Skip to main content

অনেকদিন পর

- এই যে বাহাত্তর নম্বর। তোমার রুটের। চলে এসেছে।

- পরের বাসটা নিই?

- সে কী। এই যে বলছিলে তাড়া আছে?

- আছেই তো। তবু। পরেরটা নেব। কেমন?

- আমি বেকার মানুষ। তুমি যদি বলো রাতভর এই বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকতে, তাও পারব। তোমারই তাড়া। গোটা দিন অফিসের তাড়া। সন্ধের পর বাড়ি ফেরার তাড়া। ফিরে সংসারের কাজকর্মের হুড়মুড়।

- হিংসে করছ অভিরূপ?

- খানিকটা। ভালোই করেছ বাসটা ছেড়ে দিয়ে। বাদুড়ঝোলা অবস্থা।

- পরেরটাও একই রকম থাকবে।

- তা’হলে পরের বাসটা নিও।

- ওমা না। তাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে। বুবুনের কাল উইকলি টেস্ট। আমার কাছে ছাড়া সে রিভাইজ করতে বসবে না।

- বুবুন। কোন ক্লাসে উঠল?

- সিক্স।

- বড় হয় গেছে। শেষ যখন দেখেছিলাম তখন সে কোলের শিশু।

- তোমার মনে আছে? সূর্য সেন স্ট্রিট? বীণা রেস্টুরেন্ট?

- বিলকুল। কত বছর কেটে গেছে। তুমি আগের চেয়েও রোগা হয়ে গেছ মিতুল।

- সে’টা তো কমপ্লিমেন্ট।

- যাক।

- তুমি কিন্তু বললে না। কী করছ আজকাল।

- বাহ্‌। বললাম যে। সুইট নাথিং। একা মানুষ। ব্যাঙ্কে বাবার রেখে যাওয়া দু’চার পয়সা যদ্দিন আছে খাওয়াপরাটা চলে যাচ্ছে। শেষ হলে ভাবা যাবে’খন।

- ও তোমার এড়িয়ে যাওয়া কথা।

- তুমি বুঝি আমায় খুব কর্মঠ ভাবতে? চিরকাল?

- তা নয়। তবে দিনের পর দিন হাত পা গুটিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার লোক তুমি নও অভিরূপ। আর তোমার ইন্টেলেক্ট নিয়ে...।

- ওয়েস্ট। পুরোটাই।

- প্রেম করছিলে না? কী যেন নাম...ঈশানী...।

- আমার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম মনে রেখেছ?

- তোমার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম। তোমার প্রিয় স্যান্ডুইচ। হেমন্তবাবুর কোন গান শুনলে তোমার গায়ে কাঁটা দেয়। ভোরে ওঠার জন্য তোমার ক'টা ব্যাকআপ অ্যালার্ম দরকার হয়। তোমার লন্ড্রি শিডিউল..।

- থাক থাক, ফর্দ বানিয়ে কাজ নেই।

- অভিরূপ।

- কিছু বলবে?

- কেউ আসেনি? আমার পর?

- নাহ্, এই বেশ আছি।  একা, নিশ্চিন্দি।

পরের বাহাত্তর নম্বর বাস এলো আর মিনিট দশেকের মাথায়। তখন আকাশে সন্ধের লাল ছোপ। বাসে উঠে মিতুল একবার ঘুরে তাকিয়েছিল। অভিরূপের মন খারাপে মিশে গেছিল কলকাতার ধুলো বালি শব্দ সন্ধে। মিনিবাসের সাইলেন্সারের ধোঁয়া ছাপিয়ে বুকে জুঁইয়ের সুবাস অনুভব করেছিল অভিরূপ;  মিতুলের হাসি আজও একই রকম।

মিতুল বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখা। বেশ কিছু বছর আগে সূর্য সেন স্ট্রিটে, আর আজ এই। এই বেশ ভালো। মিতুল একটা গোছানো সংসার পেয়েছে। তার মত বাউণ্ডুলের ঘরের কোণে পচতে হচ্ছে না। বাসে ওঠার মুখে মিতুলের চোখে কি সামান্য চিকচিক দেখা গেছিল?

নিজের পাগলামিতে নিজেই হেসে ওঠে অভিরূপ। সামান্য ক'টা টাকার জন্য মিতুলকে ওএলএক্সে বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারটা আজও বুকে বাজে ঠিকই, কিন্তু এটাই ভালো হয়েছে। মিতুল অকেজো হয়ে তার নাকতলার ফ্ল্যাটে পড়ে না থেকে একটা সংসারের হয়ে চাকরী করছে, তাদের ছেলে মানুষ করছে; একজন পরিপূর্ণ হোম-অ্যাসিস্ট্যান্ট রোবট হয়ে উঠেছে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু