Saturday, August 3, 2013

মধুময়ের ঘুম




ঘুম পাওয়ার প্রথম ধাপে মাথার তালুতে নরম শিরশিরানি টের পান মধুময়। রাত এগারোটা নাগাদ রাতের খাওয়া সেরে নিজের বিছানায় চলে আসেন তিনি। সঙ্গে থাকে কোন সরল বই কিংবা পত্রিকা। বাসে-ট্রেনের টানাহ্যাঁচড়া আর চাকরির চক্করে শরীরে ক্লান্তি জমে থাকেই। মধুময় তিন কি চার নম্বর পাতায় গিয়েই বুঝতে পারেন যে চোখের পাতার ওজন বেড়ে চলেছে। থুঁতনি ক্রমশ নেমে আসে পাশ বালিশের বুকে। ছয় নম্বর পাতায় পৌছনোর আগেই বইটা আলগা হয়ে খাটে লুটিয়ে পড়ে। ঘুমের দানা যত জমতে থাকে , মধুময়ের কানে সিলিং ফ্যানের এক ঘেয়ে আওয়াজ তত দাপুটে হয়ে ওঠে। রোজই তিনি টের পান যে তার ডান চোখ যখন আধবোজা , তার বাঁ চোখ সম্পূর্ণ ভাবে বুজে গেছে। বেশ দৃপ্ত ভঙ্গিতে ঘুমের পিছু পিছু বেশ কিছুক্ষন ছুটে চলেন মধুময়।
বাজিয়ে দেখে নেন যে ঘুম বাবাজির দম কতটা। রোজকার ঘুম চিনে রাখাটা মধুময়ের একটা অবসেস্‌ন। পরিচিত অভ্যাস।

রক্ত চলাচলে ঘটে চলা তারতম্যটুকুও বেশ বুঝে নেন মধুময়। মগজের ভেতর  তিমির পেটের মত অন্ধকার যে অংশটুকু, সেইখানে কয়েক মুহূর্তের জন্য ধুকপুক টের পান তিনি। অথচ পরিচিত মগজ টুকরোটি যে মাটির  নিকনো দাওয়ায় মাদুর পেতে জিরিয়ে নিচ্ছে; সেই অনুভুতিটা বেশ সরেস ভাবে বুক জুড়ে আসে।

ঘরের জিরো পাওয়ায়ের রাত-বাতিটির আলো যখন আবছা হয়ে আসতে শুরু করে, হাতের আর পা ঝিমঝিমে ভাবে আলগা হয়ে চলে, ওষ্ঠ অধরের থেকে অস্পষ্ট ভাবে দূরে সরতে থাকে...
ঠিক তখন মধুময় টের পান যে তার চোখ জুড়ে শুধু আবছা লালচে অন্ধকরা। নিজেকে ভাসমান মনে হয় তার। ঘুমে ভেসে যাওয়ার আগে মধুময়ের কানে ভেসে আসে বাবা’র মত একটা কণ্ঠস্বর “ শুনেছি মায়ের পেটে থাকতেই বাচ্চারা শব্দ শুনতে পারে বুঝলে বউ ? মন দিয়ে এবেলা ওবেলা রবি ঠাকুরের গান গাইবে। কেমন ? বাচ্চার কানে মিষ্টি শুরু গেলে তবেই না তার হৃদয়ে মধু জমা হবে ? আচ্ছা বউ, আমাদের মেয়ে হলে তার নাম রাখবো মধুরিমা আর ছেলে হলে নাম রাখবো মধুময়। কেমন ?”   

2 comments:

Iniya said...

khub bhalo laglo. thank you.

Iniya said...

Khub bhalo laglo. Thank you.