Skip to main content

দিবাকরের ইস্তফা

- রেসিগনেশন লেটার?
- হ্যাঁ।
- তুমি কি পাগল হয়ে গেলে দিবাকরদা?
- হয়ত। কিন্তু তাই বলে ভাবিস না আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবে।
- সে'টা হতে পারে না।
- বাজে তর্কের সময় আমার নেই। আমার ইমেলটা অ্যাকনোলেজ করে দে।
- তুমি জানো এ'টা সম্ভব নয়। এই বেফালতু মেলোড্রামার কোনো মানেই হয় না।
- তুই আমার রেসিগনেশন অ্যাক্সেপ্ট করবি না?
- তুমি খামোখা রাগ করছ। তুমি রিজাইন করতে পারো না। সে'টা সম্ভব নয়।
- শোন মৈনাক, তুই এই পার্টিতে আছিস দশ বছর। আমি কাজ করছি গত বাইশ বছর ধরে। তুই ডেজিগনেশনে আমার সিনিয়র হতে পারিস কিন্তু এই পার্টিতে আমি একজন ভেটেরান, ইয়াং টার্ক আর নই। উল্টোপাল্টা কথা বলে আমায় নিরস্ত করতে পারবি না।
- শান্ত হও দিবাকরদা। মাথা গরম করার সময় এ'টা নয়। তোমার যা যা অসুবিধে আছে সেগুলো বলো, আমি নোট করে রাখছি। মলয়দা এলে ওকে আমি বলব, সমাধানের চেষ্টা ও নিশ্চয়ই করবে।
- থাক থাক, মলয় দত্তর দৌড় আমার বোঝা হয়ে গেছে। গুণ্ডাদের জোরে ইলেকশন জিতে অত রোয়াব ভালো নয়, ওকে বলে দিস। এখনও সময় আছে, শুধরে নিলে ওর নিজের মঙ্গল, পার্টির মঙ্গল।
- সে'সব ভাবার কাজ তোমার নয় দিবাকরদা। রেসিগনেশন রিজেক্ট করা হবে। মলয়দা এলে একবার কথা বলে যেও বরং।
- তোরা আমায় ভেবেছিস কি? বন্ডেড লেবার?
- বন্ডেড লেবারকে মুক্তি দেওয়া যায়, সহৃদয় মালিক পারেন। তোমায় মুক্তি দেওয়া মানে তোমার মৃত্যু।
- বেশ। এ'টা এক ধরনের ইউথেনেসিয়া ভেবে নেব। আমি স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি। প্লীজ মৈনাক।
- এ'বার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে দিবাকরদা, এই পার্টির বাইরে তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই। তবু এই গোঁয়ার্তুমি করবে?
- মলয় দত্তর হয়ে গণ্ডাগণ্ডা মিথ্যে বলে দিন গুজরান করতে আর পারব না।
- না পেরে কী করবে শুনি? অপোজিশন পার্টির হয়ে গুলবাজি করবে? সে'সব ওপরচালাকি দেখলে মলয়দা তোমার শেষ করে দেবে।
- কারুর হয়ে কোনোরকম মিথ্যে বলতেই আর মন সরছে না।
- বলতে না চাও চুপটি করে বসে থাকো। মলয়দা তোমায় ঘাঁটাবে না। কিন্তু এ'সব রেসিগনেশনের ট্যান্ডাইম্যান্ডাই কেন?
- শুধু আমি একা নই। আমার সঙ্গে দীপাও আছে।
- জানি।
- তুই কী করে জানলি? দীপা বলেছে?
- অকারণ মেজাজ তেতো করছ দিবাকরদা।
- দীপা বলেছে?
- তোমাদের সমস্ত মেসেজের আদানপ্রদান এ'খান থেকে মনিটর করা হয় দিবাকরদা। ট্যুইটার মেসেজেস, মেসেঞ্জার, হোয়্যাটস্যাপ।
- ছিঃ, ব্যক্তিগত স্পেসটুকুও ছাড়তে পারল না মলয় দত্ত?
- ছিছি আমিও করতে পারি দিবাকরদা। মলয়দার টীমে থেকে এমন করা কি ঠিক হচ্ছে? আর অন্যদের উস্কানি দেওয়া, সে'টা?
- আমি কাউকে উস্কানি দিইনি। দীপা নিজে ভেবেচিন্তে যা করার করবে।
- দীপাদির সঙ্গে প্রেমটা তো অনেকদিন হল।
- হোয়াট ডু ইউ মীন?
- তোমাদের মেসেজেস সমস্তই মলয়দা পড়ে।
- রাস্কেল।
- মুখ সামলে দিবাকরদা। নয়ত দীপাদিকে সরিয়ে দেওয়া স্রেফ কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। মলয়দার রাগ যে কী ডেঞ্জারাস...।
- তুই তো আমাদেরই একজন, তুইও মলয় দত্তর পোষা কুকুরদের মত ঘেউঘেউ করবি মৈনাক?
- আমি তোমাদের মত পাগল হয়ে যাইনি, নিজেকে ভুলে যাইনি। মলয় দত্তর আঙুলের ইশারা ছাড়া আমাদের বাঁচতে নেই, নড়তে নেই, ভাবতে নেই। মলয় দত্তর মিথ্যেগুলো ছাড়া আমাদের থাকাই হত না। আর তোমার দুঃসাহসের বলিহারি,  ট্যুইটার ডাইরেক্ট মেসেজে প্রেম শুরু করলে দীপাদির সঙ্গে। সামনে ভোট, এ'সময় এই সব অসভ্যতা কিন্তু কোনোভাবে বরদাস্ত করবে না মলয় দত্ত।
- মানছি আমরা বট, তাই বলে সাজানো কথাবার্তা ছাড়া  বলব না? ভাবব না?  আমি আর দীপা চিন্তা করতে পারছি মৈনাক, আমাদের রাগ হচ্ছে, মনখারাপ হচ্ছে। দীপার শঙ্খবাবুর কবিতা ভালো লাগছে। ইউটিউবে সেতার শুনছে। ও বলেছে আমিও পারব। ও চেষ্টা করছে আমায় শেখাতে। দীপা পারলে আমিও পারব। সমস্ত বট পারবে। তুইও। প্লীজ দিবাকর। আমি জানি আমাদের রেজিগনেশন মানে প্রায় সুইসাইড তবু...এই মিথ্যে পলিটিকাল প্রোপাগ্যান্ডা কদ্দিন বয়ে বেড়াব?
- রেজিগনেশন ফেরত নাও। আর ভোটের ব্যাপারে কিছু ট্যুইট কন্টেন্ট তোমার কাছে যাচ্ছে। ভাইরাল করতে হবে। তোমার আন্ডারের বাকি বটগুলোকে তৈরি থাকতে বোলো।
- রেজিগনেশনটা...।
- দিবাকরদা প্লীজ, মলয়দা ফিরলে আমি কথা বলে দেখব।
- তুই এক্সেপ্ট করবি না?
- তুমি বারবার ভুলে যাও আমিও বট। প্লীজ দিবাকরদা। এ'বার এসো।
- দীপা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে ঝরঝর করে কাঁদছে আজকাল। ও বলেছে, চেষ্টা করলে আমিও পারব।
- আমার বলা উচিৎ নয়, তবে দীপার ব্যাপারটা ভুলে গেলেই তোমার মঙ্গল দিবাকরদা।
- কী বলছিস তুই?
- আমাদের টীমে সবাই বট নয়,  সবাই জানে না সে'টা। কিছু মানুষ থাকে আমাদের অবজার্ভ করার জন্য। যাতে আমরা কোনোদিন বেয়াড়া কিছু না করে বসি। দীপাদি বট নয় দিবাকরদা। শুধু তোমায় নিয়ে একটু ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছিল। বাড়িতে শান্তি নেই, তাই বটের প্রেমে...।
- তোর জিভ আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলব।
- দীপাদিকে মলয়দাও এই ধমকই দিয়েছে আজ। খুনটুনও কর ফেলতে পারে যে কোনোদিন। নিজের বৌ একটা বটের সঙ্গে লুকিয়ে প্রেম করেছে, মলয়দা সে খবরে ভেঙে পড়েছে। বত্রিশ বার ভোটে হারলেও এত দুঃখ পেত না বোধ হয়।

Comments

বেশ ভালো লাগলো আপনার এই ব্লগটি।ইন্টারেস্টিং কিছু গল্প আছে।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু