Skip to main content

গুলির গল্প

একটি বন্দুকের গুলি মনের আনন্দে এগিয়ে যাচ্ছিলে। গায়ে দুদ্দাড় হাওয়া ঠেকছে, সে গাইছে “মামা বাড়ি ভারি মজা কিল চড় নাই”।

একটি টগর ফুল তাঁকে ফুট করে শুধলে – “ ভারি ফুর্তি দেখছি তোর বারুদের পো, কি ব্যাপার ? “
গুলি বললে – “ পুঁচকে এতোটুকু ঘরে ঘরে আটকে ছিলুম গো পিসি। ঘটাং শব্দে আচমকা দেখি দরজা খুলে গেল, আর টের পেলাম আমি দিব্বি উড়তে পারছি”। সে উড়ে চললে।

এক দানা মেঘের গুঁড়ো ওপর থেকে হাঁক পাড়লে “ এই খোকা, সামলে চল সামলে চল। অমন হুরমুরিয়ে চললে হোঁচট খেয়ে দাঁত ভাঙবি শেষে”
গুলি বললে – “ কেমন দুদ্দাড় চলেছি বল দেখি? হুই হুস হুই হুস। হুই হুস”। সে
দুদ্দাড় ভেসে চললে।

একটা মৌমাছি গুলিকে দেখে অবাক হয়ে জানতে চাইলে “ ভাই, তোমার মা বুঝি তোমায় এমন একা একা ঘুরতে মানা করেনি ?”  
গুলি বললে – “ আমায় ছাড়া আরও পাঁচ জন ছিল একই ঘরে শুয়ে। মা ছিল। দুই মাসি। দিদা আর দাদু ছিল।  তারা তো এখনো সে ঘরেই শুয়ে গো । আমিই কি ছাই বেরোতে পারতুম ? আচমকা এক মিষ্টি ধাক্কা আমায় ছুটিয়ে দিলে ঘরের বাইরে। আর কিন্তু ফিরছি না”। গুলি টুসকি মেরে ছুটে চললে।   

 আচমকা দড়াম ধাক্কা। গুলি সটান গিয়ে গুঁতো মেরেছে এক কলজেকে। লাল ধুকপুকে কলজে; ধাক্কার চোটে ভিরমি খেয়ে তার একাকার কাণ্ড
“ কলজে-মামা, সরি গো। সরি। আমি বুঝতে পারিনি...একদম বুঝতে পারিনি...তোমার কষ্ট হচ্ছে গো ? অমন করছ কেন গো ? কি হয়েছে তোমার ? খুব লেগেছে ?”

---
উঠনময় হুলুস্থুল। বিলুর ধাক্কায় ছোটমামা সটান লটকে মাটিতে। কনুই নির্ঘাত ফ্র্যাকচার।
বিলুর মা বিলুর গালে চরম থাপ্পড় কষাতে যাবেন এমন সময় ছোটমামা কাতরাতে কাতরাতে বলে উঠলেন – 
“ কি করছিস মিনু, ওইটুকু ছেলেকে মারছিস ? আরে এ দুনিয়ার র‍্যান্ডম বলে কিছু নেই। বিলু কেয়ারলেস্‌লি দৌড়েছে বলে আমি চোট পাইনি। দেয়ার আর নো অ্যাক্সিডেন্ট্‌স। একটা ঠাণ্ডা হাত বোতাম টেপে, ট্রিগার টানে, ছুরি চালায়; দ্যাট হাত ইজ ডেস্টিনি। ডেস্টিনির সমস্ত ছক কষা আছে রে মিনু। এই ডেস্টিনি ব্যাটা প্ল্যান কষে ফেলেছিলে আজ আমার হাত ভাঙ্গার, সে বিলুকে স্রেফ ইউজ করলে তার বন্দুকের বুলেট হিসেবে। থাপ্পড় কষাতে হলে ট্রিগার-ওয়ালা কে খুঁজে বের কর”

---

বিলুর ফ্ল্যাট আছে উঠোন নেই। বিলুর ডায়াবেটিস আছে, হাঁটুতে বাত আছে; দৌড় নেই। মা নেই। ছোটমামা নেই। আর এত বছরেও ট্রিগার-ওয়ালার দেখা নেই।     

Comments

বস্‌ কর্‌, অব্‌ রুলায়েগা ক্যা?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু