Skip to main content

মুখোমুখি বসিবার

- এক্সকিউজ মী!

- আমায়? আমায় বলছেন কিছু?

- আরে ক'টা লোক আছে এখন মেট্রোতে?

- অদ্ভুত। তাই তো। এই মাত্র ভিড় ছিল। এখন শুধু আপনি আর আমি।  স্ট্রেঞ্জ। 

- খবরের কাগজে মুখ গুঁজে থাকলে ওই হবে। ভিড়  আচমকা গায়েব। কামরায় শুধু আমরা দু'জনে। আর সমস্যাটা সে'খানেই...। 

- ওহ মাই গড! 

- যাক, ধরতে পেরেছেন তা'হলে!

- অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়! 

- নয়ত আপনাকে ডাকলাম কেন বলুন!। 

- আপনি...আপনি অবিকল আমার মত।

- অথবা আপনি অবিকল আমার মত। 

- আমার দু'জনেই...। 

- সেম টু সেম। 

- ভাবা যায়?

- দশ মিনিট আগেও ভাবতে পারতাম না । কিন্তু এখন স্পষ্ট দেখতে পারছি। 

- অবিকল এক চেহারা। শুধু তাই নয়। একই পোশাক। একই চশমার ফ্রেম। আপনার গাল দেখে মনে হচ্ছে দাড়ি দু'দিন আগে কামিয়েছেন। 

- পরশু সকালে। করেক্ট। আটটা নাগাদ। 

- একদম তাই। গত পরশু সকাল আটটা নাগাদ। ভুল রেজার চালানোয় থুতনির কাছের কাটা দাগটা এখনও টাটকা আমার চিবুকে। 

- আমারই মত। আর আপনার বুকপকেটে ডালের ছিটে। 

- আপনার বুকপকেটের মতই । তাড়াহুড়োয় লাঞ্চ করতে গিয়ে...। 

- এগজ্যাক্টলি। তা'হলে কী বুঝছেন?

- দাঁড়ান। একটু ভেবে উঠতে দিন...মেট্রোটা কালীঘাট পেরোতেই...। বিস্ফোরণ। 

- ওহ হো!। মনে পড়েছে। ঠিক। বিস্ফোরণ। তবে কালীঘাট পেরোনোর পরে নয়, কালীঘাট ঢোকার মুখে। 

- না না, স্পষ্ট মনে আছে। কালীঘাট পেরোনোর পর। 

- ধুর। তা হবে কী করে? আমি রোজ সন্ধেবেলা টালিগঞ্জ থেকে চাঁদনী চক ফিরে যাই, কালীঘাটের ওপর দিয়ে। 

- এই সেরেছে। এ'টা তো মিলল না। আমি ফিরি কালীঘাটের ওপর দিয়েই তবে চাঁদনী চৌক  থেকে কালীঘাট। রিভার্স ডাইরেকশন।  

- লে হালুয়া! তা'হলে আমরা এক নই, আর আমাদের মেট্রো ট্রেন দু'টোও আলাদা। 

- মহামুশকিল। অথচ বাকি সব মিলে যাচ্ছে। আর দু'টো মেট্রোয় একই সময়ে বিস্ফোরণ! এত বড় কোইন্সিডেন্স? 

- বিস্ফোরণ বলে বিস্ফোরণ! আরডিএক্সে কাঁপিয়ে দিয়েছে মাইরি। 

- আরডিএক্স?

- টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিতে আপনি আরডিএক্সের নাম শোনেননি? টেররিস্টরা শুনলে কষ্ট পাবে। 

- টেররিস্টরা আরডিএক্স ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটায়? মানুষ মারতে?

- অবভিয়াসলি। হাফ কিলো আরডিএক্সে শুনেছি খান চারেক পাড়া নিকেশ হয়ে যেতে পারে। 

- গুলিয়ে যাচ্ছে মশাই। আরডিএক্সের নাম অবশ্যই শুনেছি। কিন্তু ও জিনিস তো আমরা লুচির পর খাই; মিনিমাম দেড়বাটি। মর্নিং ডেজার্ট আর কী। তবে আরডিএক্স পচে গেলে একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটে বটে...। 

- আরডিএক্স ডেজার্ট? গুল দেওয়ার একটা লিমিট থাকবে তো? 

- ওহ হো। গুল নয় স্যর। গুল নয়। এ'বার স্পষ্ট হচ্ছে ব্যাপারটা। 

- আপনি আরডিএক্স খান এ'টা আমায় বিশ্বাস করতে হবে?

- আলবাত। জলের মত স্পষ্ট তো। আমি আপনি একই তবে আমাদের পৃথিবী আলাদা। সমস্তই এক, শুধু পৃথিবী আলাদা। আর স্রেফ প্যারালালই নয়। কন্ট্রাস্টিং অর্থাৎ দু'টো দুনিয়া বিপরীত দিকে দৌড়চ্ছে । আপনার মেট্রোর রুট আমার উলটো। খেয়াল করে দেখুন আপনার দাড়ি কাটতে গিয়ে কেটেছে থুতনির ডান দিক, আমার ঘা বাঁ দিক। 

- বুক পকেটের দাগ যে একই দিকে। 

- আপনি কোন ডাল খেয়েছেন?

- আমি? মুসুরি। 

- আমি মুগ। 

- প্যারালাল ওয়ার্ল্ড?

- ওই যে বললাম জলের মত। আমার দুনিয়ায় আমিই আপনি। আপনার দুনিয়ায় আপনিই আমি। 

- বড্ড ঘোড়েল। তা ভিড় মেট্রোয় সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর কী হল?

- অত্যন্ত সরল! বিস্ফোরণের চোটে আমাদের দু'টো দুনিয়া ওয়ার্ম হোলে দলা পাকিয়ে গেল। এই আমি আর আপনি এখন মুখোমুখি। 

- আর আপনার পৃথিবীতে সবাই লুচির পর বাটি বাটি আরডিএক্স সাঁটায়? 

- আরডিএক্স নিয়ে কবিতা লিখতে লিখতে আমাদের কবিরা কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছেন মশাই। রোম্যান্সের নদী বয়ে চলেছে আরডিএক্স নিয়ে। 

- তাহলে আপনাদের টেররিস্টরা বিস্ফোরণ ঘটান কী দিয়ে?

- পচা মিহিদানা, অফ কোর্স। দেড়শ গ্রাম পচা মিহিদানা চার্জ করে আমাদের নবালিতা জঙ্গি গোষ্ঠীরা একটা ট্রেন উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু