Skip to main content

হার চুরির রহস্যভেদ

- বলুন প্রশান্তদা, হারটা কখন চুরি গেছে।
- হার? চু...? মানে...ইয়ে...মানে বটু, আমি তো এই এলাম। তুমি জানলে কী করে যে আমার বাড়ি থেকে হার চুরি গেছে?
- গতকাল নিমাই ময়রার দোকানে ল্যাংচা নেওয়ার সময় আপনার মোবাইলে ফোন আসে। ফোনে আপনি বলেন হার আপনার বাড়িতে ডেলিভারি না দিতে, আপনি নাকি সেটা নিজে কিছুক্ষণ পরেই দোকান থেকে নিয়ে আসবেন।  আমি শুনতে পারি কারণ আমি তখন সেখানে ছিলাম খান ছয়েক গরম রসগোল্লা ট্যাক্‌ল করার জন্য। নয়  বছর আগে ঠিক সাতাশে জুলাই আপনার আর মিঠু বৌঠানের বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়েছিলাম। অর্থাৎ আপনার বিবাহ বার্ষিকী পঁচিশে মানে আজকে। তার মানে হারটার ডেলিভারি বাড়িতে না নেওয়ার কারণ সেটা মিঠু বৌদির জন্য সারপ্রাইজ গিফ্‌ট। হ্যাপি অ্যানিভার্সারি বাই দি ওয়ে।
- থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু ভাই বটু, চুরিটা কি করে জানলে?
- কোয়ার্টার এন্ডের মুখে দাঁড়িয়ে। আপনার অফিসের যা চাপ, বিবাহবার্ষিকী বলে ছুটি বাগাতে পারবেন না। এদিকে বেলা সাড়ে নটায় আপনি অফিসমুখো না হয়ে অফিসের পোশাকে বটু গোয়েন্দার বাড়ি। আপনি গুছিয়ে পা ফেলা মানুষ, শান্ত ধীর স্থির। অথচ আপনার জামার পকেটে ছোলার ডালের স্পট্‌। অর্থাৎ ভীষণ উত্তেজনার মধ্যে আপনি জলখাবার শেষ করেছেন। এবং ভীষণ উত্তেজনার মধ্যে অফিস যাওয়ার নাম করে হুড়মুড় করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা এই শর্মার দরবারে এসেছেন। এর মানে কী?
- এর মানে কী বটু?
- এর মানে হল প্রশান্তদা, কিছু একটা এমার্জেন্সি আপনাকে বদার করছে। অথচ সেটা আপনি বৌদির সাথে শেয়ার করতে পারছেন না। তাই মুখ বুজে কচুরি ছোলার  ডাল সাঁটিয়ে অফিস যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরোতে হল। আপনি এমনিতে বেশ মিনমিনে বৌ বলতে অজ্ঞান হাজ্‌ব্যান্ড প্রশান্তদা। প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড, কিন্তু গোটা পাড়া সেটা জানে। কাজেই কী এমন এমার্জেন্সি হতে পারে যেটা আপনি বউয়ের সাথে শেয়ার করতে পারলেন না? পুলিশের কাছে যাওয়ারও ধৈর্য নেই, সিধে এলেন আমার কাছে। দুইয়ে দুইয়ে চার করতে হল। কাল আপনি হারের ডেলিভারি নিয়ে বাড়িতে কোথাও লুকিয়ে রেখেছিলেন আজ মিঠু বৌদিকে সারপ্রাইজ করবেন বলে। কিন্তু সকালে উঠে দেখেন সেই বিশেষ জায়গাটা থেকে হারটা হাওয়া।  আর আপনার কলজেতে আটশো আশি ভোল্টের শক্‌।
- আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে বটু। বিশ ভরীর হার। এ বাজারে। হেল্প মি বটু। 
- ঘাবড়ে যাবেন না। আমি আছি। ইয়ে একটা কথা প্রশান্তদা। আপনার মেজপিসির বাড়ি চন্দননগরে না? সেখানকার জলভরা অমৃত-সমান। 
- তা নিয়ে ভাবছ কেন বটু। সে তো তুমি এমনি চাইলেই আমি তোমায় এক বাক্স আনিয়ে দিতাম।
- ফেকা হুয়া জলভরা ম্যায় আজ ভি নহি উঠাতা হু প্রশান্তদা।
- কী?
- ইয়ে। নাথিং। মানে। যদি হার পাওয়া যায়। তবে এই। হাজার তিনেক টাকা। আর ছ'মাস ধরে প্রতি মাসে একশো পিস্‌ জলভরার সাপ্লাই।  
- ডান! প্লীজ বটু। হেল্প। 
- ওকে। তাহলে বলুন দেখি। আপনাদের তো আবার বিবাহবার্ষিকীর রাত্রে বাইরে খাওয়ার অভ্যাস। তাই না? পাড়ার কোন কিছু আমার চোখ এড়ায় না।
- বটেই তো। আজও রাত্রে রিজার্ভেশন করা আছে। মিঠু ওটাই প্রেফার করে।
- গুড্‌। বৌদি আজ আপনাকে নিশ্চয়ই অফিস কামাই করতে রিকুয়েস্ট করেননি ?
- প্রতিবারই এমন বায়না করে। তবে আজ করেনি। কিন্তু তুমি কী করে আন্দাজ করলে?
- বটু গোয়েন্দা আন্দাজে খেলে না প্রশান্তদা। বটু জানে তাই বলে। আমি জানি কারণ আপনাদের চাকর মাধবদা আড়াই কিলো মাট্‌ন কিনে এনেছে আজ সকালেই।আপনি জানতেন সেটা? 
- কই, না তো। কিন্তু তাতে কী? 
- আমার পাড়ায় কোন বাড়িতে হপ্তার মাঝে মাটন ঢুকবে আর আমি টের পাব না, এ বরদাস্ত করা যায় না। 
- আরে তার সঙ্গে আমায় অফিস কামাই করানোর জন্য আমার বউয়ের বায়না না করার কী সম্পর্ক? এর সাথে হার চুরির লিঙ্ক কোথায় ভাই বটু?
-বিবাহবার্ষিকীর দিন বউ কখন বরকে অফিস যেতে বারণ করে না প্রশান্তদা?
- কখন? 
- যখন বৌ সিওর থাকে যে বর অফিস যাবে না।
- মানে?
- মানে মিঠু বৌদি জানেন যে আপনি অফিস যাবেন না। আর মাটনের গোপন আয়োজনও সে কারণেই। রোম্যান্টিক অ্যানিভার্সারি লাঞ্চ।
- আমি অফিস যাব না। সেটা মিঠু জানে? হাউ?
- প্রশান্তদা।  হার সরিয়েছেন মিঠু বৌদি নিজে। রিভার্স সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছেন আপনাকে। আর উনি জানেন হার হারিয়েছে জানলে আপনি আর অফিস যেতে পারবেন না। বর কে বিশেষ দিনে কাছে পেতে বউরা সব করতে পারে প্রশান্তদা। বিয়েটা সে জন্যেই অ্যাভয়েড করলাম। আর তাছাড়া, বাড়িতে কোন জিনিষ বউয়ের চোখের আড়ালে আপনি লুকিয়ে রাখতে পারবেন, সেটা ভাবলেন কী করে বটুদা? 
- মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে বটু। আমি তো শিওর ছিলাম...।
- শুনুন। বউ আর বটু গোয়েন্দাকে ফাঁকি দেওয়ার হাস্যকর চেষ্টা করার কোনও মানেই হয় না। যা হোক আপনার শিক্ষা হল। আমি এবার বৌদিকে ফোন করে বলি আপনি আমার কাছে কোন এক হার চুরির কেস নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু এসেই ভীষণ বুক ব্যথায় কাহিল হয়ে পড়েছেন। হসপিটালাইজ্‌ করতে হবে মনে হচ্ছে। হারটা সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসবে। কেমন? আর আজ বরং অফিসটা বাদই থাক। কোয়ার্টার এন্ড বছরে চারবার আসবে। তবে এমন রোম্যান্টিক মেঘলা দিনের দুপুরে মাটন লাঞ্চ বড় রেয়ার। আর ইয়ে। আমার টাকা আর জলভরাটা। মানে। বুঝতেই পারছেন। হে! হে!

**
- হ্যালো! বটু। কী বলে যে তোমায় ইয়ে জানাবো...।
- কেন প্রশান্তদা? ওই যে বললাম। তিন হাজার আর জলভরা। 
- সে তো বটেই। তোমার মিঠু বৌদি তোমার বোনাস হিসেবে এক বাটি মাংস কষা পাঠাচ্ছে মাধবের হাতে। কেমন রেঁধেছে জানিও কিন্তু।
- মিঠু বৌদি আমাদের জগদম্বা। হাতসাফাই টু কষা, সবেতেই সিদ্ধহস্ত। আমার থ্যাঙ্ক ইউটা জানিয়ে দেবেন প্লীজ।   

Comments

Unknown said…
khub sundor feel good goenda goppo!!
Unknown said…
"আর তাছাড়া, বাড়িতে কোন জিনিষ বউয়ের চোখের আড়ালে আপনি লুকিয়ে রাখতে পারবেন, সেটা ভাবলেন কী করে বটুদা?"
"বটুদা" টা "প্রশান্তদা" হবে বোধহয় |

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু