Tuesday, February 20, 2018

পোস্টঅফিস



সে আকাশ সবসময় মেঘলা। ঘোলাটে, তবে গুমোট নয়। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ কিন্তু ঝেঁপে নামার কোনও লক্ষণ নেই। সে আকাশের নিচে দাঁড়ালে মনকেমন জাঁকিয়ে বসে, অথচ ভালোলাগাটুকুও দিব্যি রয়ে যায় অল্প শীতে গায়ে জড়ানো ভাগলপুরি চাদরটার মত।

সে ছলছলে আকাশের নিচে জুবুথুবু এক লাল পাথুরে টিলা। আর সে টিলার  মাথায় ছোট্ট লাল বাড়িটা আদতে একটা পোস্টঅফিস।

সে পোস্টঅফিসের ঘর ছোট্ট হলে কী হবে, তা'র ভিতরে জায়গার অভাব নেই। স্তুপ স্তুপ চিঠি জমা হয় সে'খানে। ঘরের এক কোণে এক সাতপুরনো টেবিলের গা ঘেঁষে রাখা এক মচমচে জীর্ণ চেয়ার আলো করে বসে থাকেন পোস্টমাস্টার অনন্তবাবু।

এই পোস্টঅফিসে তিনিই পোস্টমাস্টার, তিনিও পিওন, তিনিই আর্দালি। এত কাজ তাঁর অথচ ব্যস্ততা ব্যাপারটা অনন্তবাবুর ধাতে সয় না। মেঘলা হাওয়ার মতই তার মেজাজে সামান্য আয়েশি ফুরফুর রয়েছে সর্বদা, কানে তাঁর সর্বক্ষণ সরোদের আশ্বাস। ফিনফিনে নীল ফতুয়া আর ঢলা পাঞ্জাবিতে একা গোটা পোস্ট অফিস সামাল দিয়ে থাকেন অনন্তবাবু। অবশ্য ব্যস্ত হয়েই বা কী লাভ হত, এ'খানে প্রতি মুহূর্তে স্তুপ স্তুপ চিঠি জমা পড়ে। কোনও কোনও চিঠি দিস্তেদিস্তে অভিমানে সুদীর্ঘ,  কোনওটা আবার দু'কলমের ফিক হাসি। 'পথ হারাবো বলেই এ'বার পথে নেমেছি'র সুরে নিজেকে উল্টেপাল্টে নিয়ে স্তুপ স্তুপ চিঠির জমা হওয়া দেখেন তিনি।

কখনও কখনও;
যখন সামান্য কাজ করার লোভ মনের মধ্যে জড়ো হয়, তখন হয়ত অনন্তবাবু নিজের চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে এসে দু'একটা চিঠি হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখেন। তারপর ঠিকানা মিলিয়ে,স্টাম্প মেরে; সে চিঠি হাতে বেরিয়ে পড়েন অনন্ত পোস্টমাস্টার। তখন অবিশ্যি তাঁকে পোস্টমাস্টার বলা চলে না, তখন তাঁর পরিচয় টেলিপ্যাথি-পিওন।

না-লেখা-চিঠির পোস্টঅফিসের পোস্টমাস্টার হওয়া যে কী হ্যাপা, তা অনন্তবাবুই জানেন।

1 comment:

Unknown One said...

da ami tomar ai likha ta amar blog aa repost korlam.
tumi please rag koro naa