব ভিডিওই হত আমার ম্যানিফেস্টো; পাইড পাইপার হতে সময় লাগত না। পাঁচ বছরে চীফমিনিস্টার, সাতে প্রাইম। এ মখমলে আলুসেদ্ধর গুণে সবাই সাবমিট করত হে। সবাই পায়ের সামনে "যেয়াজ্ঞা" বলে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ত। সবাই। জিরো অপোজিশন।

- আলুসেদ্ধ ফ্যাসিস্ট?

- এফেক্টিভ। ভেবে দ্যাখো, পাকিস্তানের উজির-এ-আজম যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।  থমথমে পরিস্থিতি, যুদ্ধ রুখতে শেষ চেষ্টা; শিমলায় মিটিং। টেবিলের ও'পাশে যুদ্ধংদেহী প্রাইমমিনিস্টার গজরগজর করে চলেছেন, এ পাশে আমি একগাল হাসি নিয়ে স্যান্ডো গেঞ্জি আর পাজামা পরে অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় আলুসেদ্ধ মেখে চলেছি। ঘর জুড়ে ভাজাশুকনোলঙ্কার সুবাস। এই তোমায় বলে রাখলাম আমি, সবাই তোমার মত পাষাণ নয়; আধঘণ্টার মাথায় পাকিস্তানি প্রাইমমিনিস্টার যদি 'সরি স্যার, কিছু মনে করেননি তো"? বলে রণেভঙ্গ না দেয়, তবে আমার নাম মন্টু মিত্র নয়। সিকিউরিটি কাউন্সিলের সীটে আমার জন্য সবসময় রুমাল পাতা থাকবে, সে'খান পর্যন্ত পৌঁছে দেবে আমার আলুসেদ্ধ মাখা। সমস্তটাই দরদের ব্যাপার ভাই, অনেকটা গানের মত।

- বাহ্,  আলুসেদ্ধ রাইখ।

- ঠাট্টা করছ?

- নাহ্, ভাবছি আজকের রান্নাটাও আমিই করি মন্টুদা। আমার হাতের ডিমের ঝোল তোমার মুখে রুচবে তো?

- অমন করে বলছ, না করি কী করে। আমি দরদের কাঙাল যে। ব্রিগেডে আমার আলুসেদ্ধর পাশাপাশি লাঞ্চের বাক্সে তোমার ডিমের ঝোলও রাখব ভায়া। রাজ্যে হোম মিনিস্ট্রিটা তোমার। সেন্টারে গেলে ডিফেন্স। পোর্টফোলিও পছন্দ হয়েছে?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু