Skip to main content

মিস্টার সেনের থেরাপিস্ট


- এক্সকিউজ মী?

- বিলীভ মী। বানিয়ে বলছি না।

- আমি আপনার থেরাপিস্ট। ডেফিনিটলি আপনাকে অবিশ্বাস করছি না মিস্টার সেন। তবে...।

- তবে? ডাক্তার?

- না মানে...ব্যাপারটা বিষম খাওয়ার মতই।

- শুনেই আপনাকে বিষম খেতে হচ্ছে৷ তাহলে আমার কী অবস্থা সে'টা ভাবুন।

- আর একবার আমায় নিশ্চিত হতে দিন মিস্টার সেন৷ আপনি বলছেন আপনি আজ রাত্রে ঘুমোতে গেলেন। কিন্তু যেই সকালে আপনার ঘুম ভাঙবে সে'টা আগামীকালের সকাল নয়, গতকালের।

- এগজ্যাক্টলি। সঠিক বুঝেছেন। 

- আর এমনটা হচ্ছে গত মাসখানেক ধরে?

- রাইট ডাক্তার। আমি রোজ একদিন করে পিছিয়ে চলেছি। আমি আজ থেকে গতকালে পিছিয়ে যাচ্ছি। রোজ।

- কী সাংঘাতিক।

- আজ জুন মাসের নয় তারিখ, তাই তো? একমাস আগে আমি জুলাইয়ের নয়ে ছিলাম।

- অ।

- আপনি অবিশ্বাস করতে পারেন। আমি মাইন্ড করব না।

- বিপুলা এ পৃথিবী। এটসেটেরা এটসেটেরা। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দায় আমার নয়। 

- আজকে ইন্ডিয়া জিম্বাবুয়ের ওয়েনডে হচ্ছে তো? 

- হচ্ছে।

- মোবাইলে লাইভ স্কোর চেক করুন দেখি ডাক্তার।

- গোটা সেশনের টাকা দিয়েছেন। যা বলবেন শুনব। যা করতে বলবে করব। এই যে...টসে জিতে ইন্ডিয়া ব্যাট করছে। বাইশ নম্বর ওভারে একশো বেয়াল্লিশ এক উইকেটে। কোহলি চালিয়ে খেলছে।

- বাইশ নম্বর ওভার তো। তেইশ নম্বর ওভারের প্রথম বল। একটা বিমার কোহলির কনুইয়ে লাগবে। রিটায়ার্ড হার্ট। 

- বলেন কী।

*মিনিট পাঁচেক পর*

- তুকতাক নাকি মিস্টার সেন? কোহলি বোধ হয় গোটা সিরিজের জন্য গেল।

- কোহলিকে নিয়ে ভাববেন না ডাক্তার। হালকা চোট। হাড় ভাঙেনি। পরের ম্যাচ খেলবে। সেঞ্চুরিও করবে।

- একটা খটকা লাগছে মিস্টার সেন। জুন মাসের নয় তারিখ তো আপনি ইতিমধ্যেই দেখেশুনে ফেলেছেন। এ চেম্বারের ঘটনাটাও তো..।

- ইয়েস। এ দিনটাও আমার দেখা।

- মিস্টার সেন। আপনাকে কাউন্সেল করা আমার কম্ম নয় যা বুঝছি।

- হাল ছাড়ছেন ডাক্তার?

- একটা কাজ করা যাক। আগামীকাল সকালে বরং আমি আপনাকে একটা ফোন করি। বা দেখাও করতে পারি। ব্যাপারটা ভীষণ ইন্ট্রিগিং। 

- আপনার আগামীকাল ডাক্তার? অর্থাৎ দশই জুন?

- ইয়েস।

- হ্যাঁ। দেখা করতেই পারেন। কিন্তু আপনি আজ ঘুমিয়ে কাল সকালবেলা দশই জুনে পৌঁছবেন অথচ আমি ফিরে যাব ন'তারিখে। অতএব  আপনার সঙ্গে আমার কথা হবে ভবিষ্যতের আমির সঙ্গে। দশই জুন আমার দেখা ও চাখা হয়ে গেছে। আমাদের দেখা হবে ওয়াইজ আউল কফি শপে।

- ওহ। সে'টাও আপনার জানা?

- ইয়েস ডাক্তার। আর এ'টাও জানা যে আপনার সঙ্গে আমার আগামী পরশু,  তরশু এবং তারপর একটানা প্রায় রোজ দেখা হবে। ওই একই কফিশপে।

- আপনি নিশ্চিত? আমাদের দেখা হবে?

- ডাক্তার ডাকটা বিরক্তিকর লাগছে। অনুপমা বলেই ডাকি?

- অ্যাস ইউ উইশ মিস্টার সেন।

- আমরা তুমিতে শিফট করব ঠিক সাত দিন পরে।

- হোয়াট?

- তুমিতে শিফট করব। ষোলোই জুন।

- মিস্টার সেন, ব্যাপারটা অস্বস্তিকর জায়গায় যাচ্ছে।

- প্রেম নিবেদনটা আমিই করব। বাইশে জুন। হুট করে বিয়ের জেদটা অবশ্য আপনার দিক থেকেই আসবে অনুপমা। 

- বাড়াবাড়ি হচ্ছে নাকি?

- আমার সিচুয়েশনটা আজ আপনার গোলমেলে ঠেকছে৷ কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝবেন কী গভীর সমস্যার আমি রয়েছি তেইশে জুন আপনি আমার হাত টেনে নিজের মুঠোর মধ্যে নেবেন অনুপমা। ওই, ওয়াইজ আউল কফি শপেই।

- মিস্টার সেন...!

- ষোলোই জুন থেকে তুমি বলার পাশাপাশি আমার নাম ধরে ডাকাও শুরু করবেন আপনি। মিস্টার সেনের বদলে অভিরূপ। 

- ব্যাপারটা পাগলামোর পাশাপাশি খুব আপত্তির জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে মিস্টার সেন। 

- অনুপমা। কোহলির ওই চোটের মতই হয়ত আমাদের সম্পর্কটাও ঠেকানো যাবেনা। জানি৷ তবু, ফিরে আসার সুযোগ পেয়ে একটা শেষ চেষ্টা করতে এলাম, যদি আপনাকে ঠেকানো যায়। আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসেছি অনুপমা। আর সেই ভালোবাসার জন্যই বলতে এলাম, আমার সঙ্গে আর দেখা করবেন না। প্লীজ না। জানি না এই ভাবে আমাদের তেসরা জুলাইয়ের হুটহাট করে সেরে ফেলা বিয়েটা আটকানো যাবে কিনা। কিন্তু নয়ই জুলাইয়ের পর থেকে আমি আর এগিয়ে দশই জুলাইয়ে যেতে পারিনি; এ'টা ভেবে একটা প্রবল অস্বস্তি হচ্ছে৷ ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না। অনুপমা, প্লীজ অ্যাভয়েড মী। প্লীজ।

- দেখুন মিস্টার সেন। আমি আপনার থেরাপিস্ট না হলে এখুনি আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম। কিন্তু আপনার কথাগুলো মন দিয়ে শোনা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তা যতই গোলমেলে হোক না কেন। আর হ্যাঁ, আগামীকাল আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব এবং সে'টা করব পিওরলি অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টে। না হয় সেই ওয়াইজ আউলের কফি শপেই দেখা করব কারণ আপনার বিটকেল ডিলিউসনগুলো ধুয়েমুছে সাফ করার দরকার আছে।

- ভুল করছেন অনুপমা। একটা বিরাট ভুল করছেন।

- কাল সন্ধ্যে সাতটায়।  ওয়াইজ আউল কফি শপ। আর এখন আপনি আসতে পারেন৷ আপনার সঙ্গে এখন আর বাড়তি কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

***

- অনুপমা।

- ইয়েস ডক্টর মিত্র? অভিরূপ কেমন আছে...?

- সরি। চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলাম না। ইট ওয়াজ আ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।  ইওর হাসব্যান্ড ইজ নো মোর।

- আজ জুলাইয়ের দশ তারিখ। অভিরূপ ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিল ডাক্তার। আমায় সাবধানও করেছিল। কিন্তু আমিই...।

- আর ইউ ওকে অনুপমা? আমি জানি এ'টা কত বড় একটা শক...।

- অভিরূপ আমায় সাবধান করেছিল। বারবার। অথচ ওকে বিশ্বাস করতে চেয়েও পারিনি। আই ফেল ইন লাভ ডক্টর, আমি ভালোবেসেছিলাম।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু