Skip to main content

তেল দ্য সর্ষে



শুনেছি যে দুই মাস বয়েস থেকেই আমার দিদা আমায় সর্ষের তেলে দলাই-মলাই করে রোদে ফেলে রাখতেন ঘন্টার পর ঘন্টা। তখন এমন প্যাকেট সর্ষের তেলের সময় আসেনি। পাড়ার ঘানীতে গিয়ে দাদু নাকি নিজে নিয়ে আসতেন আলট্রা-খাঁটি সে সর্ষের তেল। তার ঝাঁঝ নাকি এয়সা ক্ষতরনাক ছিল যে শিশির ছিপি খুলতেই চোখে জল চলে আসতো। সেই চাবুক সর্ষের তেলে দৈনিক প্রায় চুবিয়ে রোদ পোহানো হতো আমায়।শুনেছি বেদম চিত্‍কার করতাম সেই তেলের জ্বালায়। দাদু ভাবতেন নাতির গলায় সুর আসবে, ক্ল্যাসিকাল গাইয়ে হবে (সেই নাতি অবশেষে তেল বেচছে)। কিন্তু একটানা ওই তেল-রগরানিতেই নাকি আমার সর্দি-কাশির ধাত বিলকুল নেই। সে যাই হোক, ওই তৈল-মর্দন সেশনগুলো থেকেই আমার সর্ষের তেল প্রীতি শুরু।

শীতকালে ছাদে গিয়ে সর্ষের তেল মেখে স্নান তো অমোঘ-উত্‍সব ছিলো একসময়ে। মালকোচা মেরে পরা গামছা, পেতলের ছোট বাটির কানায় কানায় ভর্তি সর্ষের তেল
। সর্বশরীর তেল রগড়ে, আইসিং অন দ্য কেকের মতো আঙ্গুলের ডগায় তেল নিয়ে, আঙ্গুলের মাথা সটান নাকের মধ্যে চালান করে দেওয়া। অত:পর  চুপচুপে শরীরে ছাতময় পায়চারি আর হেঁড়ে গলায় প্রতুল মুখুজ্জে। সে সব ডিসেম্বর আর কে ফিরিয়ে দেবে! তবে শুধু শরীর-যতনে নয়, সর্ষের তেলের মূল কেতা মালুম চলতো রান্নায়ডুবো তেলের বেগুন ভাজাই হোক কী মাছ ভাজা, মুরগির-মাংস-তরকারী; সমস্ত কিছুই সর্ষের তেলেই খোলতাই হয় এমনটাই চিরকালীন বলে জানতাম।



 
বিয়ে করলাম, বউ এলো, এবং বাড়তি যৌতুকের মতো সাথে নিয়ে এলো কোলেস্টেরল কনসেপ্ট। ব্যাস! রান্না থেকে সর্ষের তেল ৮০ শতাংশ উধাওএবং, সুস্বাদু খাদ্য-গ্রহণ গ্যালো গুলিয়েহেঁসেল হয়ে উঠলো হাসপাতালের ক্যাণ্টীনরিফাইনড অয়েল ঢুকে বাঙালির জ্বীহা-রসের কাছা দিলো খুলে

এবং, জীবনে এলো আরও বড় ঝড়! বডি অয়েল! পুরুষ-দেহ মর্দনের জন্যে সর্ষের তেল ছাড়া যে অন্য কোনও ব্যাপার হতে পারে তা তো ভাবতেই পারতাম না? তাছাড়া আরও মুস্কিল, আধুনিক বাক্স-ফ্ল্যাটে ছাত কই? চুপচুপ সর্ষের তেল মেখে রোদ পোহাবো কোথায়? ব্যালকনিতে আধমরা রোদ আসে বছরে সাড়ে-সাত দিন, সঙ্গে ধুলো-পোড়া কার্বন।

অতএব?

এখন সকালে উঠে ট্যাঙ্কের জমানো ঠান্ডা জল; গীজারে গরম করে, দু মগ জলে দেহ ভিজিয়ে,  বউএর ড্রেসিং টেবিল হাতড়ে ময়শ্চারাইজিং ক্রীম দু ফোঁটা নিয়ে বুক পিঠ রগড়ে নেওয়া। এরপর দু ফোঁটা সাদা তেল মাখানো ব্রয়লার স্টু-ভাত গিলে অফিস মুখ হওয়া
সর্ষের তেল বিনে জীবন এখন বাঁসি পাউরুটি।ঝাঁঝ চলে গ্যাছে, বাঙালিয়ানা এখন আলট্রা-রিফাইনড আলুনি। ধুত্তর!



Comments

এই তো খাসা সর্ষের ঝাঁজ বেরুচ্ছে, কবিতার সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল! তবে তেল ঢেলে কবিতা হয়না বোধ হয়, ভস্মে ঘি ঢেলেও না৷ সাধনাও একরকম ব্যায়াম, ছাদ চাই না, রোদ্দুর চাই না, এমনকি গৃহ-গৃহবধু-সন্তানসন্ততি-একচিলতে বারান্দার দরকার নেই ... যদি কবিতার জন্য চুলকুনি থাকে৷

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু