Skip to main content

দেবু মল্লিক স্ট্রীটের হত্যা রহস্য

বিনয় সিগারেট ধরালেন। সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘরের বোটকা গন্ধটা একটু নরম হল মনে হল। পরনের স্যান্ডো গেঞ্জিটা ঘামে ভিজে আছে। ফ্যানটা ফুল-স্পীডে চলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ধুর ছাই; ঘরে কী বদ গন্ধ। চার ঘণ্টার মধ্যেই লাশে পচতে শুরু করলো নাকি? অবশ্য যা গরম, জ্যান্ত মানুষের চামড়াই গলে যেতে বসেছে। পিন্টুটা যে কখন আসবে। ভোরের আগে সমস্ত কাজ মিটিয়ে ফেলতে হবে।

**

- শালা পিন্টু, আধ ঘণ্টার মধ্যে আসার কথা তোর...সাড়ে চার ঘণ্টা পর বাবুর আসার সময় হল।
- দা'বাবু সরি। ম্যাটাডোর পেতে এত হ্যাপা। বচা ব্যাটাচ্ছেলে শেষ মুহূর্তে ডোবাল। অনেক কষ্টে সেই শিয়ালদা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে এক মাতাল ড্রাইভারকে বগল দাবা করে আনতে হল গো। তাইতে দেরী। যাক গে। বৌদির লাশটা কোথায়?
-পিছনের বারান্দায় বস্তায় পুরে রাখা আছে। সাবধানে নিয়ে আয়। বস্তার মুখটা ভালো করে বেঁধে আনিস।


**

- বটুবাবু, ফের কামাল করলেন মশাই। ক্যালক্যাটা পুলিশ যদি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড হয়, তাহলে আপনি তো হোম্‌স মশাই।
- হে হে হে, কী যে বলেন ইন্সপেক্টর দাস। সিগারেট আছে? বিড়ি ধরাতে মন চাইছে না।
- আছে বইকি। এই যে। দাঁড়ান ধরিয়ে দিই। ইয়ে, বটুবাবু, বাইশ নম্বর দেবু মল্লিক স্ট্রীটে খুন হয়েছে আপনি খবর পেলেন কী করে? আফটার অল আপনার বাড়ি তো সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। 
-চোখ কান নোলা খোলা রাখতে হয় মশাই।
-নোলা খোলা রাখা?
-বিনয়বাবুর বৌকে আজ সকালে দেখি মাছের বাজারে। ভদ্রমহিলা দেড় কিলো ওজনের ইলিশ নিলেন। বারোশো টাকা কিলো মশাই। শুনলাম বাড়ি গিয়ে ভাপাবেন। কোন বাড়ির ইলিশ রান্নার কোয়ালিটি কেমন সে বিষয়ে রিসার্চ করা আমার একটা পার্সোনাল নেশা। যে বাড়িতে ইলিশ রান্না হয়েছে তার আশেপাশে ঘুরঘুর করলেই ইলিশ ঝোলের গন্ধ আমার নাকে হুড়হুড় করে ঢুকে পড়ে আর আমি অ্যাসেস্‌ করে নিতে পারি সে বাড়ির হেঁসেলের ইলিশ ম্যানেজ করার দম কতটুকু। বিনয়বাবুরা ও পাড়ায় নতুন, অতএব তাদের বাড়িতে ইলিশ রান্না কোয়ালিটি কেমন সে বিষয়ে আমার একটা আগ্রহ হবেই। ব্যাস। রাত আটটা নাগাদ চলে গেলাম বিনয়বাবুর বাড়ির পাশে। অনেকক্ষণ ঘুরঘুর করেও যখন রান্না ইলিশের গন্ধ পেলাম না ঘোর সন্দেহ হল। বাঙালি বাড়িতে ইলিশ এনে রান্না না করে ফ্রিজে রেখে দেবে? বাঙ্গালির ক্যারেক্টারের সঙ্গে সেই উইল পাওয়ার খাপ খায় না মশাই। এক্সট্রিম কিছু একটা বাড়ির ভিতর ঘটেছে আঁচ করে নিলাম। ব্যাস্‌! সামান্য ইনভেস্টিগেট করতেই পুরো কেস মালুম হয়ে গেল। ম্যাটাডোরের ড্রাইভার সেজে খুনি আর তার স্যাঙ্গাৎকে সোজা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসাটা তো আমার বাঁ হাতের খেল। হে: হে:। 
-ইলিশ ফলো করতে গিয়ে আপনি খুনি ধরলেন বটুবাবু? 
-শুধু খুন নয় ইন্সপেক্টর দাস। একটা চুরির ঘটনাও সামিল হয়েছে। 
- চুরি? কী চুরি ? কে করলে?
- সরি ইন্সপেক্টর সাহেব। খুনি ধরে দিয়েছি, কিন্তু তাই বলে চোর কে ধরে দিতে বলবেন না।
- বেশ তো। কিন্তু অন্তত বলুন তো কী চুরি হয়েছে?
- ইলিশ। বিনয়বাবুর ফ্রিজ থেকে। ইলিশ রান্না কেন হয়নি সে ব্যাপারে ইনভেস্টিগেট করতে রান্নাঘরের পিছনের জানালা ব্রীচ্‌ করে সে বাড়িতে আমি ঢুকি। লাশ আবিষ্কার করে খুনি ধরার প্ল্যান কষে ফেলি। ভেরি ইজি আর কী। আর ইয়ে, বেরোবার আগে ফ্রিজ থেকে বিনয়বাবুর বৌয়ের কেনা দেড় কিলো ইলিশটা সরিয়ে নিই। কী করব বলুন। জেনুইন পদ্মার প্রোডাক্টের যা প্রাইস আজকাল মশাই, বাজারে ছুঁতে ভয় লাগে। আর আমার কপালে শাঁসালো মক্কেল আর ক'টা জোটে। অগত্যা। কিছু মাইন্ড করেননি তো? 
- হে হে। না না। ওয়েল ডান বটু গোয়েন্দা। ব্রাভো।


**

বাজে লম্বা জোক্‌স শুধু হোয়াট্‌সঅ্যাপেই পড়তে হবে, তার কী মানে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু