Skip to main content

মৃদুলবাবু ও মশা

*আজ রাত্রে*

শোওয়ার ঘরের মশারির বাইরে একটা মশা ঘুর ঘুর করছে অনেকক্ষণ থেকে। নতুন ফ্ল্যাটে প্রায় বছর খানেক হতে চলল, মশার উপদ্রব এই প্রথম।
মৃদুলবাবু অবশ্য মশারির ভিতরেই।

মঁমঁমঁমঁ গোছের একটা গা শিরশিরানি শব্দ।  আর পাঁচটা মশার প্যানপ্যানানির মত বিরক্তিকর শব্দ নয়, বরং খানিকটা যান্ত্রিক এবং অস্বস্তিকর।

ঘণ্টাখানেক ধরে চলছে এই মঁমঁমঁমঁ। রাত পৌনে একটা বাজতে চলল। এ'বার একটা হেস্তনেস্ত না করলেই নয়।

মশারির আবডাল ছেড়ে বেরিয়ে এসে ঘরের আলো জ্বাললেন মৃদুলবাবু।

অদ্ভুত। গোটা ঘর জরীপ করেও মশা নজরে পড়ল না, অথচ মঁমঁমঁমঁ শব্দটা কিছুতেই থামছিল না।
গেলাস দুয়েক জল খেয়ে ফের মশারির মধ্যে ফেরত এসে লম্বা হলেন তিনি।

তখনও একটানা মঁমঁমঁমঁ।

মৃদুলবাবুর অস্বস্তিটা চড়চড় করে বাড়তে থাকল। আচমকা টের পেলেন ডান কনুইতে সামান্য জ্বালা। হাত দিয়ে টের পেলেন ফুলে গেছে। কামড়েছে ব্যাটাচ্ছেলে রাস্কেল।

মশাটাকে আরও খান দুই গাল পাড়তে যাবেন কিন্তু তখনই মঁমঁমঁমঁ শব্দটা গেল থেমে। আর বালিশের পাশে রাখা মোবাইল টুং শব্দে বেজে উঠল।

স্ক্রিন অন করে মৃদুলবাবু দেখলেন ব্যাঙ্কের এসএমএস।

**

*বছরখানেক আগে*

- মিস্টার মৃদুল, এই রইল আপনার হাউস লোনের অ্যাপ্রুভাল।
- থ্যাঙ্ক ইউ। আপনাদের ব্যাঙ্কের ইএমআই স্কীম কিন্তু বেশ সস্তা। লোভনীয়।
- মানুষের জন্যই আমাদের ব্যবসা। আগে মানুষ, মুনাফা পরে। আর ইএমাআইয়ের প্রসঙ্গে বলি, মাঝেমধ্যে পেমেন্ট পুরোপুরি করতে না পারলেও চাপ নেবেন না।
- নেব না? হাউজিং লোনের মাসের ইএমআই না পেলে আপনারা বাড়ি থেকে বের করে দেবেন না?
- নেভার।
- গুণ্ডা লেলিয়ে দেবেন না?
- তউবা তউবা। আমাদের অনেক সহজ টেকনিক আছে। ইএমআই উশুলও হবে, অথচ আপনি টেরটি পাবেন না।
- মাইরি? পেনলেস ইএমআই আদায়? টোটালি যন্ত্রণাহীন?
- অলমোস্ট পেনলেস।
- কী'রকম?
- আরে সে'সব পাতি টেকনিকাল ব্যাপার। তবে বললাম তো স্যার, আপনি প্রায় টেরই পাবেন না। দেখছেন না, অল্পদিনেই আমাদের কাস্টোমার বেস কতটা বেড় গেছে!
- আপনারা অনবদ্য।
- আপনারাই আমাদের ভাতরুটি স্যার।
- তা এমন জনদরদী ব্যাঙ্ক আপনাদের,  এমন বিটকেল নাম কেন? ড্রাকুলা ব্যাঙ্ক, এ'টা কোনও নাম হল?

Comments

আরে নামেই তো টের পাওয়ার কথা ভাই ।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু