Skip to main content

বসাসুর

-          আগরওয়ালের এপ্রুভালটা করিয়ে এনেছো ?
-          কালকে করবো স্যার।
-          এম কে আর ওয়ার্কস’য়ের ফাইল টা ক্লিয়ার করা হয়েছে ?
-          ভাবছি সেটা আর এ মাসে ধরে লাভ নেই স্যার।
-          মান্থলি রিপোর্ট ?
-          এই যাঃ, ভুলে গেছি।
-          তুমি অফিস আসো কি করতে ? বাড়ি থাকলেই পারো, মাস মাইনেটা আমি না হয় মানিঅর্ডার করে দেবো।
-          ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার থাকতে অমন মহাভারতের আমলের কথা বলবেন না তো! মানি অর্ডার শুনলে লোকে হাসবে।
-          মুখে মুখে তর্ক ?
-          গলার আওয়াজ তুলছেন কেন ? পাঁচ ফুটের মধ্যেই তো দুজনায় আছি।
-          বেয়াদপ!
-          খিস্তি মারলে কিন্ত বস-টস বলে তোয়াক্কা করবো না স্যার।
-          থ্রেট করছো ?
-          হুমকি, চমকানি; যা বলবেন।
-          আমি তোমার প্রমোশন আটকে দেবো।
-          আপনার প্রমোশনে আমি ইয়ে করি মাইরি।
বেহেড বেআক্কেলে লোক মশায় আপনি। রইলো আপনার চাকরি। এই আমার রেসিগনেশনের চিঠি। আর আগরওয়ালের থেকে যে আপনি নিয়মিত কমিশন খান; সে কথাও বড় কত্তা দের জানিয়ে যাব।
-          আহা ভাই মুকুজ্যে, তোমার এই দোষ- ইয়ং ম্যান কি না- অল্পেতেই মাথা গরম। অমন রেসিগনেশন রেসিগনেশন বাই তুলোনা তো! তুমিই তো ফিউচার আমাদের। একটু ঠাণ্ডা হয়ে নাও তো দেখি। একটা কাপুচিনো আনাই ? আর মান্থলি রিপোর্ট নিয়ে তোমায় আর বেশি ভাবতে হবে না। আমার হাতে বেশ কিছুটা খালি সময় থাকে। আই উইল মেক ইট। ইউ রিল্যাক্স। রিল্যাক্স। আর ছুটি-টুটির দরকার থাকলে আমায় বলতে প্লিজ হেসিটেট করো না, তোমরা আজকালকার ইয়ং ম্যানরা এত লাজুক যে কেন। 
স্বপ্ন-ভাবনাটা দারুন গাঢ় হয়ে এসেছিলো; এমন সময় পিওন বিশে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলে; “বড় সাহেব ডেকেছেন। বলেছেন আগরওয়ালের ফাইলটা নিয়ে যেতে”

মুখ তেতো হয়ে গেল। কলজে ঠাণ্ডা মেরে গেল।
নিজেকে হেঁচড়ে নিয়ে ঢুকলাম বসের ঘরে।
-          আগরওয়ালের এপ্রুভালটা করিয়ে এনেছো ?
-          কালকের মধ্যে হয়ে যাবে স্যার।
-          টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস ? ইডিয়ট! এম কে আর ওয়ার্কস’য়ের ফাইল টা ক্লিয়ার করা হয়েছে ?
-          আজ সন্ধ্যের মধ্যেই...।
-          উফ! যত নিষ্কর্মার পাল্লায় পড়েছি।  মান্থলি রিপোর্ট ?
-          কাল ভুলে গেছিলাম স্যার ... এই ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই...
-          দেখি আগামি পাঁচ বছরের মধ্যে তুমি প্রমোশন কি করে পাও, নন-সেন্স কোথাকার! কোনও কাজ ঠিক সময়ে হয় না। অফিসে বসে কি নেত্য করা হয় ?
-          সরি স্যার
-          শাট আপ! আচ্ছা বেআক্কেলে পিস তুমি। তোমায় কি করে টাইট করতে হবে আমি বেশ জানি। বর-কত্তা কে বলে তোমায় এমন কানাগলিতে ট্রান্সফার করাবো...
-          প্লিজ স্যার, মায়ের অসুখ, ছেলের স্কুল, ট্রান্সফার হলে জলে পড়ে যাবো। আসলে দিবাকরদা অসুস্থ হওয়ায় ওর কাজটাও করতে হচ্ছে...তাই এ কাজ গুলো একটু...
-          হোয়াট ? হামকো অজুহাত দেতা হ্যায় ?
-          নো অজুহাত স্যার। ফ্যাক্ট।
-          মুখে মুখে তক্কও করা হচ্ছে আজকাল ?
-          সরি স্যার, এমন আর কোনও দিন হবে না।
-          ব্লাফ।
-          মা কালির দিব্বি। সমস্ত পেন্ডীং ব্যাপারগুলো আজই ম্যানেজ করে নেব স্যার।
-          আজকের মধ্যে না হলে আমি তোমার খাল খিঁচে নেবো। নাউ গেট আউট।

Comments

Anonymous said…
ASHADHARON eita khub enjoy korlam

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু