Skip to main content

এখন গরম-তখন গরম

গরম বেড়ে চলেছেপাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেজাজের গরমিল। অফিসিও ইঁটের পাঁজা তেতে থাকে বারো মাস, ফাইল-সেলস-হিসেব-পত্তর ছোলাভাজা হয়ে মুখের কোণে ড্যালা পাকিয়ে থাকে সর্বক্ষণ কিন্তু গেলবার উপায় নেই।কিন্তু প্রাকৃতিক পারদ-থাপ্পড় এই অফিসের উত্তাপকে আরও দু:সহ করে তোলে। মুস্কিল হচ্ছে সেই বয়সটা নেই যে বয়সে বোশেখের দুপুরের রোদ কোন বিপন্নতা ছিল না, বরং গরমের ছুটির দুপুরের ক্রিকেটের আবেদন ছিল আরও অনেক বেশি ক্ষিপ্র। 

অনেক ভেবে দেখলাম, গরমের নির্মমতা কিন্তু ছেলেবেলায় কখনো মালুম হয় নি। অথচ সে সময় ঠান্ডা অফিস ঘরের বদলে ছিলো ঘট-ঘট শব্দে ফ্যান ঘোরা ক্লাসঘর, মোটরগাড়ির আমুদে ছায়ার বদলে ছিলো সাইকেল, ফ্রিজ-ঠান্ডা জলের বদলে ছিলো মেটে-কূঁজোর জল; যাবতীয় গরম-বিরোধী-উপাদান সত্বেও, বোশেখ কে এখন এত প্রচন্ড মনে হয় যে বলার নয়আমার সহকর্মীর ভাষায়, দুপুরে রাস্তায় পা রাখলে মনে হয় চল্লিশ লিটার থাম্স-আপ কিনে ড্রামে ভরে, নিজেই সেই ড্রামে উদোম হয়ে ঝাঁপ দিয়ে তুফানি করিঅথচ ছেলেবেলায় মার বারণ অগ্রাহ্য করে দুপুর রোদে মাঠে ছুটে গিয়েছি।এখন ভাবলে মনে হয় পাগলামিখেলা শেষে বিকেলে ঘণ্টী-বাজানো গাড়ি থেকে কিনে খাওয়া চার আনার বরফ-লেবু জল; আহা:! এমন তৃপ্তি বোধ করি আর জন্মেও জুটবে না  আর এখন লিটার লিটার গ্লুকোজ-গোলা জল খেয়ে পেট ফুলে যায় কিন্তু তেষ্টা মেটে না

কেন? বয়েসের দোষ? গ্লোবাল ওয়ার্মিং? বউয়ের দাপট? বসয়ের চাবুক?
হয়ত বয়সটা বেড়েই কাল হলো। স্কুল পর্যন্ত গরম কে নিদেন মন্দ লাগতো না। তারপর কী যে হলো..
সে সময় খেতাম ঠাকুমায়ের হাতের আম-পোড়া সরবত, এখন কোলা!
তখন বাড়ির ছাতে শুকোতো আম-স্বত্ব, এখন ব্যালকনিতে টুকি মারে বনসাই।
সে সময় পাড়ার গাছের বাইরে যেতে হতো না আমের খোঁজে, এ বাড়ি ও বাড়ি ঝুড়ি-ভর্তি আম আদান প্রদানও অতি আম ব্যাপার ছিলো। এখন থলি হাতে কারবাইড ম্যাজিক খুঁজতে বেরোনো
কালবৈশাখীরাও মানে মানে কেটে পড়ছে এ দেশ থেকে
গরম যখন প্রচন্ড আর তার সাথে লোডশেডিং, ছাতে যেতাম মাদুর, বালিশ আর মশারী হাতে শুতেগরম রয়ে গ্যাছে, লোডশেডিংও বেড়েছে বই কমেনি, কিন্তু ফ্ল্যাটবাড়ির যুগের বারোয়ারী ছাতে মশারী-বালিশ হাতে উঠলে ষ্টেটাস খোয়াতে হবে

মোদ্দা ১: গরমকে এখন ভয় পাই, ছেলেবেলায় টের পেতাম না
মোদ্দা ২: অনেক কিছুকে এখন ভয় পাই, যা ছেলেবেলায় টের পেতাম না। 

Comments

Suhel Banerjee said…
Allow me my little sadistic pleasure as I must tell you how I was walking in downtown Chicago this afternoon, around 2 PM with a suit on. And since that was feeling a bit chilly, had to put on an overcoat.

Gorom? What gorom?:)
Someswar Panda said…
ছোটবেলায় স্কুলের বাইরে এক নোংরা ধুতিওলা বুড়ো আইসক্রিম বেচত. দেশী আইসক্রিম. কাঠের মতো শক্ত. ২০ পয়সা করে দাম হাঁকত. আমরা দল বেঁধে ভিড় করতাম আর থার্মোকলের বাক্স থেকে একটা দুটো ঝেড়ে দিতাম. ওই দাদুর কাছ থেকে চুরি করা আইসক্রিম শরীরে যা ঠান্ডা দিত তার বিকল্প আজ অবধি খুঁজে পেলুম না. আজ ওই লাল হলুদ আইসক্রিম খেলে ইনসাইজর প্রিমোলার আর আস্ত থাকবে না.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু