Skip to main content

মৃত্যু ফন্দি




জন্মিলে মরিতে হবে..ইত্যাদি..ইত্যাদি..ত্যান্ডাই-ম্যান্ডাই..

তো কিরকম মৃত্যু আমার কাছে একসেপ্টেবল?

১. মারণ-অসুখ:

কিরকম?

এইডস? শাট আপ!
ক্যান্সার? না দাদা। যন্ত্রণা-কেমো-খরচ সব মিলে কেলোর কীর্তি। এ চলবে না।
হার্ট এট্যাক? নোটিশ পিরিয়ড় বড্ড খাঁটো।একজন ফস করে মারা যাবে আর তাকে ঘিরে কেন মেলোড্রামা থাকবে না, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই অসুখ ব্যাপারটা বাদ থাক।


২. দুর্ঘটনা :ঠিক যেই কারণে হার্ট এট্যাক মান গেলো না, সেই কারণেই এটি বাদ। তাছাড়া মরতে হলে এক্কেবারে ফিট-ফাট হয়ে মরতে হবে; ভেঙ্গে-চুরে নূলো হয়ে নয়। রাজনীগন্ধার, আদ্দির পাঞ্জাবি, সোনালী ফ্রেমের সৌখিন চশমা মিলে একটা এলিগ্যান্ট এগজিট হওয়া দরকার। অতএব, যে কোনও ভ্যারইটির দুর্ঘটনা; আগুন, নৌকা-ডুবি, বিমান-দুর্ঘটনা, মোটর-চাপা ইত্যাদি; এসব বাদ।

৩. আত্মহত্যা: না, নিজের প্রতি যথেষ্ট পেয়ার আছে। এক্কেবারে যাকে বলে হীরের টুকরো ছেলে। কোনও কথা হবে না।

৪. পাবলিক প্যাদানি: বয়স থাকতে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে টোন কাটতে পারলাম না তো বুড়ো বয়সে গিয়ে সিটি বাজিয়ে পাবলিক প্যাদানি খাওয়ার চান্স নেই। পকেট-মার নয়। পাবলিকের মারে পটকে যাওয়ার কোনও চান্স দেখছি না।

৫. খুন: মার্ডার? ইন্টারেস্টিং! তবে আবার যন্ত্রণা ব্যাপারটা চলে আসছে। আগে ক্লোরফর্ম দিয়ে তারপর চাক্কু চালালে ব্যাপারটা টের পাব না ব্যতে, তবে বড্ড বেশি ঝূট-ঝামেলা হয়ে যাবে। তাছাড়া এমন পয়সা-কড়ি বা এমন কোনও শত্রু নেই যে খুন হতে হবে। নিজের সুপারি নিজে দিতে হবে খুন হতে হলে। খুন ব্যাপারটা তাহলে ক্রস আউট করে দেওয়া যাক।

৬. জঙ্গি-হানা: সরি! পাগলের পাগলামি'তে নিকেশ হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। নিজের মৃত্যুর মত সিরিয়াস ব্যাপারে তো নয়ই।

৭. দেশ'এর জন্যে: সৈন্যবাহিনী? বয়স নেই। স্বদেশী? ইংরেজরা আর রইল কই ( এ.রাজা'কে খুন করে ফাঁসি চড়বো এমন 'রঙ দে বসান্তি'গিরিও চলবে না)

৮. দশের জন্যে: পাড়া'র দালাল বলে বউ পেটাতে পারে। সোশ্যাল মৃত্যু ব্যাপারটা বুমেরাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।

৯. আততায়ীর হাতে: Assassination? আমি কেনেডি না গান্ধী? নেহাত কোনও ডিকটেটর হলেও চলতো কিন্তু তাও নয়; একনায়ক আমি নয়; আমার স্ত্রী হলেন গিয়ে একনায়িকা; এসব ইউটপিয়ান মৃত্যু আমার নয়।

১০. আদর্শ মৃত্যু : ভাবছেন ইচ্ছা মৃত্যু চাইব? ওসব মিথোলজি-টজি ইস নট মাই কাপ অফ টী!

মাঝ রাত্রি। সমুদ্দুরের ধারে ঢেউ বাঁচিয়ে বালি'র ওপর থেবড়ে বসে অছি। একা। মুচুর-মুচুর করে মোরলা মাছ ভাজা আর মুর্গীর রোস্ট চিবিয়ে চলেছি। ফুরফুরে হাওয়া-ফুরফুরে মন-তুরীয় মেজাজ! গুণ-গুণ করে গাইছি 'না যাও সইয়া, চুরাকে বইয়া'...আহা..এমন সময় কাঁধে একটি হাত...

-"আরে, বাবা?তুমি?"

-"ভূত দেখলি নাকি?"

-"ভূত নয়?"

-"মরে গেলেই কি ভূত হতে হয় রে পাগল?"

-"হয় না বুঝি? তা, এতদিন পরে হঠাত্‍ মনে পড়লো বাবা?"

-"এই বহুদিন পর দেখলাম তুই একা চুপ-চাপ বসে..অছিস কেমন?

-"সুপার, বউ-বাচ্চা-তস্য বাচ্চা মিলে সাজানো বাগান। পেনসন-গ্র্যাচুইটি-হুইস্কি নিয়ে বেশ আছি বুঝলে। এখনো মান্না দে শুনি জানো বাবা"

-"জানি তুই শুনিস..আমি যে জলশাঘরে...আঃ কি সুর বল তো?আচ্ছা পচা, ভালো আছিস তো?"

-"দেদার সুখ পিতা, হ্যাপি টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি। তবে বড় একা হয়ে পড়ি আজকাল। মা'র কথা মনে পড়ে। তোমায় তো দেখছি..মা কই?"

-"যাবি মা'র কাছে?"

-"যাব?"

-"আলবাত যাবি..আমি নিয়ে যাব.."

-"প্লিজ নিয়ে চল বাবা"

-"লেট্স গো সন.."

-"আয়ার এই মোরলা, চিকেন,হুইস্কি?তোমার বৌমা'কেও তো একবার জানিয়ে যাওয়া দরকার.."

-"ভালোবাসা কি ছেড়ে দেওয়া যায় রে?শুধু ছেড়ে যেতে হয়- চল, বেরিয়ে পড়ি"



Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু