Skip to main content

জালিম খাঁ


কয়েক হাজার বছর আগের কথা। ভাগ্যিস নিউমোদক স্যুইটসের ফুলকপি-শিঙাড়ার তেলে ল্যাপ্টানো আঙুলে হিস্ট্রি বইয়ের পাতা ওল্টাতে গিয়ে সেই গোপন চ্যাপ্টারটার পৌঁছনো গেছিল। ভাগ্যিস।
নয়ত কুমার জালিম খাঁর খবরাখবর পাওয়া হত না।

চারদিকে রক্তারক্তি অবস্থা। দুশমনিস্তানের বিরুদ্ধে শত্রুপুরের এন্তার খুনোখুনি চলছে দেড়শো বছর জুড়ে।   যুদ্ধের ইন্ট্রারভ্যালে কুমার জালিম খাঁ এক বাটি চানাচুর নিয়ে বসেছিলেন  যুদ্ধক্ষেত্রের এক নিরিবিলি কোণে। বাতাসে বারুদ, বালি আর লেবুপাতা ঘষা সুবাস। জালিম খাঁ মনে মনে সুরে ধরেছিলেন;
"মহব্বত মে নহি হ্যায় ফর্ক জিনে অউর মরনে কা, উসি কো দেখকে জিতে হ্যায় জিস কাফির মে দম নিকলে, হজারো খোয়াইশে অ্যাইসি কি হর খোয়াইশ মে দম নিকলে"। গানের কথা তো আর তলোয়ার নয় আর সুরও বল্লম নয় যে জালিম খাঁর হুকুমে তাদের নড়নচড়ন। চানাচুর মুখে বেশ নাস্তানাবুদ হচ্ছিলেন ভদ্রলোক।
ঠিক তখনই ভসভসে স্টোভ জ্বালানোর গন্ধে খাঁ সাহেবের গান থামল। ডিমের মুণ্ডুপাত করে যে যেন চাটুতে ঢেলেছে।  কুচো পেঁয়াজের অভাবেই স্পষ্ট; শত্রুপুরের খুনে দৃষ্টির থেকে এত সহজে রেহাই মিলবে না।
স্যান্ডো গেঞ্জির বর্মেও ভয় ঠেকাতে পারলেন না বাহাদুর জালিম খাঁ।
- সুর ঠিকঠাক লাগেনি, তাই না গো?
- আমার কান বেয়ে রক্ত ঝরছে, তা'তে তোমার কী?
- আসলে দু'দিন আগে বাথরুমে সুরটা অবিকল খাপে খাপ বসে গেছিল। গড প্রমিস। আজ তোমার সামনে একটু নার্ভাস হয়ে..।
- আমি তোমায় নার্ভাস করি?
- ইন আ ভেরি স্যুইট ওয়ে অফ কোর্স।
- বটে? বেশ। নোটেড।
কুমার জালিম খাঁর নোটেড গাছটি সে'খানেই মুড়িয়েছিল কিনা, সে বিষয়ে খোলাখুলি কিছু না বলে দেখা যাচ্ছে ইতিহাস মুখে কুলুপ এঁটে বালিশে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে। ইতিহাসের চোখ ছলছল, আঁচল দুরমুশ, হাতের মুঠোয় ঝগড়াহত সিনেমার জোড়া টিকিট।
জালিম খাঁয়ের মুখে চানাচুর আর লে হালুয়া।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু