Skip to main content

বনধ থাকুক

বনধ কে যারা গা-জোয়ারি গাল পাড়েন, ইতিহাস তাঁদের চাবকাবেন; এমনটাই আশা। অফিসে বসে সলিট্যায়ার খেলার চেয়ে দুপুরের ভাত ঘুম ঢের ভালো।  মুখে আপনি যাই বাতেলা ঝাড়ুন, নিজের হৃদয় হাতড়ালে টের পাবেন যে বনধ আসলে হিসেবি-ব্লাউজের-সুন্দরী-পরনারী বই আর কিছু নয়।  
  
সব চেয়ে দুঃখের বিষয় যে বনধ-শিল্প বাঙালি আজও সঠিক সুরে বাঁধবার চেষ্টা করলো না। বনধ যেন লিটল ম্যাগাজিনের কবিতা; আঁতলামো করে খিস্তি মেরেই খালাস। বনধ নাকি ইকনমি, জি-ডি-পি, শিক্ষা-স্বাস্থ সমস্ত ইস্যুতে ব্লেড চালায়। আরে ধুর; দেশের পর দেশ সেনাবাহিনী পুষে ফতুর হয়ে যাচ্ছে আর যত গলা-শুকনো কান্না শুধু বনধ’য়ের বেলায়। বনধ হলও হাফ-শহীদ-চাকুরি’বাজেদের বুকের ভেতরের ব্যালকনির হাওয়া; খল-নলচে জুড়ে না হয় খেলুক একটু।  

বনধ-সংস্কৃতি বরং একটু সুসংহত করে তোলবার সময় এসেছে। অমুক-চেতনা সপ্তাহ, তমুক-জাগরন পক্ষ গোছের বেফালতু নেত্য না করে; জাতীয় বনধ সপ্তাহ পালন করা হোক। পালা করে দেশের তাবড় রাজনৈতিক দলগুলো বনধ ডাকবেন। পার্টির বনধ ভলেন্টিয়াররা রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়বেন বনধ সম্বন্ধে পাবলিককে আরও সচেতন করে তুলতে। মোরে মোরে ওয়ার্ক-শপ করে লোককে শেখানো হোক কি ভাবে বনধের দিন রাস্তা জুড়ে ক্রিকেট ফুটবল খেলতে হবে, অফিস-কারখানার গেটের সামনে জমায়েত করে কি ভাবে থিয়েটার করতে হবে, কি ভাবেই বা বিভিন্ন পার্টির বনধ-মাস্তানি-কমিটি’তে নাম লেখানো যাবে।

রাজ্যের বনধ-মন্ত্রি রাস্তায় কোনও মিনিবাসে আগুন জ্বেলে বনধ-সপ্তাহের উদ্বোধন করতে পারেন; পেছনে রি-মেড রবিন্দ্রসঙ্গীতের কোরাস – “ বাস জ্বেলে দাও, বাস জ্বেলে দাও, বাস জ্বেলে দাও, দাওওওওওওও...”। এর পর সমস্ত রাজনৈতিক দল গুলো এক এক করে আয়োজন করবেন এক দিনের বন্ধ। রাজ্য জুড়ে উদযাপিত হবে বিভিন্ন উৎসব ও আনন্দ-খেলা; যেমন বনধ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ছোটদের জন্যে বসে-টায়ার-পোড়াও প্রতিযোগিতা, থিম ভিত্তিক সড়ক-অবরোধ ইত্যাদি। খুব ভালো হয় যদি প্রত্যেক বনধ বা বনধ-বিষয়ক উৎসবগুলোর জন্যে আলাদা আলাদা স্পনসর পাওয়া যায়। বেশ একটা আই-পি-এল হাওয়া লাগবে; কার্বন-কামাল-গাড়ি ভাংচুর বা সিটি-মোমেন্ট অফ রেল-অবরোধ। আহাঃ।

সপ্তাহ শেষে, যখন সমস্ত দলের বনধ শেষ, তখন শুরু হবে সেরা বনধ-ডাকিয়ে রাজনৈতিক দল নির্বাচনের পালা। এটা ডেমোক্রেসির যুগ, ভোটাভুটি ব্যাপারটা মানুষ বেশ খায়। অতএব “সেরা কে”,  এই ব্যাপারটা ঠিক করা যেতে পারে এস-এম-এস ভোটের মাধ্যমে। আপনার প্রিয় বনধ-ডাকিয়ে রাজনৈতিক দল কে জেতাতে হলে আপনাকে এসএমএস করতে হবে <পার্টির নাম>স্পেস<সেরা-বন্ধবাজ> আর তা পাঠিয়ে দিতে হবে অমুক নম্বরে। পার্টি নেতারা নিজে এসে এস-এম-এস এপিল করবেন; তাতে খেল জমবে। সেরা বনধ-ডাকিয়ে রাজনৈতিক দল পাবেন বছরে আরও দুটি এক দিনের বনধ ডাকার সুবর্ণ সুযোগ। রাজ্য-জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বনধ-প্রিয় জনতার জন্যে বনধ গুডীজ; যেমন আই-লাভ-বনধ লেখা টি-শার্ট, টুপি, বিবেকানন্দের বানী লেখা শুনশান বনধ-রাস্তার পোস্টার; ইত্যাদি।

এ সব কিছু হলে দেখবেন; টি-আর-পি,স্পন্সর,এন্সিলারি আউটপুট ইত্যাদি সব মাল-কড়ি মিলে বনধ-ইন্ডাস্ট্রি আপনাদের ইকনমিতেও টু পাইস ঢালবে। ল্যাদখোর পাবলিকও বছরে কদিন ভাত ঘুম দিয়ে হাঁপ ছাড়বে।
      

Comments

মুহাহাহাহা.......+1

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু