Tuesday, July 30, 2013

দু'জন


কসবা থেকে গরিয়াহাট যাব। একটানা ঝিরঝিরে বৃষ্টি। নেচে-কুঁদে কোনোক্রমে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে উঠতে যাব অমনি দেখি এক বৃদ্ধ এসে হামলে পড়লেন আমার গায়ে। বৃদ্ধ বলছি কারন মাথার চুল ধবধবে সাদা। পোশাক ধোপ-দুরুস্ত, পরনের টিশার্ট’টি কেতাবাজ বললে ভুল হবে না।

-      “ ইয়ে মানে আমিই ট্যাক্সি দাঁড় করালাম কি না, আপনার কি বিশেষ প্রয়োজন ?” বৃদ্ধকে জিজ্ঞেস করতেই হল।

-      “ ঢাকুরিয়া যাব। আই হোপ দ্যাট ইউ ক্যান গিভ দিস্‌ ওল্ড ফুল আ লিফ্‌ট। “
সম্মতি সূচক হাসি দিতেই হল। দুজনেই উঠে বসলাম ট্যাক্সিতে।

গপ্পে শুনে যা বুঝলাম, ভদ্রলোকের নাম অনিমেষ সেন। এক কালের ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির সেরা ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন। পরে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সে পড়াশুনা চালিয়েছেন। ইউরোপ-আমেরিকার নামী খান চারেক ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘকাল ছাত্র পড়িয়েছেন। বর্তমানে রয়েছেন সিয়াটেলে। আমার পরিচয় জানবার পরে নিজের ব্যাপারে  গড়গড় করে এসব ইনফো শেয়ার করে গেলেন ভদ্রলোক। বললেন সিয়াটেলে এলে যেন ওনার বাড়িতে আমি মাছ-ভাত খেতে আসি একবার। বাধ্য হয়ে ওনাকে জানাতে হল যে সিয়াটেলে গিয়ে মাছ-ভাত খেতে হলে আমাদের গড়িয়ার বাড়িটা সম্ভবত বেচে দিতে হবে। দেখলাম ভদ্রলোক সাহেবি সুরে হাসিটি বেশ রপ্ত করেছেন। বললেন “ তোমার হাসির সঙ্গে নাকি রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের হাসির সাঙ্ঘাতিক মিল, মে বি আই শুড এড্রেস ইউ এজ মিস্টার কিং”

“ ইয়ে, আমার ডাকনাম অবিশ্যি পচা”, জমাট হেসে বলতে হল।

গরিয়াহাট কাছাকাছি আসতে যেই পকেটের দিকে হাত বাড়িয়েছি অমনি ভদ্রলোক খপ করে আমার হাত ধরে ফেললেন।   “ নো মিস্টার কিং,  তুমি যেদিন সিয়াটেলে আসবে সেদিন বরং আমার জন্যে এক হাঁড়ি নলেন গুড়ের রসগোল্লা নিয়ে এসো। বাট্‌ আই এম দ্য গুরুজন হিয়ার। খবরদার, তুমি  ওয়ালেটে হাত দিলেই দক্ষযজ্ঞ হয়ে যাবে কিন্তু”

ভারি অমায়িক ভাবে বললেন ভদ্রলোক। লজ্জা লাগলেও না মেনে উপায় ছিলনা। গরিয়াহাটের মোড়ে আমি নেমে গেলাম। ভদ্রলোক ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলেন ঢাকুরিয়ার দিকে। টাটা বলার আগে ট্যাক্সির জানালা থেকে হাত বাড়িয়ে নিজের বিজ্‌নেস কার্ড দিয়ে গেলেন।
বেশ একটা ভালো লাগা নিয়ে এগিয়ে গেলাম একটা পান দোকানের দিকে। একটা ফ্লেক্‌ দিতে বলে পকেটে হাত দিলাম। টের পেলাম মানিব্যাগটি নেই।  মাথায় তড়াং করে উঠলো একটা চিন্তা। কসবায় ট্যাক্সিতে ওঠার মুখে অনিমেষ সেনের ধাক্কাটা মনে পরে গেল। তখনও হাতের মুঠোতেই রয়ে গেছে মিঃ সেন’য়ের বিজ্‌নেস কার্ডটা।  
কার্ড দেখে কোনও সন্দেহ হয় না। দেখলাম দুটোই আমেরিকার নম্বর। তবু ডায়াল করলাম মোবাইল থেকে। হয়ত ট্যাক্সিতেই পড়ে গেছে মানিব্যাগটি।

-      “ হ্যালো”, ওপার থেকে যে গলাটি ভেসে এলো সেটা চেনা ঠেকল না।
-      “ আমি কি প্রফেসর অনিমেষ সেন’য়ের সাথে কথা বলতে পারি ?”
-      “ বলছি, তা এই মাঝ রাত্রে ফোন করার কি মানে ?”
-      “ মাঝ রাত্তির মানে ? এ তো ভরদুপুর, আমি আর আপনি এই মাত্তর ট্যাক্সি ধরে কসবা থেকে গরিয়াহাট এলাম...”
-      “ ধুর, আমি তো রয়েছি সিয়াটেলেই”
ঘাবড়ে গেলাম। ভদ্রলোককে খুলে বললাম সব কিছু।
হেসে উঠলেন অনিমেষ সেন। বললেন “ শোন ভায়া, দু হপ্তা আগে দেশে গেছিলাম। ময়দানের দিকে বিকেলে হাঁটবার সময় এক বৃদ্ধের সাথে আলাপ হয়। ভারি কেতাবাজ। চোস্ত ইংরেজি বলেন। মাইকেল মুখস্থ বলেন। ব্যাটা বলে নাকি আমার হাসির সাথে রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের হাসির সাঙ্ঘাতিক মিল। এসব গপ্পে ভজিয়ে আমার পকেট মেরে মানিব্যাগ নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। হাইলি স্কিল্‌ড। ওই মানিব্যাগে আমার কিছু বিজ্‌নেস কার্ড ছিল। আর কিছু জানতে চাও ?”

হেঁচকি তুলতে তুলতে আই-এস-ডি কল’টি ঝপ করে কেটে দিলাম।  


----


ঘটনা সুত্র শ্রী শ্রী দিব্যজ্যোতি মহাশয়ের একটি অভিজ্ঞতাঃ



3 comments:

Dibyojyoti said...

sadhu sadhu! ami nijer experience nijeo er cheye bhalo likhte partam na!

Sauranshu said...

হুমমম! বাপরে! কি কাণ্ড!

Sauranshu said...

হুমমম! বাপরে! কি কাণ্ড!