Sunday, August 10, 2014

তুকতাক

ট্রিগার টিপলেন অনিল। সঙ্গে সঙ্গে মেঘলার বুক থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত।
-   যন্ত্রণা হচ্ছে মেঘলা ?
-   সোজা লাংসে এ মনে হচ্ছে। অমানুষিক যন্ত্রণা। রিভলভারে টিপ তোমার এমন শার্প তা তো আগে জানতাম না অনিল ?
-   তলে তলে তুমি যে বিপিনের সঙ্গে এতটা এগিয়ে গেছিলে সেটাও তো এর আগে জানতে পারিনি।
-   যাক। শোধ বোধ তাহলে।
-   ভীষণ ছটফট করছ।
-   মনে হচ্ছে বুক ফেটে যাচ্ছে।
-   ফর এ চেঞ্জ, কথাটা ফিগার অফ স্পিচ নয়। তোমার বুক ফেটে সত্যিই রক্ত ঝরছে। ফিনকি দিয়ে।
-   কমলার মা আট’টা রুটি করে গেছিল। সয়াবিনের তরকারি সাথে। আমার তিনটে রুটি নষ্ট হল। তোমার জন্যে।
-   আমার জীবনের তিনটে বছর তুমি নষ্ট করেছ।
-   যাক। শোধবোধ হল তাহলে।
-   কতক্ষণ আর টানতে পারবে বলে মনে হচ্ছে মেঘলা ?
-   দম আটকে আসছে। নট মোর দ্যান ফাইভ-টেন মিনিট্‌স আই সাপোস।
-   ফাইভ অর টেন ?
-   আরেকটা বুলেট খরচ করতে পারলে দশ সেকেন্ডও হতে পারে মিস্টার।
-   না না। আই ডোন্ট ইনটেন্ড টু বি রুড হিয়ার।
-   জল খাওয়াবে একটু ?
-   হা কর। ঢেলে  দিচ্ছি মুখে।
-   থ্যাঙ্কস। না:। পারছি না। গলা দিয়ে নামছে না। আমার কি কথা একটু জড়িয়ে এসেছে অনিল ?
-   একটু না। অনেকটা।
-   তোমার দুঃখ হচ্ছে ?
-   উই হ্যাভ বিন থ্রু সাম ওয়ান্ডারফুল মোমেন্ট্‌স।  
-   ঠিক। ঠিক। আহ...
-   খুব কষ্ট ?
-   অমানুষিক!

**

চিৎকার করে উঠে বসলে  মেঘলা। চিৎকারে বিপিনের ঘুমও ভেঙ্গে গেল।

-   কি হল! এমন ধড়ফড়িয়ে উঠলে ? দুঃস্বপ্ন ?
-   ভয়ানক। একটু জল এনে দেবে বিপিন ?
-   এই নাও। ইউ আর শিভারিং মেঘলা। কিসের স্বপ্ন ?
-   জাস্ট ইম্যাজিন! স্বপ্নে দেখলাম আই অ্যাম ম্যারিড টু অনিল।
-   হে:, তোমার সেই ওল্ড ক্রেজি ফ্যান ?
-   প্লিজ আমাকে এখন কথা বলিও না বিপিন...প্লিজ...হোল্ড মি...
-   শান্ত হও। শান্ত হও...

**

অনিল বুঝতে পারছিল যে সে উদ্ভ্রান্তের মত কথা বলে চলেছে। নয়তো যাদবপুরের এম-টেক হয়ে সে কাপালিকের কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে ? একটা মেয়ের লেঙ্গি তাঁকে এতটা পর্যুদস্ত করে ফেললো ? অনিলের নিজেকে ঘেন্না হচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু সামলাতে পারছিল না সে। প্রতিশোধ স্পৃহা মানুষকে যে কি ভীষণ ছোট করে দেয় তা বেশ টের পাচ্ছিল অনিল।
-   বিচার হবে রে অনিল, বিচার হবে!
-   কিসের কি? তিন বছরের প্রেম সাইড কাটিয়ে চলে গেল বড় চাকরি দেখে। যখন জানলাম যে সে আমার পাশে থাকতে চায় না আমার মনে হচ্ছিল যে মেঘলা ছাড়া আমি মরে যাব। মৃত্যুভয় চেপে ধরেছিল আমাকে; এমন ভয়ানক ছিল সে যন্ত্রণার মুহূর্তটা। আমি আর কিছু চাই না। আমি শুধু চাই সেই মৃত্যু যন্ত্রণাটুকুর আভাস একবারের জন্যে হলেও মেঘলা যেন টের পায়। ওহ! সে কি অপরিসীম যন্ত্রণা।
-   তুই মন থেকে চাইলে সে বিটি নিশ্চয়ই সে রকমই মৃত্যু যন্ত্রণা টের পাবে। তুই যদি মনঃপ্রাণ লাগিয়ে চাস তো সে এখনই...এই মাঝরাতেই মৃত্যু যন্ত্রণা টের পাবে সে। মন’য়ের চেয়ে বেশি শক্তি কোনও কাপালিকের নেই রে ব্যাটা। মন লাগিয়ে চা, তাই হবে।
-   এইতো! জান-প্রাণ লাগিয়ে চাইছি মেঘলা একবার সেই মৃত্যুযন্ত্রণার স্বাদ পাক যা আমি পেয়েছিলাম যখন ও আমায় অমন ভাবে ছেড়ে চলে গেল। চাইছি। চাইছি। চাইছি। চাইছি। কিন্তু এসবে কিস্যু হয় না বাবা! মেঘলা এখন ওর বড়লোক বরের গলা জড়িয়ে সুখে ঘুমিয়ে আছে।
-   মনের জোরের বড় তাগদ বাবা অনিল। মনের জোরের চেয়ে বড় তুকতাক আর হয় না। হয় না।      

1 comment:

অনির্বাণ said...

বড্ডো ভালো লাগলো ...