Skip to main content

বাঙ্গালের বিশ্ব-বুদ্ধি

আমার জ্ঞান-স্ফেয়ারে, মিশর হাজার তিনেক বছর’এর তফাতে, পিরামিড’এর পর মুবারক-সাহেবের হাত ধরে প্রবেশ করল। মাঝে কিছু খুচরো এন্ট্রি ছিল বটে; এই যেমন নন এলাইনমেন্ট-পন্থী নাসের, টিনটিন’এর ফারওয়ের চুরুট খোঁজা অথবা প্রোফেসর শঙ্কুর মিশর-ভ্রমণ ইউ-এফ-ও’এর খোঁজে। ভাবলে অবাক হতে হয়, যে গ্লোবালাইজ্ড অর্থনীতি এবং টেকনোলজির যুগে, যখন গোটা পৃথিবীটা পকেটে চিরকুটের মত পড়ে থাক উচিত, আমি যে ইণ্টেলেকচুয়াল ডোবায় বাস করছি, তার রেডিয়াস’টাই সামান্য পাল্টেছে মাত্র। মিশরের মানুষ যে ওদিকে পিরামিডিও এক মানবিক যুদ্ধে নেমেছেন, তার খবরটা অন্তত আমার কাছে তখন পৌছল যখন বিস্ফোরণ ঘটে গ্যাছে, বাঁধ ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়ে গ্যাছে।


এই সময়ই মনে হল, এই ‘গোটা পৃথিবী’ই এক’ গোছের কথা আদতে স্রেফ ফালতু-বাত। মুখ’এর সামনে এটলাস খুলে বসলে ঘাবড়ে যেতে হয় যে এই ইউনিভার্সাল ব্রাদারহুডের যুগেও আমরা আসলে আমাদের ব্রাদার-দিগকে আদৌ তেমন চিনে উঠতে পারিনি। অন্ততো যে কয়েকটি গুটিকয় দেশ সম্বন্ধে সামান্য যোগ অনুভুব করি, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে মনে হয় ঝাঁপ দি। কোন কোন দেশ কে কি কি সূত্রে এবং কতটুকু জানি?বলি শুনুন:

১। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র: নমস্য। ‘মোদের গরব মোদের আশা-আমেরিকা দেশটি খাসা’। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আমাগো প্র্যাসিডেণ্ট। ডেমক্রেসির বাপ- হোয়াইট হাউস। সিনেমার ঠাকুরদা- হলিউড। সমস্ত ‘ভালো-ছেলে’দের স্পষ্ট গন্তব্য। আর মানে..ইয়ে..ফ্রি সেক্স-টেক্স চলে বোধ হয় ওখানে।

২। পাকিস্তান: ক্রিকেট। মাঝে মাঝে রাম-প্যাদানী’র ভয়; উগ্রবাদ। উচ্ছন্নে যাক, বয়ে গ্যাছে।

৩। চিন: চাউমিন। মাও সে তুং।অলিম্পিক মেডাল। আর ওরা বোধ হয় টিকটিকি খায়!

৪। বাংলাদেশ: ধুর, দেশ কি। ও তো ক্যানিং’এর ওপার। ইলিশ’এর সাপ্লাই চালিয়ে যাক, ব্যাস!

৫। নেপাল: মণিষা কইরলা। যত কান্ড কাঠমাণ্ডু’তে। আম আদমির বিদেশ ভ্রমনের শখ মিটিয়ে থাকে।

৬। শ্রীলঙ্কা: ক্রিকেট। ব্যাস। চুপ।

৭। সিংগাপুর, হংকং: ব্যাপক কিছু হবে, ঝাঁ-চকচকে শহর টহর বোধ হয়।

৮। ইন্দোনেশিয়া,জাভা, বার্মা, ভিয়েতনাম, উত্তর/দক্ষিণ কোরিয়া: হে: হে:, আরে দাদা 8B বাস স্টপ’টাই সেদিন গুলিয়ে গেছিল, আর বার্মা। তবে ভিয়েতনামে কোনও এক কালে কোনও যুদ্ধ-টুদ্ধ হয়েছিল, কমুনিষ্ট গোছের কিছু। আর কোনও এক কোরিয়ার কাছে বোমা আছে, বুড়িমা-ছাপ নয়; পরমাণু!

৯। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড : ক্রিকেট, নিয়মিত ভারতীয় ছাত্র-চাবকানো।

১০। জাপান: ইলেক্ট্রনিক্স: সোনি, এরাও টিকটিকি খায় না? ও হ্যাঁ, হিরোশিমা-নাগসাকি; দুম-দুমা-দুম!

১১। আরব: যাহা ওমান, তাহাই সৌদি; ওসব ফারাক বুঝি না। তেল-মরুভূমি-খেজুর-শেখ-বেলি ড্যান্স; তুখোড়!

১২। দক্ষিণ আফ্রিকা: ম্যান্ডেলা, ক্রিকেট, সাফারি; দেশটা আফ্রিকা’তে না থেকে ইউরোপে থাক উচিত ছিল।

১৩। আফ্রিকার অন্য সব দেশ: কালো, অন্ধকার, জঙ্গল, গরীব, যুদ্ধ; এককেবারে যা-তা। মিশর আফ্রিকায় নাকি? হ্যাঁ?

১৪। ইংল্যান্ড: চার্ণকের দেশ।লণ্ডন। ধোপ-দুরুস্ত সাহেবরা শুধু এখানেই থাকেন; এবং হেথায় রানি’র বাস (থেবড়ি বুড়ী আবার কি না রানি..)। কিন্তু ইংল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন আর ইউনাইটেড কিংডম’এর কনফিউশন এ জন্মে আরে ক্লিয়ার হল না। ও হ্যাঁ; ই পি এল’এর লাইভ টেলিকাস্ট।

১৫। জার্মানি: হিটলার, বিশ্ব-যুদ্ধ, আর হিটলার। এবং ফুটবল।

১৬। ফ্রান্স: আইফেল টাওয়ার। আর ফ্যাশন টিভি।

১৭। রাশিয়া: কম্যুনিস্ট, লেনিন।

১৮। ব্রাজিল: পেলে, আর্জেন্টিনা: মারাদোনা।

১৯। সুইজারল্যান্ড: বরফ, চকলেট। পকেটভারী’রা এখানে ঘুরতে যান, পকেটখালি’রা এর ছবি ড্রইং-রুমে সাজিয়ে থাকেন।

২০। গ্রীস, ইতালি: ইতিহাস। আলেকজান্ডার।সীজার।

২১। ফুটবল: স্পেন, পর্তুগাল, কলম্বিয়া, চিলি, ইত্যাদি ইত্যাদি; সব নাম মনে থাকে না; ওয়ার্ল্ড কাপ শুরু হলে গড়গড় করে মনে চলে আসে।

এই হল আমার বিশ্ব-মানচিত্রের কনসেপ্ট। ভাবছেন বিশ্ব না চিনি, দেশ’টাকে অন্তত জানি। ধ্যুর মশাই!

পাঞ্জাব মানেই আমার কাছে ভাঙ্গরা আর পাতিয়ালা পেগ।
সিন্ধু এখন আউট অফ কন্টেক্সট।
গুজরাত মানে মোদী আর ন্যানো।
মারাঠা বলতে চিনলাম শিবাজী, তেণ্ডুলকর আর বাল ঠাকরেকে।
দ্রাবিড় মাত্রই মাদ্রাজী; ওসব তামিল, কেরল, কর্ণাটক বুঝি না; দক্ষিণ মাত্রই ডোসা-ইডলি-রজনীকান্ত!
উত্‍কল: পুরী এবং উড়ে ঠাকুর
বঙ্গ: দেশটা না চিনি, রাজ্য চিনি ভাবছেন? বিষ্ণুপুরের পোড়া-মাটি মন্দির, বোলপুরে শান্তিনিকেতন, বর্ধমানের মুড়ি,মালদার আম, চন্দননগরের জগধাত্রী পুজো, তিন বছরে এক বার দার্জিলিং; এই হল গিয়ে আমার মানসে বঙ্গ-মূর্তি।

ভাবছেন কোলকাতা’টা ভাল করে চিনি অন্তত? শেয়ালদা টু হাওড়া এবং শ্যামবাজার থেকে ময়দান; এর বাইরে যদি আমি কখনো-সখোনো ছিটকে পড়ি, তখন কলকাতা’কে আমি ততোটাই চিনি যতটা চিনি নাগপুর’কে (না, এর আগে আমি নাগপুরে কখনো যাইনি)।ট্র্যাজেডিটা আরও হৃদয় বিদারগ হয়ে ওঠে অন্য জায়গায়। বিকেলে বউ চা দিতে দেরি করায় মেজাজ চড়িয়ে ঢুকলাম রান্নাঘরে; নিজের চা নিজেই বানিয়ে দেখিয়ে দেব পুরুষ কি না পারে! রান্না ঘরে ঢুকতেই যাকে বলে এলাবোরেট কেলো; কোথায় দেশলাই, কোথায় চা, কোথায় কাপ, কোথায় চিনি! মাথায় উঠল চা বানানো; ঘৃণ্য আত্ম-সমর্পণ ছাড়া কোনও উপায়’ই রইল না।বিশ্ব তো কোন ছার, এতদিনে নিজের ঘর’টাকেও ভাল করে চিনতে পারলাম না!

Comments

Anonymous said…
awesome writing!
'ক্যানিং এর ওপার' ক্যানিং মানে কি দাদা?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু