Skip to main content

শিশুপাল


রোববার সন্ধ্যেবেলা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলেই মেজাজ খিঁচড়ে ওঠে কোনও অফিসিও খবরের আশঙ্কায়। ফোন-কলটা ধরবো কী ধরবো না ভাবতে ভাবতে ধরেই ফেললাম।
-“হ্যালো, পচা?”, দুরুম ব্যারিটোনেই বুঝতে চিনতে পারলাম আনন্দ-স্যার, ছোটবেলার ইংরেজি গৃহ-শিক্ষক কাম কৈশোরের জীবন-গুরু। ব্যাচেলর, গিটার-বাজিয়ে, দাপুটে এই ইংরেজি শিক্ষকটি ছিলেন আমাদের স্কুল-জীবনের আরাধ্য। ক্লাস এইট-নাইনে যখন আনন্দ-বাবুর কাছে পড়তাম, তখন মনে হত ; আজন্ম ব্যাচেলর থাকা, গিটার বাজানো, চারমিনার খাওয়া আর গড়গড় করে ইট্স বা শক্তি আউড়ানো ছাড়া জীবন বৃথা। কিন্তু উচ্চ-মাধ্যমিকের পর যথারীতি আনন্দ-বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ কমে এসেছে। এখন যোগাযোগ বলতে বিজয়ার সময় আমার প্রণাম-সহ ফোন। কিন্তু এতদিন পর এই রবিবার সন্ধ্যে বেলা হঠাত্‍ আনন্দবাবুর ফোন পেয়ে অবাক হলাম বটে।

-“হ্যাঁ স্যার , বলছি। কেমন আছেন আপনি?”
-“আমি ভাল আছি কিনা জানতে হলে, নিজে ফোন কর”
-“হ্যাঁ স্যার
-“তুমি কেমন আছ? বৌমা কেমন আছে?”
-“ভাল স্যার, আপনার শরীর ভালো?”
-“কে ফোন করেছে?”
-“আপনি স্যার”
-“আমার শরীরের স্টেটাসের ব্যাপারে যখন আগ্রহ হবে নিজে কল করবে”
-“হ্যাঁ স্যার
-“চাকরি-বাকরি কেমন চলছে? নিজের উড়ন-চন্ডি হ্যাবিটগুলো কে চেক করতে পেরেছ?”
-“ইয়ে, হ্যাঁ স্যার”
-“সিগারেট ছেড়েছো?”
-না স্যার, মানে ছেড়ে দেব স্যার, তবে ইয়ে, আপনিও তো..”
-“আমি সিগারেট খাই, তাই বলতে চাও তো? আচ্ছা? আমি মর্নিং ওয়াক করি। তুমি কর? আমি ব্যায়াম করি দিনে ঝাড়া আধ-ঘন্টা, তুমি কর? আমি নিয়মিত টপ্পা শুনি, তুমি শোনো?
-“না স্যার”
-“তবে সিগারেটের ব্যাপারে আমার সঙ্গে তুলনা করছো কেনো?, যাক গে, বাইরের আগডুম-বাগডুম খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেছ?”
-“চেষ্টা করছি স্যার”
-“এখনো চেষ্টা? তোমার পেটে যে পরিমাণ তেলে-ভাজার লেয়ার আছে, এরপর তো ফিনাইল ছাড়া সাফ হবে না হে, হ্যাঁ? হে হে হে হে হে..”
-“হে হে হে স্যার...”
-“যাক গে, বেশ লাগল তোমার কণ্ঠস্বর শুনে, আর আমার শরীর এখনো একদম ফিট বুঝলে, যোগ ব্যায়ামের মত কোনও ম্যাজিক হয় না। বেশ, বেশ, ভালো থাকো,আজ তবে রাখি”
-“স্যার কি দরকারে ফোন করেছিলে বললেন না তো?”
-দরকার? কই! কোনো দরকার নেই তো, ওই এমনিই আর কি, হে হে হে। অবিশ্যি, আমি অমুক-ডে তমুক-ডে এইসবের কনসেপ্ট এককেবারেই মানি না, তবে এই যে শুনলাম কাল নাকি চিল্ড্রেনস ডে, শিশু-দিবস। তাই ভাবলাম আমার শিশুপাল-গুলোকে একটু চমকে দি.. বুঝলে কি না! হে হে হে, রাখি কেমন? ভালো থেকো”

Comments

আমিও আনন্দস্যারের মতো ১৬তে সিগারেট ধরে ৬৪তে, মনে গতবছর, ছেডেছি; অমুক দিবস, তমুক সন্ধ্যা, সেন্ট ভালেন্টাইন তারিখ, ধন-তেরস, শিশু কিংবা শিশুপালবধ দিন কিছুই মানিনা. তবে আশীর্বাদ করছি, চালিয়ে যাও.
Rezwan said…
শেষ লাইনটা পড়ে হাসতে হাসতে পড়ে গেলাম :D

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু