Skip to main content

বটু গোয়েন্দা ও দুর্গা

-   তুই বটু ? বটু গোয়েন্দা ?

-   আ...আ...আ...

-   কি আ্‌ আ করছিস র‍্যা? চিনতে পারছিস না নাকি ?

-   আ...আ...আ...

-   কি রে? অমন করছিস কেন? মৃগীতে ধরেছে নাকি ?

-   আ...আ...আপনি দেবী দুউউউউউউউউ...

-   দুয়ো দুয়ো। দুউউউউ কি করছিস...হ্যাঁ রে হ্যাঁ আমিই দুর্গা...

-   দশভুউউউউউউ...

-   অহ...যত বাড়াবাড়ি তোদের। হ্যাঁ হ্যাঁ। দশভুজা। এই দশ খানা হাত ড্যাং ড্যাং করে তোর সামনে নাচাচ্ছি...তাতেও বিশ্বাস হচ্ছে না ?

-   ইয়ে...ঠিক ভক্তি জাগছে না দেবী...কেমন ভুতের ভয় করছে!

-   তা তো হবেই। মাটির মূর্তির দশ হাত দেখতে বেড়ে। কিন্তু সত্যিই দশ হাত নিয়ে কেউ চোখের সামনে এলে বিটকেল মনে হবে বই কি...তোর দোষ নেই বাপ।

-   আজ্ঞে, আমি বোধ হয় স্বপ্ন দেখছি, তাই না মা?

-   আমি তোর স্বপ্নে আসবো না তো কি তোর ড্রয়িং রুমে এসে কুচো নিমকি খাব রে পাগল ছেলে। তা হ্যাঁ রে, তুই নাকি গোয়েন্দা, তোর চেহারায় গোয়েন্দা গোছের জেল্লা নেই কেন ?

-   চেহারা ? ইয়ে, ওই ভুঁড়িটির দিকে নজর দেবেন না দেবী। ওটিই আমার ছদ্মবেশ। ভুঁড়ি আর সাড়ে পাঁচ ফুট কম্বিনেশনের গুনেই ক্রিমিনালরা আমায় নিরীহ বলে পাত্তা দেয় না। আমি ঝড়ে বক মেরে বেরিয়ে যাই। এক দিক থেকে ওটিই আমার ট্রেড সিক্রেট মা। তা মা, আমার স্বপ্নে কি মনে করে ?

-   কেস এনেছি।

-   আ...আ...আ...

-   আবার তোতলায়...

-   আপনি আমার জন্যে কেস এনেছেন মা ? মা! মা গো!

-   সাঙ্ঘাতিক এক কেস। পারবি বাবা বটু ? তোর এই মা’কে একটু সাহায্য করতে ? পারবি ?

-   অফ কোর্স। ভদ্রেশ্বেরের লাহা-বাড়ির সিরিয়াল চালকুমড়ো চুরির কেসটা যে কি দুর্দান্ত ভাবে সল্ভ করেছি সেটা জানলে আপনার আমার কেপিবিলিটি নিয়ে কোনও সন্দেহই থাকতো না ম্যাডাম...থুড়ি মা!

-   তাই তো তোর কাছে এসেছি বাবা বটু।

-   তা কেসটা কিসের মা ?

-   চুরির! ডাকাতি বলা ভালো।

-   কি চুরি গেছে  মা?

-   আমার ভারী আদরের ধন চুরি গেছে বাবা বটু।

-   তোমার চোখে জল মা? কি হারিয়েছ তুমি ?

-   আমার সবচেয়ে প্রিয় আভরণটুকু।

-   কি জিনিষ মা ? কে চুরি করেছে ?

-   কাশ ফুল, সে ফুল আর আমার নেই বাবা বটু। চুরি গেছে।

-   কাশ ফুল চুরি গেছে বলে তোমার এত কান্না মা? কে করেছে চুরি মা ? কার এত সাহস ? আর কাশ ফুল কি চুরি হয়?

-   ফুলের প্রতি সম্পূর্ণ অধিকার; সেই অধিকার চুরি গেছে বাবা বটু। কাশ ফুল যে আর আমার নেই...

-   কেঁদো না মা। আমার খুলে বলো। আমি নোটবুকে নোট করে নি। কে করলে চুরি?

-   চুরি করেছে দুর্গা।

-   কে?

-   সে এক অন্য দুর্গা। ভারী বেয়াদপ পুচকে একটা মেয়ে। ভাইয়ের হাত ধরে কাশ বনের মধ্যে দিয়ে এমন সাঙ্ঘাতিক দৌড় সে লাগালে ট্রেন দেখবে বলে, যে কাশ ফুল আর আমার নামে রইলে না... কাশ ফুলের স্নেহ ওই ছোট্ট দুর্গার সাথে জড়িয়ে গেছে..কি ভাবে ফেরত পাব বাবা বটু ? আমি যে কুল পাইনে কোন।  

বটু গোয়েন্দা ভাবতেই পারেনি যে এমন শাঁসালো মক্কেলের কেস; এমন অবলীলায় ফিরিয়ে দেওয়ার সৎ সাহস তার কলজেতে আছে।  

Comments

Anonymous said…
daron likhechen.....simply fatafati.
rags said…
janina ki bolbo....bhasha ashchena....jeta asche ta holo ekta koshto r adbhut bhalo laga misrito ek anubhuti.....anirbachoniyo!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু