Thursday, June 25, 2015

দেবু মল্লিক স্ট্রীটের হত্যা রহস্য

বিনয় সিগারেট ধরালেন। সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘরের বোটকা গন্ধটা একটু নরম হল মনে হল। পরনের স্যান্ডো গেঞ্জিটা ঘামে ভিজে আছে। ফ্যানটা ফুল-স্পীডে চলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ধুর ছাই; ঘরে কী বদ গন্ধ। চার ঘণ্টার মধ্যেই লাশে পচতে শুরু করলো নাকি? অবশ্য যা গরম, জ্যান্ত মানুষের চামড়াই গলে যেতে বসেছে। পিন্টুটা যে কখন আসবে। ভোরের আগে সমস্ত কাজ মিটিয়ে ফেলতে হবে।

**

- শালা পিন্টু, আধ ঘণ্টার মধ্যে আসার কথা তোর...সাড়ে চার ঘণ্টা পর বাবুর আসার সময় হল।
- দা'বাবু সরি। ম্যাটাডোর পেতে এত হ্যাপা। বচা ব্যাটাচ্ছেলে শেষ মুহূর্তে ডোবাল। অনেক কষ্টে সেই শিয়ালদা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে এক মাতাল ড্রাইভারকে বগল দাবা করে আনতে হল গো। তাইতে দেরী। যাক গে। বৌদির লাশটা কোথায়?
-পিছনের বারান্দায় বস্তায় পুরে রাখা আছে। সাবধানে নিয়ে আয়। বস্তার মুখটা ভালো করে বেঁধে আনিস।


**

- বটুবাবু, ফের কামাল করলেন মশাই। ক্যালক্যাটা পুলিশ যদি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড হয়, তাহলে আপনি তো হোম্‌স মশাই।
- হে হে হে, কী যে বলেন ইন্সপেক্টর দাস। সিগারেট আছে? বিড়ি ধরাতে মন চাইছে না।
- আছে বইকি। এই যে। দাঁড়ান ধরিয়ে দিই। ইয়ে, বটুবাবু, বাইশ নম্বর দেবু মল্লিক স্ট্রীটে খুন হয়েছে আপনি খবর পেলেন কী করে? আফটার অল আপনার বাড়ি তো সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। 
-চোখ কান নোলা খোলা রাখতে হয় মশাই।
-নোলা খোলা রাখা?
-বিনয়বাবুর বৌকে আজ সকালে দেখি মাছের বাজারে। ভদ্রমহিলা দেড় কিলো ওজনের ইলিশ নিলেন। বারোশো টাকা কিলো মশাই। শুনলাম বাড়ি গিয়ে ভাপাবেন। কোন বাড়ির ইলিশ রান্নার কোয়ালিটি কেমন সে বিষয়ে রিসার্চ করা আমার একটা পার্সোনাল নেশা। যে বাড়িতে ইলিশ রান্না হয়েছে তার আশেপাশে ঘুরঘুর করলেই ইলিশ ঝোলের গন্ধ আমার নাকে হুড়হুড় করে ঢুকে পড়ে আর আমি অ্যাসেস্‌ করে নিতে পারি সে বাড়ির হেঁসেলের ইলিশ ম্যানেজ করার দম কতটুকু। বিনয়বাবুরা ও পাড়ায় নতুন, অতএব তাদের বাড়িতে ইলিশ রান্না কোয়ালিটি কেমন সে বিষয়ে আমার একটা আগ্রহ হবেই। ব্যাস। রাত আটটা নাগাদ চলে গেলাম বিনয়বাবুর বাড়ির পাশে। অনেকক্ষণ ঘুরঘুর করেও যখন রান্না ইলিশের গন্ধ পেলাম না ঘোর সন্দেহ হল। বাঙালি বাড়িতে ইলিশ এনে রান্না না করে ফ্রিজে রেখে দেবে? বাঙ্গালির ক্যারেক্টারের সঙ্গে সেই উইল পাওয়ার খাপ খায় না মশাই। এক্সট্রিম কিছু একটা বাড়ির ভিতর ঘটেছে আঁচ করে নিলাম। ব্যাস্‌! সামান্য ইনভেস্টিগেট করতেই পুরো কেস মালুম হয়ে গেল। ম্যাটাডোরের ড্রাইভার সেজে খুনি আর তার স্যাঙ্গাৎকে সোজা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসাটা তো আমার বাঁ হাতের খেল। হে: হে:। 
-ইলিশ ফলো করতে গিয়ে আপনি খুনি ধরলেন বটুবাবু? 
-শুধু খুন নয় ইন্সপেক্টর দাস। একটা চুরির ঘটনাও সামিল হয়েছে। 
- চুরি? কী চুরি ? কে করলে?
- সরি ইন্সপেক্টর সাহেব। খুনি ধরে দিয়েছি, কিন্তু তাই বলে চোর কে ধরে দিতে বলবেন না।
- বেশ তো। কিন্তু অন্তত বলুন তো কী চুরি হয়েছে?
- ইলিশ। বিনয়বাবুর ফ্রিজ থেকে। ইলিশ রান্না কেন হয়নি সে ব্যাপারে ইনভেস্টিগেট করতে রান্নাঘরের পিছনের জানালা ব্রীচ্‌ করে সে বাড়িতে আমি ঢুকি। লাশ আবিষ্কার করে খুনি ধরার প্ল্যান কষে ফেলি। ভেরি ইজি আর কী। আর ইয়ে, বেরোবার আগে ফ্রিজ থেকে বিনয়বাবুর বৌয়ের কেনা দেড় কিলো ইলিশটা সরিয়ে নিই। কী করব বলুন। জেনুইন পদ্মার প্রোডাক্টের যা প্রাইস আজকাল মশাই, বাজারে ছুঁতে ভয় লাগে। আর আমার কপালে শাঁসালো মক্কেল আর ক'টা জোটে। অগত্যা। কিছু মাইন্ড করেননি তো? 
- হে হে। না না। ওয়েল ডান বটু গোয়েন্দা। ব্রাভো।


**

বাজে লম্বা জোক্‌স শুধু হোয়াট্‌সঅ্যাপেই পড়তে হবে, তার কী মানে।

No comments: