“ মত্স মারিব খাইবো সুখে; এহেন স্লোগান বদলে বাঙালি যখন মত্স ধরিব পুষিবো সুখে বলে ছলকে ওঠে, তখন ব্যাপারটা অতি সিরিয়াস পচা, নিজেকে কন্ট্রোল কর, তুই বখে যাচ্ছিস” আমার নতুন কেনা দু জোড়া মাছ সহ ফিশ-বাওল পর্যবেক্ষণ করতে করতে বললো ছোটমামা।
একটা ফিস-বাওল’এর শখ বহুদিন ধরেই ছিলো। সেদিন হঠাত্ নিয়ে এসেছিলাম। দু জোড়া গৌরামি (GOURAMI) মাছ-সহ। এক জোড়া হলুদ, অপর জোড়াটি সাদা। ঘটনাচক্রে সেদিন ছোটমামা বাড়িতে এসেছিল। ছোটমামা মাছ-প্রেমিক, তবে পুষ্যি মাছের নয়, যেসব মাছ উদরস্থ করা যায় তাদের। পাড়ার মাছ বাজারে ছোটমামা আনন্দবাজারি ভাষায় বীরেন্দ্র সহবাগ।
দিনে অন্তত দু রকম মাছ ছাড়া ছোটমামার চলে না। মামার মাছ-প্রীতি এতদূর যে মাছ-ওয়ালারা মামা কে এস-এম-এস করে আগাম খবর দেয় কী কী মাছ আসছে বাজারে। বাড়িতে আলাদা ফ্রিজার রেখেছে শুধু মাছ স্টক করতে। ছোটমামা রবিবার আবার নিজে মাছ রান্না করেন, এক পদ ছোটমাছ, এক পদ বড় কোনও মাছ। সেও এক উত্সব, তার গল্পও অন্যদিন। ছোটমামা’র কিছু খুচরো মত্স-দর্শন আছে, যথা:
-বাঙালি যত না রবীন্দ্রনাথে, তার চেয়েও বেশি ইলিশ মাছে।
-মাছ থাকবে সমুদ্রে, নদীতে, পুকুরে বা খাওয়ার প্লেটে
-মাছা ছাড়া খাদ্য, সুরহীন বাদ্য
-মাছ দেখলেই পাকরো, কাটো, ভাজো এবং গপাগোপ গেলো
এহেন ছোটমামার যে মাছ পোষবার বুদ্ধি বিশেষ ভাল লাগবে না সেটাই স্বাভাবিক। তবে আমার এই দু জোড়া মাছ বোধ হয় তাদের স্বাদে না হোক, রূপে ছোটমামকে ইমপ্রেস করেছিল। গোটাদিন দেখলাম ছোটমামা দেখলাম ফিস-বাওলের কাছেই বসে রইল। বিকেলবেলা যাওয়ার আগে বলে গ্যালো, “বুঝলি পচা, তোর পোষা মাছগুলোর একটা করে নাম দিয়ে গেলাম”
-“আমি বললাম মাছের আবার নাম কী?”
_ “বাহ, নাম হবে না?”, ছোটমামা বললে, “যে মাছ কড়াইতে ভাজা যায় না, তার তো নাম দিতেই হয়। নাউ লিসেন পচা, ওই যে হলুদ মাছ-জোড়া ওদের নাম হল মিহি আর দানা, আর ওই যে সাদা মাছ জোড়া; ওদের নাম হল সীতা আর ভোগ”
-“মিহিদানা আর সীতাভোগ? মাছের নাম? আর ফিস-বাওলটা তাহলে কী? বর্ধমান?”
_”হে হে , তোর ঘটেও আছে কয় ছটাক, চলি রে পচা, চলি রে মিহিদানা- সীতাভোগ, টেক কেয়ার”
এর ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ছোটমামির ফোনে আর্তনাদ
_ “ ওরে পচা রে, তোর মামা তোর বাড়ি থেকে সেদিন ঘুরে আসবার পর থেকেই কেমন গোলমেলে হয়ে গ্যাছে রে”
-“কেন? ছোটমামার আবার কী হলো?”, আমি অবাক।
-“তোর ছোটমামা আর মাছ খাচ্ছে না!”
-“ ছোটমামা মাছ খাচ্ছে না? ধুর! ছোটমামাকে ফোন দাও তো”
ছোটমামার এমন উদ্ভট ব্যবহারের কারণ জানতে চাইতেই ছোটমামার মিচকি হাসি মাখা জবাব ভেসে এলো, “আসলে পাতে মাছ দেখলেই সীতাভোগ, মিহিদানার ইনোসেন্ট চাউনি মনে পড়ে যায় রে, ভারী মিষ্টি রে তোর ওই সীতাভোগ-মিহিদানা। ভাবছি বর্ধমান থেকে হপ্তাহে এক-এক কিলো সীতাভোগ-মিহিদানাই আনিয়ে রাখবো, মাছ’এর বদলে মিষ্টি’তেই কনসেনট্রেট করতে হবে দেখছি।
ছোটমামা এরপর আর সত্যিই মত্স-স্পর্শ করেনি।
Comments