Skip to main content

ডিয়ার বেহালা মেট্রো



আজ বেহালা মেট্রোর ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে৷ এ'খবরটা কী ভাবে আত্মস্থ করব সে'টা বুঝে উঠতে পারছিনা৷ গত বেশ কিছু বছর ধরে মনের মধ্যে মেট্রো-পিলারগুলো সম্বন্ধে একটা শ্যামনগরের মেজোপিসেমশাই গোছের রেস্পেক্ট তৈরি হয়েছিল। গোটা সন্ধ্যে ড্রয়িংরুমের সোফা আলো করে বসে থাকা আর মাঝেমধ্যে ঝিমোনা ছাড়া ছাড়া সে পিসের তেমন কোনও কাজ নেই। তাঁর নিশ্চুপ উপস্থিতিটাই সে ড্রয়িং রুমের লক্ষ্মীশ্রী৷   

যা হোক, বেহালা মেট্রোপিলারের উপকারিতা সম্বন্ধে স্কুলের ছেলেমেয়েরা সবে এস্যে লিখতে শুরু করেছিল৷ বেহালায় যা ভীড়, সুট করে চাইলেই তো আর পিরামিড বানানো সম্ভব নয়৷ কাজেই একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল যে আজ থেকে হাজার বছর পর যখন অদরকারি পিলারই বিশ্বজুড়ে ট্রেন্ড করবে, তখন সবাই "বেহালা স্টাইল অফ আর্কিটেকচার" নিয়ে দুর্বোধ্য সব বইটই লিখে ফেলবে৷ তারপর ধরুন মেট্রো ট্রেন চালানোর মত অদরকারী ব্যাপার নিয়ে বিশেষ মাথা না ঘামিয়ে দিব্যি সে মেট্রোলাইনের তলে তলে বাগান তৈরি হচ্ছিল, হাইলি কালচারাল মুর্তিটুর্তি বসছিল৷ ট্র‍্যাফিক জ্যামে গলদঘর্ম হতে হতে সে'সব ডিজাইনার পিলারদের দিকে তাকিয়ে থাকার যে মেডিটেটিভ এফেক্ট; সে'টা সত্যিই তুরীয়। তারপর ধরুন ওই দুর্গাপুজো কালীপুজো এলে সেই পিলারের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া টুনিবাল্বের চাদর; স্পেক্টাকুলার। এ'সবের মধ্যিখানে মেট্রোফেট্রো চালানোর যে কোনও দরকার থাকতে পারে, সে'টা আর মনেই ছিলনা৷ 

সবচেয়ে যে'টা বড় ব্যাপার, বাঙালির রিয়েলএস্টেট সেন্টিমেন্টের জন্য এ'টা একটা বড় ধাক্কা৷ কতগুলো প্রজন্ম "আজ ইনভেস্ট কর, কাল মেট্রো হবে, ইনভেস্টমেন্ট সতেরোশো গুণ হবে" বলে ঝালমুড়ি বা হজমোলা লজেন্সের মত ফ্ল্যাটবাড়ি বেচে গেল৷ কত হাজার মানুষকে সামান্য সুড়সুড়ি দিলেই মন্ত্রের মত শুনতে পাওয়া যাবে "পিপিএফে রাখা মানে তো পুওর রিটার্ন৷ তাই সব তুলে লাগিয়ে দিয়েছি বেহালা মেট্রো ঘেঁষা ফ্ল্যাটের ডাউন পেমেন্টে৷ এরপর ইএমআই৷ আজ থেকে বাহাত্তর বছর যখন মেট্রো চলবে, তখন ম্যানহ্যাটন লেভেলের দাম পাব"।

এই মেট্রো-হবে-হবে-হবে-হবে মার্কা ইমোশনাল ইকুলিব্রিয়াম; এর তুলনা হয়না৷ ওই, পুজো আসছে আসছেই ভালো৷ পুজো এসে পড়লেই সোজা জ্ঞান ফেরে ওই দশমীর সন্ধ্যের "যাহ শাল"য়৷ এই বেহালা মেট্রোর ট্রায়াল রানের মধ্যেও কেমন যেন সেই দশমীর সন্ধ্যের ফ্লেভার। 

ভালো ঠেকছে না, বুঝলেন৷ আজ বাদে কাল মেট্রো চালু হবে, পরশু রাস্তা চওড়া হবে, তরশু কেউ বলবে পার্কে চুমু খেলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না৷ কিছুই বলা যাচ্ছেনা৷ যাকগে৷ একদিন জোকা টু পার্ক স্ট্রীটও জুড়ে যাবে, এই আশ্বাসটা চাগিয়ে এ'বার আর এক রাউন্ড ফ্ল্যাট বেচাকেনায় মন দেওয়া যাক৷ 

মনে রাখবেন, হবে-হবে ব্যাপারটাই ভালো৷ হয়ে গেলেই সব শেষ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু