Skip to main content

ভেক


- অত কী ভাবছেন?

- কে?

- আমি যেই হই, এই খাদের ধারে দাঁড়িয়ে অত চিন্তাভাবনায় কাজ কী দাদা। মাঝরাত্তিরে এসেছেন সুইসাইড পয়েন্টে। ঠিক যেমনভাবে প্রতি মাসে জনা তিনেক করে আসে। তবে এত ভাবনাচিন্তা করছেন মানে গোলমাল আছে। অর্থাৎ ইচ্ছে আছে কিন্তু কনফিডেন্স নেই।

- ফালতু জ্ঞান ঝাড়া বন্ধ করে কেটে পড়ুন। আমি সুইসাইড করি, এ'খানে বসে সাপলুডো খেলি বা ঘুড়ি ওড়াই; সে'টা একান্তই আমার পার্সোনাল ব্যাপার।

- ঝাঁপের পর আর পার্সোনাল বলে কিছু থাকে কি?

- আমি ঝাঁপ দি আর না দি; তা'তে আপনার কিছু বিগড়োবার কোনো কারণ নেই। এতরাত্রে আপনি এ'খানে কী করছেন?  নিশ্চয়ই সুইসাইড করতেই এসেছেন? তা'হলে বিনাবাক্যব্যয়ে এগিয়ে যান। ঝাঁপ দিন।

- গত পরশুই ওই ঝাঁপ দেওয়ার কাজটা আমি সেরে রেখেছি,  বুঝলেন?

- ইয়ার্কি করছেন?

- মড়া হতে পারি। হাড়বজ্জাত নই। এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ফচকেমো করব না। ওহ আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই। আমি আনন্দ পাল। ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট; ছিলাম। কাজকর্ম ভালোই চলছিল, শুধু প্রেমটা ঝুলে যাওয়ায় এ কাজটা করে ফেলি। জাস্ট উত্তেজনার বশে ব্যাপারটা ঘটে গেছিল, জানেন।

- তো আপনি তা'হলে ভূত? আনন্দবাবু?

- আজ্ঞে। এমন দুম করে উদয় হলাম বলে কিছু মনে করবেন না প্লীজ। আচ্ছা আপনার নামটা?

- আমি উদয়ন সেন।

- সুইসাইডের জন্যই এসেছিলেন, তাই না?

- চাকরীটা এমন দুম করে...। বাড়িতে বাবা, মা, বৌ, দুই ছেলে; এ'দিকে বাজারে প্রচুর ধারদেনা। ভাবছিলাম, পালিয়ে যাওয়াটাই সুবিধের ব্যাপার হবে।

- তেমনটা ভেবেই আমিও এসেছিলাম। লাফও দিয়েছি, তবে মরে বড্ড আফশোস হচ্ছে উদয়নবাবু। ইনফ্যাক্ট নীচে যাদের সঙ্গে আলাপ হল, তাঁরা কেউই তেমন নিশ্চিন্দিতে নেই।

- নীচে...নীচে তেনাদের...মানে আপনাদের জমায়েত?

- সরগরম একেবারে।

- ঝাঁপ দিয়েও তা'হলে রেহাই নেই আনন্দবাবু?

- কাঁচকলা। যে তিমিরে সেই তিমিরেই।

***

উদয়ন সেন যখন সুইসাইড পয়েন্টের দুর্বিষহ অন্ধকার পেরিয়ে বড় রাস্তার ঘোলাটে আলোয় মিলিয়ে গেলেন তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আনন্দ পাল। সুইসাইড পয়েন্টের ফাঁকা বেঞ্চিটায় গা এলিয়ে দিলেন। এখনও সে'দিনটার কথা মনে করে গা শিউরে ওঠে তার। এমনভাবেই শেষ মুহূর্তে নিজেকে খাদের ধার থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি, আজ থেকে বছরখানেক আগে। উদয়নবাবুর মতই সুইসাইড পয়েন্টের ঘোলাটে অন্ধকার ছেড়ে বড় রাস্তার আলোয় গিয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেই ফিরে আসতে পারা উদয়ন জানেন যে আত্মহত্যার মুখে মানুষকে একবার সামান্য হোঁচটের মুখে দাঁড় করালেই তার সিদ্ধান্ত সমূলে কেঁপে উঠবেই। এ'ভাবেই অন্তত শ'খানেক মানুষকে আত্মহত্যার চরম সিদ্ধান্ত থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। সবাইকে আটকানো সম্ভব না হলেও কিছু মানুষকে রুখে দেওয়া যায়; আজ যে'ভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরানো গেল উদয়ন সেনকে। শুধু এ কাজের জন্য তাঁকে ভূত সাজতে হয়; যাক গে, সে'টুকু করাই যায়।

একটা প্রবল পরিতৃপ্তি অনুভব করছিলেন আনন্দ পাল।

***

রাস্তার আলোয় গায়ে এসে পড়তেই মিলিয়ে গেলেন উদয়ন সেন।  আর মিলিয়ে যেতেই তাঁর ছায়াছায়া আকৃতিটা ভাসতে ভাসতে নেমে গেল খাদের নীচে; খাদের মাথাতেই এ অঞ্চলের কুখ্যাত সুইসাইড পয়েন্ট। সে'খানে একটা কাঠের বেঞ্চি যার ওপর ছায়ার মত এলিয়ে বসে রয়েছে আনন্দ পাল। বেচারা আনন্দ আজও টের পায়না যে সে সত্যিই ভূত। সত্যিই সে আত্মহত্যা করতে পেরেছিল। খাদের নীচে যে'খানে ভূতের আড্ডা; সে'খানে আনন্দ পালের আত্মা কিছুতেই নেমে আসতে পারেনি। সে সেই বেঞ্চিতেই আটকে। অন্য ভূতেরা আনন্দকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে কিন্তু উদয়নের মনটা বড্ড নরম৷ বারবার তিনি ওপরে উঠে আসেন আনন্দকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু মনের কথা বলার আগেই আনন্দ তাঁকে জ্যান্ত ঠাউরে সুইসাইড আটকাতে উদ্যত হয়। এবং তার জন্য সে'আবার ভূতের ভেক ধরার চেষ্টা করে। হাস্যকর অথচ হৃদয়বিদারক।

উদয়ন বার বার উঠে আসে আনন্দকে বোঝাতে যে এ ভেক কতটা অদরকারী,  উদয়ন চায় তাকে সসম্মানে নীচে নিয়ে যেতে। অথচ আজও সাহস করে আনন্দকে সত্যি কথাটা বলা হয় উঠল না।

Comments

Kajori Patra said…
Internet er oligoli dhore khujte khujte apnar blog'e eshe porlam. Shob kota bhishon bhalo lagche ar pore felchi lockdown er modhhei. Bhalo thakben.
Subrata Kundu said…
APNAR GOLPO GULI KHUB SUNDAR DADA, ADSENSE APPRUVAL NENNI KENO AMAKE REPLY DEBEN PLEASE AT KUNDU8299@GMAIL.COM

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু