Skip to main content

ওই মেজদাদা


- এই যে, চাঁদু৷ ইদিকে এসো দেখি মাল৷ 

- আমায় ডাকছেন? 

- ওরে আমার নেকুচাঁদ হুশিয়ার রে৷ রাস্তায় এখন আর আছেটা কে। আয় দেখি ইদিকে। 

- কী ব্যাপার দাদা?

- ওরে আমার সোন্টুমনা রে৷ "কী ব্যাপার দাদা"! ভোম্বলমণি আমার৷ তা বাবু, এই ভরদুপুরে এ পাড়ায় ঘুরঘুর করছ কেন? তুমি তো এলাকার ছেলে নও। 

- ইয়ে, আসলে..।

- আসল নকল আবার কী৷ এ পাড়ায় কী মতলবে সোনা?

- না মানে, ওই একটা দরকারে এসেছিলাম..।

- কী দরকারে?

- থাক। তেমন কিছু নয় স্যার৷ এই আমি চলে যাচ্ছি। 

- চলে যাবি?

- এই এখুনি। আসি?

- নাহ্৷ অত তাড়া কীসের৷ দাঁড়া, আগে একটু আপ্যায়ন করি৷ 

- না না। ও'সব পরে কোনওদিন হবে'খন৷ আমি বরং আজ আসি৷ হঠাৎ একটা জরুরী কাজ মনে পড়ে গেছে৷ ভালো থাকবেন, কেমন? আর ওয়েদার চেঞ্জের সময়৷ জামার বোতামগুলো খোলা রাখবেন না প্লীজ, চট করে বুকে ঠাণ্ডা বসে যেতে পারে৷ ঠিক আছে? আজ আসি৷ 

- শোনো ভাই ভিজেবেড়ালকুমার৷ ফের যদি এ পাড়ায় দেখি, তা'হলে একটা ঠ্যাং খুলে সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেব রেখে নেব৷ 

- আমি..আমি..আমি..।

- নেকুপুষুসুন্টুনিমুন্টুনি..কথাটা মনে থাকবে? 

- আ..আ..আ..।

- রোজ তুমি দত্তবাড়ির সামনে গিয়ে ঘুরঘুর করবে৷ আর রঞ্জনা বারন্দায় এসে তোমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসবে, সে'টা আমি সহ্য করব না। 

- আর করব না স্যার। 

- শোন শালা। আমি রঞ্জুর মেজদাদা। তোর জন্য দুপুরে রঞ্জুর দুপুরের ঘুম বন্ধ হয়ে গেছে৷ তা'তে ওর স্কিনের গ্লেজ নষ্ট হচ্ছে, জানিস?

- আমি আর ও'মুখো হব  না স্যার, শুধু আমার কলারটা যদি রিলিজ করে দেন..।

- কলার বোন খুলে নিচ্ছি না এই তোর বাপের ভাগ্যি৷ 

- থ্যাঙ্কিউ স্যার৷ থ্যাঙ্কিউ৷ গ্রেটফুল টু ইউ৷ 

- শোন৷ আজ শুধু সাইকেলের চাকার হাওয়া খুলে ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু ফের যদি এ'পাড়ায় দেখি..তবে..।

- ঠ্যাং৷ ঠ্যাং খুলে নিয়ে নেবেন। 

- মনে রাখিস, আমি এ পাড়ার আর্সের প্রেসিডেন্ট৷

- আর্স? আর্স মানে তো..ইয়ে..ওই..আর্স মানে তো পশ্চাদ্দেশ..।

- কী? তবে রে রাস্কেল! দেব তোর পশ্চাদ্দেশে ছাপ মেরে?  আর্স হচ্ছে শর্ট ফর্ম৷ এ আর এস-য়ের৷ অ্যান্টি রোমিও স্কোয়্যাড৷ আমি এ পাড়ার স্কোয়্যাডের প্রেসিডেন্ট। কাজেই আমার সামনে মুখ সামলে। একদম ওপর-চালাকি নয়৷ 

- সরি স্যার৷ আমি জানতাম না৷ এ ভুল আর হবে না৷ 

- একদিন সব্বাই জানবে৷ জানবেই৷ জয় হিন্দ৷ 

- জয় হিন্দ৷ 

- এ'বার এসো চাঁদ৷ এসো।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু