Skip to main content

এ'দিকে আর ও'দিকে

- গুরুদেব। 

- কিছু বলবে ভাই?

- শুধব। 

- নিশ্চয়ই। প্রশ্ন আছে, তাই তো মন সতেজ। যে মনে প্রশ্ন নেই, সে মন তো পান-খেকো দাঁতের গায়ের লালচে ছোপ মাত্র। 

- যেয়াজ্ঞে। তাহলে শুধোই? গুরুদেব?

- ভয় কীসে? শুধোও। প্রশ্ন সুধা এ বুকে সঞ্চারিত না হলে আমি জ্ঞানের অ্যালুমিনিয়াম বাটি তোমার সামনে উপুড় করে দেব কী করে?

- বলছিলাম যে গুরুদেব...আপনার চ্যালাগিরি করে তো কম ঘুরলাম না। হিমালয়ে তপস্যা, অস্ট্রিয়ায় ব্যালাড শোনা, মোজাম্বিকে চ্যারিটি ক্যাম্প, সাউথ পোলে পেঙ্গুইন সেবা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কলকাতা গেলাম না যে। 

- দুর্জনে বলে আমি নাকি কলকাতার বড় ব্যবসায়ী বিনোদ দত্তকে ঠকিয়ে টু পাইস কামিয়েছিলাম। যৌবনে। আর তারপর নাকি আমি পুলিশের ভয়ে সন্ন্যাসী সেজে কলকাতা ছেড়েছি। কী সব বিশ্রী গুজব। 

- লোক না পোক গুরুদেব। এরা পারলে বিরিয়ানির থালা ফেলে দু'টো লঙ্কা ডলে গসিপ চিবিয়ে খাবে।  তা আপনি কি গুজবের ভয় কলকাতা যান না গুরুদেব? 

- ইহলোক পরলোকে পায়চারী করে বেড়াই কি কলকাতার বিনোদ দত্তকে ডরাব বলে ভাই? আর তাছাড়া কলকাতার পুলিশের ওপর মহলের অনেকে আমার ভক্ত। আমি পঞ্জিকা দেখে দিন বাতলে দিলে তবে তারা রেড বা এনকাউন্টার করে। আমার আবার ভয় কীসের? আমি কলকাতা যাইনা অন্য একটা কারণে। 

- পুরনো লাভ লাইফ গুরুদেব? সন্ন্যাস টলে যাবে? 

- ধ্যুত। নারী। আর আমি? কলেজ লাইফে বাহাত্তর নম্বর চিঠি জলে যাওয়ার পরেই বুঝে গেছিলাম, আমি ও'সব পাতি ব্যাপারের অনেক ওপরে।

- তবে? গুরুদেব? 

- মোক্ষলাভের স্পেকট্রামে একদিকে হিমালয়। বহুদিন আগেই যে বাধ্য হয়ে আমি সেই  পথ বেছে নিয়েছি ভাই। ইজি মোক্ষলাভ। হিমালয়ে খালি গায়ে বছর দুই তপস্যা করলেই মা অন্নপূর্ণা নিজে বোনচায়নার বাটিতে করে পায়েস নিয়ে আসবেন, সে বাটিতে আবার স্টিলের চামচে। মোক্ষলাভ স্পেকট্রামের অন্য জটিল দিক পড়ে রয়েছে কলকাতায়। হন্যে হয়ে চেষ্টা করেছিলাম। বহু বছর ব্যর্থ হয়ে তবেই হিমালয়ের জন্য কৌপীন অ্যাডপ্ট করে বেরিয়ে পড়েছি। এখন কলকাতায় ফিরলে সেই না পাওয়ার দুঃখ উথলে উঠবে যে। 

- কলকাতায় মোক্ষলাভ? সে'টা কী ভাবে হয়?  

- অফিসটাইমে ভিড় বাসে উঠে মার্ফিদেবকে অবিরাম ডেকে চলা, হে ভগবান, আমার সামনের জানালার সীটটা ফাঁকা করিয়ে দাও। সে তপস্যায় খোদ হিমালয়ও অল্প গলে গিয়ে কিছুদিনের জন্য রাজারহাটের ইকোপার্কে ঘুরে যেতে পারে। কিন্তু আমার সামনের জানালার সীট বহু বছরের তপস্যাতেও একবারও খালি হয়নি। মাদুলি পর্যন্ত নিয়েছিলাম। যা হোক।  সে ব্যর্থ তপস্যার ব্যথা ফের ফিরে আসবে কলকাতা গেলে। কাজেই আমাদের পরের গন্তব্য ভোপাল। সে'খানের কোনও রইস ব্যবসায়ীর মনে আবার ভক্তি জেগেছে। যাই..। ঘুরে আসি। 

- জ্ঞানে ভরা অ্যালুমিনিয়ামের বাটি সে বান্দার সামনে উপুড় করবেন, তাই তো?

- শিষ্য হিসেবে কিন্তু তোমার এলেম আছে ভায়া। তোমার হবে । 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু