Tuesday, February 22, 2011

মৃত্যু ফন্দি




জন্মিলে মরিতে হবে..ইত্যাদি..ইত্যাদি..ত্যান্ডাই-ম্যান্ডাই..

তো কিরকম মৃত্যু আমার কাছে একসেপ্টেবল?

১. মারণ-অসুখ:

কিরকম?

এইডস? শাট আপ!
ক্যান্সার? না দাদা। যন্ত্রণা-কেমো-খরচ সব মিলে কেলোর কীর্তি। এ চলবে না।
হার্ট এট্যাক? নোটিশ পিরিয়ড় বড্ড খাঁটো।একজন ফস করে মারা যাবে আর তাকে ঘিরে কেন মেলোড্রামা থাকবে না, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই অসুখ ব্যাপারটা বাদ থাক।


২. দুর্ঘটনা :ঠিক যেই কারণে হার্ট এট্যাক মান গেলো না, সেই কারণেই এটি বাদ। তাছাড়া মরতে হলে এক্কেবারে ফিট-ফাট হয়ে মরতে হবে; ভেঙ্গে-চুরে নূলো হয়ে নয়। রাজনীগন্ধার, আদ্দির পাঞ্জাবি, সোনালী ফ্রেমের সৌখিন চশমা মিলে একটা এলিগ্যান্ট এগজিট হওয়া দরকার। অতএব, যে কোনও ভ্যারইটির দুর্ঘটনা; আগুন, নৌকা-ডুবি, বিমান-দুর্ঘটনা, মোটর-চাপা ইত্যাদি; এসব বাদ।

৩. আত্মহত্যা: না, নিজের প্রতি যথেষ্ট পেয়ার আছে। এক্কেবারে যাকে বলে হীরের টুকরো ছেলে। কোনও কথা হবে না।

৪. পাবলিক প্যাদানি: বয়স থাকতে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে টোন কাটতে পারলাম না তো বুড়ো বয়সে গিয়ে সিটি বাজিয়ে পাবলিক প্যাদানি খাওয়ার চান্স নেই। পকেট-মার নয়। পাবলিকের মারে পটকে যাওয়ার কোনও চান্স দেখছি না।

৫. খুন: মার্ডার? ইন্টারেস্টিং! তবে আবার যন্ত্রণা ব্যাপারটা চলে আসছে। আগে ক্লোরফর্ম দিয়ে তারপর চাক্কু চালালে ব্যাপারটা টের পাব না ব্যতে, তবে বড্ড বেশি ঝূট-ঝামেলা হয়ে যাবে। তাছাড়া এমন পয়সা-কড়ি বা এমন কোনও শত্রু নেই যে খুন হতে হবে। নিজের সুপারি নিজে দিতে হবে খুন হতে হলে। খুন ব্যাপারটা তাহলে ক্রস আউট করে দেওয়া যাক।

৬. জঙ্গি-হানা: সরি! পাগলের পাগলামি'তে নিকেশ হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। নিজের মৃত্যুর মত সিরিয়াস ব্যাপারে তো নয়ই।

৭. দেশ'এর জন্যে: সৈন্যবাহিনী? বয়স নেই। স্বদেশী? ইংরেজরা আর রইল কই ( এ.রাজা'কে খুন করে ফাঁসি চড়বো এমন 'রঙ দে বসান্তি'গিরিও চলবে না)

৮. দশের জন্যে: পাড়া'র দালাল বলে বউ পেটাতে পারে। সোশ্যাল মৃত্যু ব্যাপারটা বুমেরাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।

৯. আততায়ীর হাতে: Assassination? আমি কেনেডি না গান্ধী? নেহাত কোনও ডিকটেটর হলেও চলতো কিন্তু তাও নয়; একনায়ক আমি নয়; আমার স্ত্রী হলেন গিয়ে একনায়িকা; এসব ইউটপিয়ান মৃত্যু আমার নয়।

১০. আদর্শ মৃত্যু : ভাবছেন ইচ্ছা মৃত্যু চাইব? ওসব মিথোলজি-টজি ইস নট মাই কাপ অফ টী!

মাঝ রাত্রি। সমুদ্দুরের ধারে ঢেউ বাঁচিয়ে বালি'র ওপর থেবড়ে বসে অছি। একা। মুচুর-মুচুর করে মোরলা মাছ ভাজা আর মুর্গীর রোস্ট চিবিয়ে চলেছি। ফুরফুরে হাওয়া-ফুরফুরে মন-তুরীয় মেজাজ! গুণ-গুণ করে গাইছি 'না যাও সইয়া, চুরাকে বইয়া'...আহা..এমন সময় কাঁধে একটি হাত...

-"আরে, বাবা?তুমি?"

-"ভূত দেখলি নাকি?"

-"ভূত নয়?"

-"মরে গেলেই কি ভূত হতে হয় রে পাগল?"

-"হয় না বুঝি? তা, এতদিন পরে হঠাত্‍ মনে পড়লো বাবা?"

-"এই বহুদিন পর দেখলাম তুই একা চুপ-চাপ বসে..অছিস কেমন?

-"সুপার, বউ-বাচ্চা-তস্য বাচ্চা মিলে সাজানো বাগান। পেনসন-গ্র্যাচুইটি-হুইস্কি নিয়ে বেশ আছি বুঝলে। এখনো মান্না দে শুনি জানো বাবা"

-"জানি তুই শুনিস..আমি যে জলশাঘরে...আঃ কি সুর বল তো?আচ্ছা পচা, ভালো আছিস তো?"

-"দেদার সুখ পিতা, হ্যাপি টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি। তবে বড় একা হয়ে পড়ি আজকাল। মা'র কথা মনে পড়ে। তোমায় তো দেখছি..মা কই?"

-"যাবি মা'র কাছে?"

-"যাব?"

-"আলবাত যাবি..আমি নিয়ে যাব.."

-"প্লিজ নিয়ে চল বাবা"

-"লেট্স গো সন.."

-"আয়ার এই মোরলা, চিকেন,হুইস্কি?তোমার বৌমা'কেও তো একবার জানিয়ে যাওয়া দরকার.."

-"ভালোবাসা কি ছেড়ে দেওয়া যায় রে?শুধু ছেড়ে যেতে হয়- চল, বেরিয়ে পড়ি"



No comments: