Skip to main content

বন্ধু


-   খোকা, এদিকে এসো। এসো।
-   তুমি কে?
-   আমি? মিতুলদাদু।
-   কে মিতুলদাদু?
-   তোমার বন্ধু মিতুলদাদু।
-   আমার তিনজন বন্ধু। রাজা। অপু। ফুটু।
-   আমি চার নম্বর তাহলে।
-   তুমি তো অনেক বড়। তোমার চুল সব সাদা। আমি ক্লাস টু’তে পড়ি।
-   বড় হলে কি বন্ধু হওয়া যায়না খোকা?
-   যায়?
-   খুব যায়।
-   তুমি কি ছেলেধরা?
-   সে কী। আমি ছেলেধরা হতে যাব কেন খোকা?
-   মা বলে। রাস্তায় অচেনা কারোর সঙ্গে কথা না বলতে। রাস্তায় ছেলেধরা থাকে।
-   তুমি ছেলেধরাদের ভয় পাও?
-   আমি কোনদিন ছেলেধরা দেখিনি। তুমি কি ছেলেধরা?
-   তুমি একটা ছেলে। আমি তোমার হাতটা এই ধরলাম। তাহলে আমি ছেলেধরাই বটে।
-   আমি এই প্রথম ছেলেধরা দেখলাম।
-   তোমার ভয় করছে না?
-   ছেলেধরারা কী খারাপ ?
-   খারাপ না? তারা ছেলেদের ধরে যে...
-   হাত ধরলে ঠিক আছে। গাল না টিপলেই হল।
-   তোমার গাল টিপলে তোমার খুব রাগ হয় বুঝি ?
-   খুব।
-   তোমার নাম কী খোকা?
-   আমার স্কুলের নাম অনিকেত রায়।
-   আর বাড়ির নাম?
-   টুবলু।
-   তোমার বাবা মা কোথায় টুবলু? তুমি ক্যাফেটেরিয়াতে একা বসে কেন?
-   বাবা অফিসে। মা ওই পার্লারে আছে। ওই যে। সামনের। ওইটা।
-   তোমার বাবা কেমন আছে টুবলু?
-   তুমি আমার বাবাকে চেন?
-   চিনি বইকি।
-   তুমি কী আমার বাবারও বন্ধু?
-   কিছুটা। তা টুবলুবাবু, তোমার হাতে কী ওটা? মোবাইল ফোন?
-   হ্যাঁ। এটা আমি যখন যখন একা থাকি তখন তখন আমার কাছে থাকে। আমি চাইলেই বাবা বা মাকে কল করতে পারি।
-   তাই নাকি ? একবারটি তোমার বাবাকে কল করবে খোকা?
-   তুমি কথা বলবে?
-   হ্যাঁ গো টুবলুবাবু। তোমার বাবা খুশি হবে। কল কর কল কর।

**
-   হ্যালো, আপনি কে বলুন তো টুবলুর সাথে কথা বলছেন ? আর ওকে দিয়ে আমায় ফোনই বা কেন করাচ্ছেন?
-   বাবা অর্ধেন্দু, আমায় চিনতে পারছ না?
-   কই না তো।
-   আমি তোমার মিতুলকাকু!
-   কী যাতা ঠাট্টা এটা।
-   রাগ করো না বাবা। তুমি আমার ছেলের প্রাণের বন্ধু। তুমি একটু দীপুকে বুঝিয়ে বল না...
-   এটা নোংরা ঠাট্টা হচ্ছে...আ...আপনি এখুনি দূরে চলে জান...ফোন ফেরত দিন টুবলুকে...
-   ছিঃ বাবা...আমি তোমার মিতুলকাকু...আমি গুরুজন...
-   কে আপনি...কে...কে...কে...কেন এমন করছেন...টুবলুকে ফোন দিন...
-   তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন বাবা অর্ধেন্দু। টুবলুতো আমার নিজের নাতির মতই। ভাবলাম ওর মাধ্যমে তোমার সাথে কথা হয়ে জাবে...ও ছেলেমানুষ...ওর সামনে যখন তখন আসতে তো ক্ষতি নেই...
-   কে...কে...কে...
-   শান্ত হও অর্ধেন্দু। শান্ত হও। তুমি আমার ছেলের বন্ধু, আমার পুত্র সম। তুমিও কি আমার ছেলের মতই ভাব আমি কোন ক্ষতি করতে পারি আমার স্নেহের মানুষদের?
-   আ...আ...আ...আমার ছেলের কোন...
-   ছিঃ, কেন আমি ক্ষতি করবো ? আমার ছেলেরও খালি একই ভয়, আমি ক্ষতি করে দেব। তুমি ওকে প্লিজ বুঝিয়ে বলবে অর্ধেন্দু, ও যেন আমার নামে গিয়ে গয়াতে পিণ্ডদান না করে আসে! তাহলে যে আমি আর থাকতে পারবো না এভাবে। এখন তাও মাঝেসাঝে নিজের বাড়িঘর, ছেলেমেয়েগুলোকে দেখে আসি...ছেলেটার স্বপ্নে ঢুকে গিয়েই গণ্ডগোল হল যত...প্লিজ একটু আমার ছেলেকে বুঝিয়ে বল না...ও যাতে পিণ্ড না দিয়ে আসে। আমি থাকতে চাই আশেপাশে। আমি কারুর কোন ক্ষতি করবো না। বিশ্বাস কর।  প্লিজ...ওকে বল যে ওর বাপ আরেকবার মরতে চায় না...প্লিজ...

Comments

আপনি এখুনি দূরে চলে জান :-(

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু